প্র্যাকটিসে ফুরফুরে মেজাজে কোস্টারিকার ফুটবলাররা। ছবি: এএফপি।
বছরটা ১৯৫০। ব্রাজিলের বেলো হরাইজন্তে শহরে অপেশাদারদের নিয়ে তৈরি কোনও এক অখ্যাত যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ০-১ হেরে মাথা হেঁট হয়েছিল ফুটবলের তৎকালীন বিশ্ব শক্তি ইংল্যান্ডের। চৌঁষট্টি বছর পরে সেই একই শহরে আরও একবার ধুলোয় মেশার আশঙ্কায় কম্পমান ব্রিটিশদের ফুটবল-অভিমান!
এর আগে কখনও কোনও বিশ্বকাপের আসর থেকে পয়েন্টবিহীন ফেরেনি ইংল্যান্ড। কিন্তু জেরার-রুনিদের সামনে আপাতত জ্বলছে সেই চরমতম কলঙ্কের বিপদ সঙ্কেত। বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার পর যাদের কাছে কোস্টারিকা ম্যাচটা এখন সম্মানের লড়াই। অন্য দিকে, পর পর দুই প্রাক্তন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন টিমকে হারিয়ে রক্তের স্বাদ পাওয়া কোস্টারিকা ম্যাচটাকে দেখছে বিশ্ব ফুটবলে নিজেদের প্রতিষ্ঠার মঞ্চ হিসাবে। যে কারণে ব্রায়ান রুইজদের চিন্তায় হার তো দূরের কথা, এই মুহূর্তে ড্র শব্দটাও নেই।
‘লস টিকোস’দের সহকারী কোচ, ওয়েস্টহাম এবং ম্যাঞ্চেস্টার সিটির প্রাক্তন স্ট্রাইকার পাওলো ওয়ানচোপি বলেছেন, “ইংল্যান্ডের মতো দলের বিরুদ্ধে তিন পয়েন্ট নিয়ে আমাদের ফুটবলাররা গোটা বিশ্বকে তাক লাগাতে মরিয়া হয়ে আছে। সেটা পারলে কোস্টারিকান ফুটবলের ভবিষ্যৎটাই পাল্টে যাবে।” ওয়ানচোপি এর পর যোগ করেছেন, “আমরা কোয়ালিফাই করতে পারি, সেটাই কেউ ভাবেনি। টিমটায় এক ডলার লগ্নি করারও কেউ ছিল না। কিন্তু কঠিনতম গ্রুপে দু’টো প্রাক্তন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন টিমকে হারিয়ে আমরাই প্রথম নক আউটে গেলাম। এ বার আরও এক প্রাক্তন বিশ্বসেরা ইংল্যান্ডকে হারিয়ে নিজেদের দাপটটা বোঝাতে মরিয়া হয়ে আছে গোটা টিম। তাতে শেষ ষোলোয় কঠিন প্রতিপক্ষের সামনে পড়তে হলেও কুছ পরোয়া নেই! গ্রুপের ম্যাচেই আমরা বুঝিয়েছি, বিশ্বের যে কোনও টিমকে হারানোর ক্ষমতা রাখে আমাদের দল।”
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভাল খেলতে টিমকে তাতাচ্ছে আরও একটা চিন্তা। ইউরোপের ক্লাব ফুটবল, বিশেষ করে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের বড় টিমগুলোর নজরে পড়ে ভাগ্যের দরজা খুলে যাওয়া। আবার কোস্টারিকা অধিনায়ক ব্রায়ান রুইজ বা আর্সেনালের জোয়েল ক্যাম্পবেলের মতো কারও কারও জন্য ক্লাবের কাছে নিজেদের আসল ওজন প্রমাণের সুযোগ ম্যাচটা। ফুলহামের এক ম্যাচ থেকে গত বছর টিটকিরির মধ্যে মাঠ ছাড়ার পর লোন-এ পিএসভি আইন্দহোভেনে খেলছেন রুইজ। ক্যাম্পবেলকেও অলিম্পিয়াকোসকে ধার দিয়েছে আর্সেনাল। দুই ফুটবলারই বেলো হরাইজন্তের মাঠে অপমানের যোগ্য জবাব দিতে মরিয়া হয়ে আছেন। এমনকী কোস্টারিকার কোচ, একষট্টি বছরের কলম্বিয়ান হোর্জে লুইস পিন্টোর জন্যও ইংল্যান্ড ম্যাচটা ইউরোপের পাসপোর্ট জোগাড়ের সুযোগ। পেরু, কোস্টারিকা, ভেনিজুয়েলা এবং কলম্বিয়ার ক্লাব ফুটবলে ট্রফি থাকা কোচ বিশ্বকাপের পর ইউরোপে চাকরি পেতে মরিয়া।