খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল

চিকিত্‌সক কম, সঙ্কটে প্রসূতি বিভাগ

পর্যাপ্ত চিকিত্‌সক নেই। তাই ‘সিজার’-এর ক্ষেত্রে অধিকাংশ প্রসূতিদের অন্যত্র রেফার করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন চিকিত্‌সকেরা। বন্ধ স্ত্রী রোগের বিভিন্ন অস্ত্রোপচারও (কোল্ড অপারেশন)। এখন এমনই চিত্র খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের। চিকিত্‌সকের অভাবে স্ত্রী রোগের বর্হির্বিভাগও সপ্তাহে চার দিনের বদলে কমিয়ে দু’দিন করা হয়েছে। ফলে চরম সমস্যার মুখে রোগী ও তাঁর পরিজনেরা।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচি

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:২০
Share:

পর্যাপ্ত চিকিত্‌সক নেই। তাই ‘সিজার’-এর ক্ষেত্রে অধিকাংশ প্রসূতিদের অন্যত্র রেফার করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন চিকিত্‌সকেরা। বন্ধ স্ত্রী রোগের বিভিন্ন অস্ত্রোপচারও (কোল্ড অপারেশন)। এখন এমনই চিত্র খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের। চিকিত্‌সকের অভাবে স্ত্রী রোগের বর্হির্বিভাগও সপ্তাহে চার দিনের বদলে কমিয়ে দু’দিন করা হয়েছে। ফলে চরম সমস্যার মুখে রোগী ও তাঁর পরিজনেরা।

Advertisement

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এই হাসপাতালের উপর খড়্গপুর মহকুমার পিংলা, সবং, দাঁতন, কেশিয়াড়ি-সহ দশটি ব্লকের মানুষ নির্ভরশীল। তাছাড়াও বিভিন্ন ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও গ্রামীণ হাসপাতালের বহু রোগীকেও মহকুমা হাসপাতালে রেফার করা হয়। খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের প্রসূতির অন্তর্বিভাগে বর্তমানে মোট ৩০টি শয্যা রয়েছে। স্ত্রী রোগের অন্তর্বিভাগে শয্যা রয়েছে দশটি। এখানে মাসে গড়ে ৫৫০ জন নানা সমস্যা নিয়ে ভর্তি হন। তার মধ্যে প্রতি মাসে গড়ে ৩৭০ জনের প্রসব হয়। এর মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ প্রসূতির সিজার করার প্রয়োজন হয়। পাশাপাশি, স্ত্রী রোগের বহির্বিভাগেও প্রতি সপ্তাহে গড়ে ১৮০ জন রোগী নানা সমস্যা নিয়ে চিকিত্‌সা করতে আসেন। সপ্তাহে চার দিন, সোমবার, বুধবার, বৃহস্পতিবার ও শনিবার স্ত্রী রোগের বহির্বিভাগ বসে। অথচ চিকিত্‌সক সঙ্কটে বর্তমানে স্ত্রী রোগের বহির্বিভাগের দিন সপ্তাহে চার দিন থেকে কমিয়ে দু’দিন করা হয়েছে। এখন সপ্তাহে বুধবার ও শনিবারেই স্ত্রী রোগের বহির্বিভাগ বসে।

হাসপাতালের স্ত্রী রোগ বিভাগে দু’জন চিকিত্‌সকের পদ রয়েছে। কিন্তু রোগীর অতিরিক্ত চাপ সামলাতে ওই বিভাগে তিন জন মেডিক্যাল অফিসার ছিলেন। গত ৩১ অক্টোবর হাসপাতালের স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ হিমাদ্রী নায়েক মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে রেসিডেন্সিয়াল মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে বদলি হয়ে গিয়েছেন। ফলে বর্তমানে দু’জন চিকিত্‌সকের পক্ষে একইসঙ্গে স্ত্রী রোগের বহির্বিভাগ ও অন্তর্বিভাগের রোগীর চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়ছে। দু’জনের মধ্যে এক জন চিকিত্‌সক কোনও কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লে সমস্যা আরও বাড়ে। রোগীদের অভিযোগ, সবং গ্রামীণ হাসপাতাল ও কেশিয়াড়ি গ্রামীণ হাসপাতালের দু’জন স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ অতিরিক্ত সময় পেয়ে বাইরে নার্সিংহোমে রোগী দেখছেন। অথচ এই মহকুমা হাসপাতালে স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ না থাকায় বিপন্ন পরিষেবা।

Advertisement

হাসপাতাল সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবারই দাঁতনের জেনকাপুরের প্রসূতি অস্মিতা সিংহ, পিংলার টিনা কিস্কু ও খড়্গপুর গ্রামীণের বড়কলার রঞ্জনা পাত্রকে সিজার করার প্রয়োজনে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। এক প্রসূতির স্বামীর কথায়, “তিন দিন আগে স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। কিন্তু সঠিক চিকিত্‌সা হচ্ছে না। কিছু বলতে গেলে নার্সরা মেজাজ হারিয়ে মেদিনীপুর মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন।” হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অর্কপ্রভ গোস্বামীর জবাব, “হাসপাতালে যাঁরা ভর্তি হয়েছেন। তাঁরা যথাযথ চিকিত্‌সা পরিষেবা পাচ্ছেন। আমরা কোনও রোগীকে অন্যত্র রেফার করতে চাই না। কিন্তু যেখানে চার জন চিকিত্‌সকের প্রয়োজন, সেখানে দু’জন চিকিত্‌সকের পক্ষে অন-কল ডিউটির পরে সমস্ত দিক সামলানো কঠিন। তাই বাধ্য হয়ে রোগীদের অন্যত্র রেফার করতে হচ্ছে।” একইভাবে, রাজ্য সরকারি কর্মচারি ফেডারেশনের খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের উপদেষ্টা দিলীপ সরখেল বলেন, “এই পরিস্থিতিতে রোগীর পরিজনেরা চিকিত্‌সক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের উপর ক্ষোভ উগরে দিচ্ছে। তাই আমরা অবিলম্বে হাসপাতালে স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ পাঠানোর দাবি করেছি।

হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, “কয়েক দিন হল সমস্যা হচ্ছে, একথা ঠিক। তা সত্বেও হাসপাতালের প্রতিটি বিভাগ যাতে সচল থাকে, সেজন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছি।” তিনি বলেন, “আসলে স্ত্রী রোগ বিভাগের এক জন চিকিসক বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে ব্যবস্থাপনায় কিছু পরিবর্তন আনতে হয়েছে। আমি জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে বিষয়টি জানিয়েছি।” যদিও এই বিষয়ে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “ওই হাসপাতালের এক জন স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ মেদিনীপুর মেডিক্যালে বদলি হয়েছেন। তবে শীঘ্রই তিনি ডেপুটেশনে খড়্গপুরে ফিরে যাবেন। কিন্তু সেই কারণে সিজার রোগী রেফার বা কোল্ড অপারেশন বন্ধ করা ঠিক নয়।”

যদিও বাস্তবে রোগীদের হয়রানি কবে কমবে, সেটাই দেখার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement