অকেজো মেশিন। —নিজস্ব চিত্র।
হাসপাতালের এক্স-রে বিভাগের সামনে দীর্ঘ লাইন। কিন্তু রোগীদের আর্তি সংশ্লিষ্ট কর্মীদের কান পর্যন্ত বড় একটা পৌঁছচ্ছে কিনা বোঝা মুশকিল। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরে ছেলের ভেঙে যাওয়া হাত দেখাতে মায়ের ডাক পড়ল। কিন্তু কোনও রকম পরীক্ষা না করেই কর্মীদের পক্ষে তাঁকে কার্ডে লিখে দেওয়া হল, ২০ দিন পরে যেন তিনি এক্স-রে করাতে আসেন। অনেক কাকুতি-মিনতির পরে অবশ্য মীমাংসা হল ১০ দিনে।
এ হেন অভিজ্ঞতা শুধু ওই অসহায় মায়ের নয়। ক্যানিং মহকুমা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা রোগীদের সকলকেই এই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। রোগী ও স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, সদর হাসপাতাল হওয়ার সুবাদে প্রাপ্য ন্যূনতম পরিষেবাও এখানে পাওয়া যায় না। আরও অভিযোগ, দিনে এখানে ২৫-৩০টির বেশি এক্স-রে করা হয় না। যেখানে প্রতি দিন হাজার হাজার রোগীর চাপ থাকে হাসপাতালে, সেখানে মাত্র দু’টি পুরনো আমলের এক্স-রে মেশিন দিয়েই কাজ চলে, যার একটি আবার বর্তমানে বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। ফলে ১৫-২০ দিনের আগে কেউ এক্স-রের অ্যাপয়েন্টমেন্টই পাচ্ছেন না, পরবর্তী চিকিৎসা তো আরও দূরের কথা। শুধু তাই নয়, ইউএসজি বিভাগেও সপ্তাহে ২-৩ দিনের বেশি ইউএসজি করানো হয় না। এক জন চিকিৎসক থাকলেও তিনি রোজ আসেন না।
এ দিকে ক্যানিং-বাসন্তী সেতু নির্মাণের পর থেকে বাসন্তী, গোসাবা, সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ-সহ উত্তর ২৪ পরগনার ধামাখালি, সরবেড়িয়া, সন্দেশখালি এলাকার মানুষও এখানে চিকিৎসার জন্য আসেন। ফলে রোজ বাড়ছে রোগীর চাপ। সম্প্রতি হাসপাতালে সিটিস্ক্যান মেশিন বসানো নিয়ে কথা বললেও সংশয়ে রয়েছেন রোগীরা। স্থানীয় বাসিন্দা সন্দীপ পুরকাইত বলেন, “পড়ে গিয়ে আমার মায়ের শিরদাঁড়া ভেঙে যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো হাসপাতালে এক্স-রে করাতে গেলে দীর্ঘ ক্ষণ অপেক্ষা করার পর বলা হয় এক সপ্তাহ পরে আসতে। পরে হাসপাতালের সুপার ও এক টেকনিসিয়ানের নজরে আসায় তাঁরা উদ্যোগী হয়ে জরুরি ভিত্তিতে মায়ের এক্স-রেটা করিয়ে দেন।” যদিও সব রোগীর ক্ষেত্রে এমনটা হয় না বলেই অভিযোগ। ক্যানিংয়ের সুপর্ণা মণ্ডল বলেন, “ইউএসজি করাতে হাসপাতালে গেলাম। গিয়ে দেখি চিকিৎসকই নেই। বাধ্য হয়ে পরের দিন যেতে হল।”
হাসপাতাল সূত্রের খবর, একটি এক্স-রে মেশিন দীর্ঘ দিন ধরে খারাপ, এটা ঠিক। একটি ডিজিটাল মেশিন আনার চেষ্টা হচ্ছে।