জ্বর, পেটের সমস্যায় গরমের মাসুল গুনছে কচিকাঁচারা

সর্দি-কাশি তেমন নেই। গা-হাত পায়ে ব্যথাও নেই। কিন্তু জ্বর আসছে মাঝেমধ্যেই। আর সেই জ্বরেই নেতিয়ে পড়ছে বাচ্চারা। সদ্যোজাত থেকে শুরু করে স্কুলপড়ুয়া, কিশোর-কিশোরী এক ছবি শহরের সর্বত্রই। ডাক্তারের চেম্বার উপচে পড়ছে জ্বরের রোগীতে। গরমের এই নয়া উপদ্রবের নাম ‘হিট ফিভার’। যেখানে জ্বর ঘোরাফেরা করছে ৯৯ থেকে বড়জোর ১০২-এর মধ্যে। কিন্তু শরীর জলশূন্য হয়ে গিয়ে তাতেই কাত হয়ে পড়ছে বাচ্চারা। ডাক্তারদের বক্তব্য, এর দাওয়াই একটাই। এই অসহ্য গরমে ঘরের বাইরে বেশি না বেরোনো। আর ঘরে থাকলেও দিনে অন্তত তিন বার স্নান, সঙ্গে প্রচুর জল খাওয়া।

Advertisement

সোমা মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৪ ০০:৫৪
Share:

সর্দি-কাশি তেমন নেই। গা-হাত পায়ে ব্যথাও নেই। কিন্তু জ্বর আসছে মাঝেমধ্যেই। আর সেই জ্বরেই নেতিয়ে পড়ছে বাচ্চারা। সদ্যোজাত থেকে শুরু করে স্কুলপড়ুয়া, কিশোর-কিশোরী এক ছবি শহরের সর্বত্রই। ডাক্তারের চেম্বার উপচে পড়ছে জ্বরের রোগীতে।

Advertisement

গরমের এই নয়া উপদ্রবের নাম ‘হিট ফিভার’। যেখানে জ্বর ঘোরাফেরা করছে ৯৯ থেকে বড়জোর ১০২-এর মধ্যে। কিন্তু শরীর জলশূন্য হয়ে গিয়ে তাতেই কাত হয়ে পড়ছে বাচ্চারা। ডাক্তারদের বক্তব্য, এর দাওয়াই একটাই। এই অসহ্য গরমে ঘরের বাইরে বেশি না বেরোনো। আর ঘরে থাকলেও দিনে অন্তত তিন বার স্নান, সঙ্গে প্রচুর জল খাওয়া।

শুক্রবার সকালেই দক্ষিণ কলকাতার এক চিকিৎসকের চেম্বারে বছর পাঁচেকের এক শিশুকে এনেছিলেন তার বাবা-মা। টানা চার দিন তার জ্বর। কোনও ভাবেই তা ১০০ ছাড়াচ্ছে না। কিন্তু তাতেই সে প্রায় অচেতন হয়ে পড়ছে। ডাক্তারবাবু পরীক্ষা করে জানালেন, বিচলিত হওয়ার কিছু নেই, এটা ‘হিট ফিভার’। ঘন নীল রঙের একটা ফ্রক পরে এসেছিল মেয়েটি। বাবা-মাকে বলা হল, তড়িঘড়ি বাড়ি নিয়ে গিয়ে তাঁরা যেন তাকে সাদা বা একেবারে হাল্কা রঙের পোশাক পরান। গাঢ় রঙের পোশাক পরলে গরম আরও বেশি অনুভূত হবে। মুখে-গায়ে ক্রিম-লোশন আর পাউডারও নৈব নৈব চ। সেটা কেন? কারণ, তাতে রোমকূপ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বিপত্তি আরও বাড়ে।

Advertisement

শিশু-রোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ বললেন, “এই গরমে স্কুলে যাওয়াটা বাচ্চাদের কাছে অত্যাচারের সামিল। যাতায়াতের সময়ে রাস্তায় রোদে তো বটেই, এমনকী স্কুলেও একটা ঘরে অনেককে বসতে হয় বলে বাচ্চারা কাবু হয়ে পড়ে। তাপমাত্রা যে ভাবে বাড়ছে, তাতে বাচ্চাদের দিনের বেলা বাড়িতে রাখা দরকার। ঘরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের যন্ত্র থাকলে তো কথাই নেই, না থাকলে ভারী পর্দা টেনে পাখা চালিয়ে তার নীচে রাখা দরকার।” জ্বর এবং জলশূন্যতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া একটি শিশুকে শুধুমাত্র এসি কেবিনে রেখেই জ্বর কমিয়ে ফেলা গিয়েছে বলে জানালেন অপূর্ববাবু।

