ক্যানসার-গবেষণায় সাফল্য, পুরস্কৃত প্রবাসী বিজ্ঞানী

কর্কট রোগ। ইংরেজিতে যাকে বলে ক্যানসার। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মারণ এই রোগের নিরাময়ে আবিষ্কৃত হচ্ছে নিত্য নতুন ওষুধ। কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষা তো থামে না। আর এই ক্যানসার রোগ নিয়ে গবেষণায় সাফল্যের জন্য পুরস্কৃত হলেন এক প্রবাসী বাঙালি গবেষক পরেশচন্দ্র রায়, যিনি আদতে পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা। গত ৭ মে দিল্লিতে একটি অনুষ্ঠানে কেন্দ্রকীয় সরকারের ‘মহাত্মা গাঁধী প্রবাসী সম্মান’ পুরস্কার পেলেন আমেরিকার জ্যাকসন স্টেট ইউনিভার্সিটির এই গবেষক।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

তমলুক শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৪ ০২:১৮
Share:

পরেশচন্দ্র রায়। —নিজস্ব চিত্র।

কর্কট রোগ। ইংরেজিতে যাকে বলে ক্যানসার। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মারণ এই রোগের নিরাময়ে আবিষ্কৃত হচ্ছে নিত্য নতুন ওষুধ। কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষা তো থামে না। আর এই ক্যানসার রোগ নিয়ে গবেষণায় সাফল্যের জন্য পুরস্কৃত হলেন এক প্রবাসী বাঙালি গবেষক পরেশচন্দ্র রায়, যিনি আদতে পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা। গত ৭ মে দিল্লিতে একটি অনুষ্ঠানে কেন্দ্রকীয় সরকারের ‘মহাত্মা গাঁধী প্রবাসী সম্মান’ পুরস্কার পেলেন আমেরিকার জ্যাকসন স্টেট ইউনিভার্সিটির এই গবেষক।

Advertisement

তমলুক শহরের অদূরে নারাদাঁড়ি গ্রামের বাসিন্দা বছর পঁয়তাল্লিশের পরেশবাবুর পড়াশোনা শুরু নারাদাঁড়ি গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর ব্যবত্তারহাট আদর্শ বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক পড়াশোনা করেছেন তিনি। বাবা রণজিৎ রায় ছিলেন ওই হাইস্কুলের শিক্ষক। এরপর কেমিস্ট্রি অনার্স নিয়ে মেদিনীপুর কলেজে পড়াশোনার পর কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি পাশ করেন পরেশবাবু। এরপর বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্স থেকে পিএইচডি ডিগ্রি পান ১৯৯৭ সালে। ওই বছরেই আমেরিকায় শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক হিসেবে যোগ দেন। দু’বছর পরে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার কাজে যোগ দেন তিনি। এরপর আমেরিকার একটি সংস্থায় অল্টারনেটিভ এনার্জি নিয়ে গবেষণা করেন। ২০০৩ সালে পরেশবাবু যোগ দেন মিসিসিপির জ্যাকসন স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। ২০০৩ সাল থেকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যানো সায়েন্স ও ন্যানো মেডিসিনের উপর গবেষণা করছেন পরেশবাবু ও তাঁর সহ গবেষকরা। পরেশবাবুর দাবি, প্রাথমিক অবস্থায় রক্তে ক্যানসার কোষের নির্ণয়ে সাফল্য পেয়েছেন তাঁরা। এর ফলে ক্যানসার রোগ নির্ণয়ে ও তাঁর চিকিৎসায় সুবিধা হবে। তারই স্বীকৃতিস্বরূপ প্রবাসী ভারতীয়দের সংগঠন এনআরআই ওয়েলফেয়ার সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণার জন্য পরেশবাবুকে ‘মহাত্মা গাঁধী প্রবাসী সম্মান-২০১৪’ দেওয়ার জন্য মনোনীত করেন।

পুরস্কার নিতে যাওয়ার আগে তমলুকের গ্রামে রবিবার নিজের বাড়িতে আসা পরেশবাবুকে সংবর্ধনা দেন নারাদাঁড়ি গ্রামের বাসিন্দারা। এ দিন নারাদাঁড়ি গ্রামে আয়োজিত একটি সেমিনারে স্থানীয় ব্যবত্তারহাট আদর্শ বিদ্যালয় ও বেতকল্লা মিলনী বিদ্যাপীঠের ১৫০ জন ছাত্রছাত্রীদের সামনে নিজের গবেষণার বিষয় ও তাঁর ফলাফল নিয়ে আলোচনা করেন পরেশবাবু। তিনি বলেন, “ক্যানসার রোগ প্রাথমিক অবস্থায় চিহ্নিত করার জন্য প্রাথমিক অবস্থায় রক্তে ক্যানসার কোষ চিহ্নিত করা খুব গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। কারণ প্রতি ১০০ মিলিয়ন ব্লাড সেলের (রক্ত কোষ) সঙ্গে মাত্র ১০ টি ক্যানসার সেল (সারকুলেটিং টিউমার সেল) থাকে। প্রাথমিক অবস্থায় ক্যানসার কোষ চিহ্নিত করে তাকে আলাদা করতে পারলে ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে সুবিধা হবে। প্রাথমিক অবস্থায় ক্যানসার রোগ নির্ণয় করাই গবেষণার প্রধান কাজ। এই গবেষণায় আমরা প্রাথমিক সাফল্য পেয়েছি। চূড়ান্ত সাফল্যের জন্য এখনও গবেষণা চলছে।”

Advertisement

পরেশবাবুর সাফল্যে গ্রামের বাসিন্দারাও। পরেশবাবু বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণার জন্য পুরস্কার পাওয়ার ঘটনায় খুশি নারাদাঁড়ি গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক দিলীপ রায় বলেন, “ছোটবেলা থেকে পড়াশোনায় মেধাবী ছিল পরেশ। ক্যানসার রোগ নির্ণয়ের গবেষণায় ও প্রাথমিক সাফল্য পেয়েছে। ওর এই সাফল্যে আমরা গর্বিত। চূড়ান্ত সাফল্যের বিষয়েও আমরা আশাবাদী।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement