ডেঙ্গির তথ্য নিয়ে এ বার মহানগরীর একটি সরকারি হাসপাতালের সঙ্গে চাপান-উতোর শুরু হল কলকাতা পুরসভার। হাসপাতালের দেওয়া ডেথ সার্টিফিকেটে ডেঙ্গির উল্লেখ থাকায় আপত্তি তুলেছে পুরসভা।
সোমবার সকালে টালিগঞ্জের এম আর বাঙুর হাসপাতালে গড়িয়ার ত্রিপুরেশ্বরী পার্ক (কলকাতা পুরসভার ১১১ নম্বর ওয়ার্ড)-এর বাসিন্দা চোদ্দো বছরের এক কিশোর পাকো ওঁরাওয়ের মৃত্যু হয়। হাসপাতাল জানাচ্ছে, ওই কিশোর ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিল। সেই সঙ্গে তার নিউমোনিয়াও ছিল। ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসেবে নিউমোনিয়ার সঙ্গে ‘আনকমপ্লিকেটেড ডেঙ্গি (সেরো পজিটিভ)’ লেখা হয়। হাসপাতালের সুপার সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “ছেলেটির ডেঙ্গি হয়েছিল। তবে এর জন্য তার রক্তে প্লেটলেট না কমায় একে ‘আনকমপ্লিকেটেড’ বলা হচ্ছে।” আর এতেই আপত্তি পুরসভার।
কেন? পুরসভা বলছে, কোনও সরকারি ল্যাবরেটরিতে এলাইজা পদ্ধতিতে পাকো ওঁরাওয়ের রক্ত পরীক্ষা হয়নি। বেসরকারি ডায়গনস্টিক সেন্টারের রিপোর্ট তারা মানবে না। তাই পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষের ঘোষণা, “কোনও ডেঙ্গি হয়নি। বাঙুরে কেউ ডেঙ্গিতে মারা যায়নি। যে মারা গিয়েছে, সেই ছেলেটির নিউমোনিয়া হয়েছিল।” তা হলে কি বেসরকারি ল্যাবরেটরির রিপোর্ট তাঁরা মানবেন না? মেয়র পারিষদ বলেন, “ওই কিশোরের ক্ষেত্রে বেসরকারি ল্যাবরেটরি যা রিপোর্ট দিয়েছিল, তা আদৌ ঠিক কি না, সেটা তো বাঙুর কোনও সরকারি জায়গা থেকে যাচাই করেনি।”
পুরসভা শনিবারই ওই কিশোরের অসুস্থতার কথা জানতে পেরেছিল। তারা কেন রক্তপরীক্ষা করাল না? অতীনবাবুর যুক্তি, “শনি-রবিবার ছুটির দিন ছিল বলে পরীক্ষা করানো সম্ভব ছিল না। সোমবারই করা হতো। দুর্ভাগ্য, তার আগেই ছেলেটি মারা গেল।” তিনি আরও ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, “ডেঙ্গিপ্রবণ এলাকায় থাকলে অনেকের রক্ত পরীক্ষাতেই সেরোপজিটিভ আসতে পারে। তাতে ডেঙ্গি হয়েছে প্রমাণ হয় না। ছেলেটির কোনও হেমারেজিক শক বা হেমারেজিক ফিভার ছিল না। পুরসভা কিছুতেই মানবে না ওই কিশোরের মৃত্যু ডেঙ্গিতে হয়েছে।”
কিন্তু পাকো-র রক্তে যে ডেঙ্গির জীবাণু ছিল, তা পুরসভা অস্বীকার করবে কী করে? অতীনবাবু বলেন, “আমরা সব সময়েই বেসরকারি ল্যাবরেটরির তথ্য নাইসেড বা স্বাস্থ্য দফতর থেকে ফের পরীক্ষা করে জীবাণুর উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চাইব।” তা হলে সাধারণ মানুষ কী করবেন? তাঁরা কি বেসরকারি ল্যাবরেটরি থেকে পরীক্ষা করিয়ে সেই নমুনা নিয়ে ফের নাইসেড কিংবা সরকারি পরীক্ষাগারে ছুটবেন? উত্তেজিত মেয়র পারিষদের উত্তর, “আপনার সব প্রশ্নের জবাব দিতে আমি বাধ্য নই।”
স্বাস্থ্য ভবনের স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ অবশ্য বলছেন, এনসেফ্যালাইটিসের মতো ডেঙ্গি বিষয়টা নিয়েই কলকাতা পুরসভা বেশি স্পর্শকাতর হয়ে রয়েছে। এমনিতেই এখন ডেঙ্গির মরসুম। কলকাতা ডেঙ্গিপ্রবণ এলাকা এবং গত বার যেহেতু রোগের প্রকোপ কম ছিল, তাই জীবাণুবিশেষজ্ঞদের মতে এ বছর ডেঙ্গি বেশি হওয়ার সম্ভাবনা। তা সত্ত্বেও কলকাতায় ডেঙ্গি হচ্ছে না বলে প্রমাণের একটা লাগাতার চেষ্টা পুরকর্তারা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তবে পুরকর্তারা যতই ডেঙ্গি পরিস্থিতি স্বাভাবিক বলে দেখাতে চান, শহরে প্রায় সব হাসপাতালেই নিয়মিত ডেঙ্গি-রোগী ভর্তি হচ্ছেন। মেডিক্যাল কলেজে কলকাতার বাসিন্দা আট জন ডেঙ্গি নিয়ে ভর্তি, ট্রপিক্যালে ভর্তি এক জন। বাঙুর হাসপাতালে আরও এক জন ডেঙ্গি আক্রান্ত রয়েছেন। স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ডিরেক্টর নন্দিতা বসুও জানিয়েছেন, প্রতিদিন তাঁরা রক্তপরীক্ষায় প্রচুর ডেঙ্গি পাচ্ছেন।