সিঁদুরে মেঘ দেখে সতর্ক পুজোর আয়োজক ক্লাবগুলি। তবে সতর্কতা নেই স্বাস্থ্য দফতরের।
এ বছর মাসখানেকেরও বেশি সময় ধরে উত্তরবঙ্গ দাপিয়েছিল মারণ-জ্বর। সেই এনসেফ্যালাইটিসের ছোবলে এ বছর এখনও পর্যন্ত উত্তরবঙ্গে অন্তত ১৬০ জন মারা গিয়েছেন। তাই আগামী বছর জ্বরের মারণ-হানা রুখতে একাধিক পুজো কমিটি সচেতনতা প্রচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে স্বাস্থ্য দফতর কোনও পদক্ষেপ না করায় ক্ষুব্ধ বহু বাসিন্দা। তাঁদের প্রশ্ন, “পুজোয় বহু মানুষ একত্রিত হন। তাকে কাজে লাগিয়ে সচেতনতা প্রচার করলে তা কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। আর ক্লাবগুলি এই কাজ করতে পারলে স্বাস্থ্য দফতর পারবে না কেন?”
গত জুলাই থেকে ওই রোগের প্রকোপ নিয়ে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় দিন কেটেছে উত্তরবঙ্গবাসীর। সে কথা ভেবে পুজোয় জেলাগুলিতে অনেক পূজো কমিটির তরফে মণ্ডপে এনসেফ্যালাইটিস, ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া নিয়ে প্রচার সূচি নেওয়া হয়েছে। অথচ স্বাস্থ্য দফতরের কোনও প্রচার কর্মসূচি তো নেওয়া হয়নি, এমনকী ক্লাবগুলিকেও এ ব্যাপারে পোস্টার ব্যানার দিয়ে কোনও রকম সাহায্য করছে না স্বাস্থ্য দফতর। তা নিয়ে অনেক পুজো কমিটিও সমালোচনা করেছেন।
উত্তরবঙ্গে স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্বে রয়েছেন যুগ্ম অধিকর্তা কুসুমকুমার অধিকারী। কুসুমবাবু বলেন, “পুজোয় এই ধরনের কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। আগে থেকে ভাবনা চিন্তা করাও হয়নি। এই মুহূর্তে তাই করা যাবে না। তা ছাড়া ক্লাবগুলিকে এ ব্যাপারে আর্থিক সাহায্য করার কোনও ব্যাপার নেই। তবে অনেক ক্লাব নিজেরাই উদ্যোগী হয়েছেন। এটা ভাল ব্যাপার।”
স্বাস্থ্য দফতর উদ্যোগী না হলেও পরিস্থিতির কথা ভেবে পুজোর উদ্যোক্তাদের অনেকে নিজেরাই এ বছর মণ্ডপ চত্বরে এনসেফ্যালাইটিস, ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার মতো মশা বাহিত রোগ নিয়ে প্রচারের কর্মসূচি নিয়েছেন। শিলিগুড়ির শক্তিগড় সর্বজনীন, রথখোলা স্পোর্টিং ক্লাব, দাদাভাই ক্লাব, অরবিন্দ স্পোর্টিং ক্লাব পুজো মণ্ডপ চত্বরে হোর্ডিং-ব্যানার লাগিয়ে ওই সমস্ত রোগ নিয়ে প্রচারের ব্যবস্থা করেছেন। জলপাইগুড়িতে পাণ্ডাপাড়া সর্বজনীন ক্লাবের পুজোর থিমই মশাবাহিত রোগ। মণ্ডপের প্রবেশ পথে থাকছে বড় মশারি। ভিতরে অতিকায় মশা। তা ছাড়া রোগ সম্পর্কে সচেতন করতে লেখা বিভিন্ন প্রচার থাকছে মন্ডপ চত্বরে। শিলিগুড়ির রথখোলা স্পোর্টিং ক্লাবের কর্মকর্তাদের সুভাষ ভাওয়াল বলেন, “এ বছর উত্তরবঙ্গ জুড়েই এনসেফ্যালাইটিসে অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন। তাই পুজোর আয়োজনের অন্যতম অঙ্গ হিসাবে আমরা এনসেফ্যালাইটিস রোগ এবং তার প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে বাসিন্দাদের মধ্যে সচেতনতা প্রচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। স্বাস্থ্য দফতর বা প্রশাসনের তরফে এ ব্যাপারে কোনও সহায়তা না পেলেও নিজেরাই ব্যবস্থা করছি।”
শিলিগুড়ির মাটিগাড়ার মায়াদেবী ক্লাবও এনসেফ্যালাইটিস রোগ সম্পর্কে বাসিন্দাদের সচেতন করতে মণ্ডপ চত্বরে প্রচারের ব্যবস্থা করেছেন। উদ্যোক্তাদের একাংশ জানান, এনসেফ্যালাইটিসের প্রকোপ মাটিগাড়ার ছড়িয়েছিল। পুজোর প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের মধ্যে এই সমস্ত রোগ নিয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে। পুজোর সময় মণ্ডপে সে সব অনেক বাসিন্দারাই আসেন। তাই পুজোর ক’টা দিন মণ্ডপ চত্বরে এ ব্যাপারে প্রচার কর্মসূচি নিলে অনেককে সচেতন করা যাবে বলে তাঁরা মনে করেন।
এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত হয়ে এ বছর সবচেয়ে বেশি লোক মারা গিয়েছেন জলপাইগুড়ি জেলায়। অথচ সেখানেও স্বাস্থ্য দফতরের তরফে মণ্ডপে জনসমাগমের এই সূযোগকে কাজে লাগিয়ে এনসেফ্যালাইটিস, ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া নিয়ে কোনও প্রচার কর্মসূচি নেওয়া হয়নি। বরং তারা শিশু কন্যা রক্ষার বিষয়টি নিয়ে প্রচার করছেন। তার সঙ্গে এনসেফ্যালাইটি, ডেঙ্গি বা ম্যালেরিয়ার মতো রোগ নিয়ে সচেতনতা প্রচার করতে তারা কোনও উযসাহ দেখায়নি। পুজো কমিটির অনেক উদ্যোক্তারা যেখানে বিষয়টি আঁচ করতে পেরে প্রচার কর্মসূচি নিয়েছে সেখানে স্বাস্থ্য দফতর এ ব্যাপারে কেন উদাসীন সে প্রশ্নের কোনও জবাব কেউ দেননি। শিলিগুড়ির দাদাভাই স্পোর্টিং ক্লাব মণ্ডপ চত্বরে এনসেফ্যালাইটিস নিয়ে প্রচারের পাশাপাশি স্বাস্থ্য শিবিরের আয়োজন করেছে। উৎসাহী বাসিন্দাদের মশারি বিলিরও ব্যবস্থা করেছেন তাঁরা।