গরমে বাচ্চাদের বেশি প্রোটিন খাওয়ানোরও বিরোধিতা করছেন ডাক্তারেরা। তাঁদের বক্তব্য, নিমন্ত্রণ-বাড়িতে বেশি মাছ-মাংস খেয়ে এলে যেমন বাড়ি ফিরে মাঝেমধ্যেই জল তেষ্টা পায়, তেমনই গরমে বেশি প্রোটিন খেলে শরীরে জলের প্রয়োজন বেড়ে যায়। তাই যতই জল খাওয়ানো হোক না কেন, শরীরে জলের প্রয়োজনটা পুরো মেটে না। এই কারণেই হাল্কা, কম তেল-মশলার খাবারই এই আবহাওয়ায় আদর্শ। “দু’চার দিন মাছ-মাংস কম খেলে বা না খেলেও বাচ্চা রুগ্ণ হয়ে পড়বে না এটা বাবা-মায়েদের খেয়াল রাখতে হবে,” মন্তব্য অপূর্ববাবুর।

বিভিন্ন ডাক্তারের চেম্বারে খোঁজ করে জানা গিয়েছে, যে সব বাচ্চা আসছে তাদের অনেকেই স্কুলগাড়িতে যাতায়াত করে। প্রচণ্ড গরমে খাঁচার মতো একটা ছোট গাড়িতে ঠাসাঠাসি করে অনেকে যাতায়াত করায় তাদের প্রায় দমবন্ধ হওয়ায় জোগাড়। ফলে যখন স্কুল থেকে বাড়ি পৌঁছয়, তখন অনেকেই ধুঁকতে থাকে। বাবা-মায়েদের তাই ডাক্তারদের পরামর্শ, এই গরমে সম্ভব হলে স্কুলগাড়ির বদলে সন্তানের স্কুল যাতায়াতের বিকল্প ব্যবস্থা ভাবুন।

শিশু-রোগ চিকিৎসক সুব্রত চক্রবর্তীরও পরামর্শ: রোদ থেকে শিশুকে যতটা সম্ভব দূরে রাখুন। কারণ, গরমে বাইরে বেরোলে ঘাম হচ্ছে, ফলে শরীর থেকে প্রচুর নুন বেরিয়ে যাচ্ছে। তাঁর পরামর্শ, বাইরে থেকে ফিরলেই ওআরএস মেশানো জল খেতেই হবে। নুন-চিনির জল খাওয়ালে চলবে? তিনি বলেন, “না, বাড়িতে নুন-চিনির জল তৈরি করলে অনুপাত সব সময়ে ঠিক থাকে না। তার চেয়ে ওআরএস প্যাকেট কেনাই ভাল।”

শিশু-চিকিৎসক প্রবাল নিয়োগী বলেন, “যে সব বাড়িতে অ্যাসবেস্টসের চাল বা বাড়ির উপরতলায় যাঁরা থাকেন, সেখানে ঘরেও প্রচণ্ড গরম। তাই বাড়ির ভিতরে থেকেও প্রচুর বাচ্চার জ্বর হচ্ছে, গা গুলোচ্ছে, পেটখারাপ হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে শরীর যতটা সম্ভব ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করা উচিত। বারবার স্নান করা সম্ভব না হলে ভিজে গামছা বা তোয়ালে দিয়ে বারবার গা মুছিয়ে দেওয়া দরকার।”

আরও একটি ব্যাপারে অভিভাবকদের সতর্ক করেছেন ডাক্তারেরা। এমন গরম যত দিন চলবে, তত দিন যেন স্কুলে বা বাইরে কোথাও খুব বেশি শারীরিক ধকল বা খেলাধুলো না করা হয়। সুব্রতবাবু বলেন, “দিন কয়েক আগে দেখলাম দুপুর ১২টার সময়ে একটা মাঠে বাচ্চাদের ক্যারাটে ক্লাস হচ্ছে। দেখে আঁতকে উঠেছিলাম। এর ফল যে কোনও বাচ্চার পক্ষে মারাত্মক হতে পারে। এমন কী হিট স্ট্রোকও হয়ে যাতে পারে। শুধু অভিভাবক নয়, স্কুল কর্তৃপক্ষেরও এই বিষয়টা খেয়াল রাখা উচিত।”

বহু ক্ষেত্রেই গরমে বাচ্চারা রাতে ভাল ভাবে ঘুমোতে পারছে না। তাই সাতসকালে তাদের ঘুম থেকে ডেকে পড়তে বসানোর অভ্যাসটাও কিছু দিন ত্যাগ করা ভাল বলে মনে করছেন অধিকাংশ চিকিৎসক। কারণ, বিশ্রামটা জরুরি। গরমে বাচ্চাদের যত সম্ভব আরামে রাখতে হবে, ডাক্তারদের মতে, সুস্থ রাখার চাবিকাঠি সেটাই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement