চিকিৎসক সঙ্কট জেলা জুড়ে

কোথাও বিশেষজ্ঞ নেই, কোথাও নষ্ট হচ্ছে সরঞ্জাম

কোনও হাসপাতালে চিকিৎসকের জায়গায় একজনও নেই। কোনও ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৬ জনের জায়গায় রয়েছেন দু থেকে তিন জন। মহকুমা হাসপাতালেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই বললেই চলে। চিকিৎসক সঙ্কটের এ ছবি জেলা জুড়েই। বেশিরভাগ হাসপাতালে অর্ধেকের উপর চিকিৎসকের পদ খালি। চিকিৎসকের অভাবে প্রতিদিনই কোনও না কোনও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরিস্থিতি সামাল দিতে রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে জেলার স্বাস্থ্যকর্তাদের।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

কাটোয়া শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৪ ০২:২৪
Share:

কোনও হাসপাতালে চিকিৎসকের জায়গায় একজনও নেই। কোনও ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৬ জনের জায়গায় রয়েছেন দু থেকে তিন জন। মহকুমা হাসপাতালেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই বললেই চলে।

Advertisement

চিকিৎসক সঙ্কটের এ ছবি জেলা জুড়েই। বেশিরভাগ হাসপাতালে অর্ধেকের উপর চিকিৎসকের পদ খালি। চিকিৎসকের অভাবে প্রতিদিনই কোনও না কোনও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরিস্থিতি সামাল দিতে রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে জেলার স্বাস্থ্যকর্তাদের।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, চিকিৎসকের পাশাপাশি জেলার অর্ধেকেওর বেশি ব্লকে মেডিক্যাল অফিসার (বিএমওএইচ) নেই। ফলে একেকজন বিএমওএইচকে দু’তিনটি ব্লক সামলাতে হচ্ছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতেও (পিএচসি) চিকিৎসক পাঠানোর ব্যাপারেও সমস্যা দেখা দিচ্ছে। জেলার আটটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে দশ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত করার পরেও চিকিৎসকের অভাবে বেশিরভাগ হাসপাতালে রোগী ভর্তি নেওয়া শুরুই হয়নি। বিগত বাম আমলে ৬৭ লক্ষ টাকা খরচ করে ওই হাসপাতালগুলির পরিকাঠামোগত উন্নতি করা হয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, মাসের পর মাস অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থেকে হাসপাতালের নতুন ভবন, শয্যা-সহ চিকিৎসার বহু সরঞ্জামই নষ্ট হয়ে পড়ছে।

Advertisement

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আসানসোল মহকুমা হাসাপাতালকে জেলা হাসপাতালে উন্নীত করা হলেও চিকিৎসকের অভাব মেটেনি। তিনশো শয্যার এই হাসপাতালে দন্ত, শল্য, অর্থপেডিক, চামড়া-সহ বেশ কয়েকটি বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব রয়েছে। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকও নেই। সুপার নিখিল দাস বলেন, “বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়াও সুষ্ঠু ভাবে হাসপাতাল চালাতে আরও দশজন সাধারণ চিকিৎসক প্রয়োজন।” পরিস্থিতি সামাল দিতে আসানসোল জেলা হাসপাতাল তো বটেই কাটোয়া, কালনা ও দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের কর্তারাও সাধারণ চিকিৎসকদের দিয়ে ‘বিশেষজ্ঞ’-র কাজ করাচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে।

দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। পিপি ইউনিট সামলানোর জন্য কোনও চিকিৎসক নেই। হাসপাতাল সূত্রের খবর, ২৫ জন বিশেষজ্ঞ চিকিসকের মধ্যে মাত্র ১৮ জন রয়েছেন। আর ১২ জন সাধারণ চিকিৎসকের মধ্যে রয়েছেন ৬ জন। হাসপাতালের সুপার দেবব্রত দাস বলেন, “কোনও রকমে পরিস্থিতি সামলাচ্ছি আমরা।” দুর্গাপুরের বাসিন্দাদের একাংশেরও ক্ষোভ, প্রসূতি বিভাগে চিকিৎসক না থাকায় স্থানীয় নার্সিংহোমগুলির বাড়বাড়ন্ত। তাঁদের অভিযোগ, প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে কেউ গেলেই বর্ধমান জেলা হাসপাতালে স্থানান্তর করে দেওয়া হয়। বাধ্য হয়ে নার্সিংহোমে ভর্তি করতে হয় প্রসূতীকে।

একই পরিস্থিতি কাটোয়া ও কালনা মহকুমা হাসপাতালে। কালনা মহকুমা হাসপাতালে মেডিসিন, শিশু ও শল্য বিভাগে চিকিৎসকের সমস্যা ছিল। তার মধ্যে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে সুপার সাসপেন্ড হওয়ায় খবরে উঠে আসে হাসপাতালের নাম। বিজেপিও আন্দোলনে নামে। পরিস্থিতি সামলাতে তড়িঘড়ি অন্য হাসপাতাল থেকে তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে কালনা মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে বলে জানান জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণব রায়।

তবে সঙ্কট আরও বেশি গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে। স্বাস্থ্য কর্তারাও একবাক্যে মেনে নিচ্ছেন বহু চিকিৎসকই নিয়মিত যান না সেখানে। মঙ্গলকোটের ৫০ শয্যার সিঙ্গত গ্রামীণ হাসপাতালে ১০ জন চিকিৎসক থাকার কথা, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী চিকিৎসক নেই। ফলে রোগী ভর্তিও বন্ধ হয়ে রয়েছে। কোনওরকমে বহির্বিভাগ চালাচ্ছেন কাটোয়া মহকুমার স্বাস্থ্য কর্তারা। এতটা না হলেও চিকিৎসক-সঙ্কটে আক্রান্ত মাধবডিহি, বননবগ্রাম, আটঘরিয়া, পূর্বস্থলীর গ্রামীণ হাসপাতালগুলিও। জেলার এক স্বাস্থ্য কর্তা বলেন, “নিয়মিত রোগী ভর্তি থাকেন এমন হাসপাতালগুলি চিকিৎসকের অভাবে ভুগছে, সেখানে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির হাল কী তা কী বলে দিতে হবে?” বিভিন্ন বিএমওএইচ দফতরে খোঁজ নিয়েও জানা যায়, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে সপ্তাহে দু-তিন দিন চিকিৎসকরা যান। বহির্বিভাগে দু-তিন ঘন্টা রোগী দেখেন। ওই স্বাস্থ্য কর্তা বলেন, “একজন চিকিৎসককে দিয়ে প্রতিদিন অন্তত দুটো পিএচসি-র বহির্বিভাগ চালাতে হচ্ছে।”

জেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ধমানে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে ২৮টি, প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে ১০৬টি, গ্রামীণ হাসপাতাল রয়েছে ৬টি। জেলা ও মহকুমা হাসপাতালগুলি বাদে বর্ধমানের অন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির জন্য মোট ৩২৮ জন চিকিৎসক দরকার। সেখানে ১৮৫টি চিকিৎসকের পদ ফাঁকা। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণব রায় বলেন, “অর্ধেকের বেশি চিকিৎকের পদ ফাঁকা। প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। আশা করছি, জুলাই-অগস্ট মাসে পরিস্থিতি কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে আসবে।” তবে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এই মূহুর্তে চিকিৎসকের সমস্যা নেই বলে অধ্যক্ষ মঞ্জুশ্রী রায় জানিয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement