এনআরএস কাণ্ডের প্রতিবাদে জমায়েত। পার্ক সার্কাসে। ছবি: প্রদীপ আদক।
এনআরএসের ছাত্রাবাসে এক যুবককে পিটিয়ে মারার প্রতিবাদে সভা ডেকেছিল চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের এক সংগঠন। কিন্তু আশাপ্রদ সাড়া মিলল না। সংগঠনটি মাঝে-মধ্যে বিভিন্ন সরকারি নীতির বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করে থাকে। অথচ শুক্রবার এনআরএস-কাণ্ডের প্রতিবাদে তাদের চিকিৎসক-সদস্যেরাও সে ভাবে সামিল না-হওয়ায় প্রশ্ন দানা বেঁধেছে।
প্রশ্নটা হল, সরকারের চাকরি করে সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে কি অনেকে ভয় পেলেন?
এসইউসি প্রভাবিত ওই সংগঠন মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টারের নেতাদের দাবি: তাঁদের সদস্য-তালিকায় অন্তত ছ’শো সরকারি ডাক্তারের নাম রয়েছে। তবে এ দিন পার্ক সার্কাসের এক অডিটোরিয়ামে প্রতিবাদসভায় ছিলেন সাকুল্যে চার-পাঁচ জন! তাঁরা কেউ মঞ্চে উঠে প্রতিবাদ জানালেন না। তার জন্য ডাক পড়ল প্রবীণ সদস্যদের, যাঁদের সিংহভাগই অবসরপ্রাপ্ত। দেখে-শুনে প্রবীণদের কারও কারও বিস্মিত মন্তব্য, “প্রতিবাদী হতে গেলে ভয় পেতে নেই। আমাদের হলটা কী?”
কী হল? প্রতিবাদসভায় সরকারি ডাক্তারদের হাজিরার হাল এত করুণ কেন? এক নেতার ব্যাখ্যা, “মাত্র এক বেলার মধ্যে সব আয়োজন করতে হয়েছে। তাই সকলকে খবর দেওয়া যায়নি।” যদিও সেন্টারের পশ্চিমবঙ্গ শাখার যুগ্ম সম্পাদক সজল বিশ্বাসের সাফ কথা, “এখানে আসা মানে সরাসরি সরকারের বিরোধিতা করা। পরিণামে কপালে হেনস্থা জুটতে পারে। অপদস্থ করা হতে পারে, ভুলভাল পোস্টিং হওয়াও বিচিত্র নয়। সেই ভয়ে অনেকে আসেননি।” সজলবাবু নিজে মধ্যমগ্রাম গ্রামীণ হাসপাতালের সুপার। সভায় উপস্থিত থাকার জন্য তাঁর মাথাতেও শাস্তির খাঁড়া নামতে পারে কিনা জানতে চাওয়া হলে ওঁর জবাব, “অত ভয় করলে সংগঠন করতে পারব না।”
এমন সাহস অন্যেরা কেন দেখাতে পারলেন না, তা নিয়ে অবশ্য ওঁরা কেউ মুখ খোলেননি। প্রসঙ্গত, সরকারি ডাক্তারদের এক বামপন্থী সংগঠন ক’মাস আগে এনআরএস প্রেক্ষাগৃহে প্রতিবাদসভার আয়োজন করেছিল। এনসেফ্যালাইটিসের খবর ‘গোপন করার’ অভিযোগে উত্তরবঙ্গের একাধিক স্বাস্থ্যকর্তাকে সাসপেন্ড করার প্রতিবাদে ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেল্থ সার্ভিস ডক্টর্স’-এর ডাকা সেই সভায় প্রকাশ্যে সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া সমালোচনা শোনা গিয়েছিল। এমনকী, এই অবস্থা চললে ফল ভাল হবে না বলে মঞ্চ থেকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন অ্যসোসিয়েশনের নেতারা, যাঁরা সকলে সরকারি হাসপাতালে কর্মরত।
এতে স্বাস্থ্য দফতর-সহ প্রশাসনিক মহলে আলোড়ন পড়ে যায়। স্বাস্থ্যভবন থেকে সতর্ক-বার্তা আসে, পরবর্তীকালে এমন কাজ করলে শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে। চোখ রাঙানি যে একেবারে বৃথা যায়নি, এ দিনের প্রতিবাদ সভার হাল তা দেখিয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকদের অনেকে।