আর্সেনিকের সহনমাত্রা কমাতে বলল কমিটি

জলে আর্সেনিক দূষণ নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের আটটি মন্ত্রক কোনও না কোনও ভাবে যুক্ত। কিন্তু তাদের একটির সঙ্গে আরেকটির কোনও রকম সমন্বয় না থাকায় এখনও পর্যন্ত আর্সেনিক দূষণ নিয়ে কোনও নীতিই তৈরি করতে পারেনি কেন্দ্রীয় সরকার! আটটি মন্ত্রকের পরস্পরবিরোধী তথ্যে আর্সেনিক দূষণের বাস্তব চিত্রটা অপ্রকাশিতই রয়ে গিয়েছে বলে রিপোর্ট দিয়েছে বিজেপি সাংসদ মুরলীমনোহর জোশীর নেতৃত্বাধীন এস্টিমেট কমিটি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:২২
Share:

জলে আর্সেনিক দূষণ নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের আটটি মন্ত্রক কোনও না কোনও ভাবে যুক্ত। কিন্তু তাদের একটির সঙ্গে আরেকটির কোনও রকম সমন্বয় না থাকায় এখনও পর্যন্ত আর্সেনিক দূষণ নিয়ে কোনও নীতিই তৈরি করতে পারেনি কেন্দ্রীয় সরকার! আটটি মন্ত্রকের পরস্পরবিরোধী তথ্যে আর্সেনিক দূষণের বাস্তব চিত্রটা অপ্রকাশিতই রয়ে গিয়েছে বলে রিপোর্ট দিয়েছে বিজেপি সাংসদ মুরলীমনোহর জোশীর নেতৃত্বাধীন এস্টিমেট কমিটি। ১৯৭৬ সালে দেশে প্রথম আর্সেনিক দূষণ ধরা পড়ার পরে এই প্রথম সংসদের কোনও কমিটি এই সমস্যা খতিয়ে দেখল।

Advertisement

কেন্দ্রের এই কমিটির আরও সুপারিশ, দেশে পানীয় জলে আর্সেনিকের সহনমাত্রা ০.৫ মিলিগ্রাম প্রতি লিটার থেকে কমিয়ে ০.০১ মিলিগ্রাম করা হোক। সংসদীয় কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতে প্রতি লিটার জলে ০.০৫ মিলিগ্রাম আর্সেনিক থাকলে সেই জল পানের যোগ্য বলে গণ্য করা হয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক স্তরে এই মাত্রা হল প্রতি লিটার জলে ০.০১ মিলিগ্রাম। কেন ভারতে এই সহনমাত্রা বাড়ানো হল, তা বিভিন্ন মন্ত্রকের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে জানতে চেয়েছিল সংসদীয় কমিটি। তাদের প্রশ্ন ছিল, ভারতীয়দের কি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি? এই ভাবে সহনমাত্রা বাড়িয়ে রাখার সিদ্ধান্তই বা কে নিয়েছে? সংসদীয় কমিটি তাদের রিপোর্টে বলেছে, কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও মন্ত্রকই এই সব প্রশ্নের যথাযথ জবাব দিতে পারেনি। তার ভিত্তিতেই জোশীর সুপারিশ, অবিলম্বে এ দেশে আর্সেনিকের সহনমাত্রা কমানো হোক।

কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রকের মধ্যে কোনওটা কৃষিজ পণ্যে আর্সেনিক দূষণ রোখার ব্যাপারে সক্রিয়, কোনওটা ভূস্তরে জলের ভারসাম্য রক্ষার বিষয়টি দেখে, কোনওটা আবার দেখে মানুষের শরীরে আর্সেনিকের প্রভাব কতটা গুরুতর এবং আর্সেনিক দূষণ আক্রান্তদের চিকিৎসার বিষয়টি। কিন্তু সংসদীয় কমিটির রিপোর্ট বলছে, পানীয় জলের আর্সেনিক দূষণ নিয়ে আটটি মন্ত্রকের কেউই সঠিক তথ্য রাখেনি! দেশের কোন রাজ্যের কোন কোন জেলায় আর্সেনিকের প্রকোপ কতটা, তা নিয়ে একেক সংস্থার একেক রকম তথ্য বিষয়টিকে আরও জটিল করে তুলেছে বলে কমিটির বক্তব্য।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ-সহ দেশের অন্তত ১০টি রাজ্যের ভূগর্ভস্থ জলে বিপজ্জনক মাত্রায় আর্সেনিক রয়েছে। দূষণের ব্যাপকতার নিরিখে প্রথম স্থানে পশ্চিমবঙ্গ। দীর্ঘদিন ধরে বিপজ্জনক মাত্রার আর্সেনিকযুক্ত জল খেলে ত্বক, লিভার, কিডনি, ফুসফুসের ক্যানসারে মানুষের মৃত্যু হয়। তা সত্বেও আর্সেনিকের সমস্যা সমাধানে কেন্দ্রীয় সরকারের কেন কোনও নীতি নেই, সেই প্রশ্ন তুলেছে সংসদীয় কমিটি। তাদের বক্তব্য, দু’বছর আগে কেন্দ্রীয় জল নীতি তৈরি হয়েছে। সেখানে আর্সেনিকের কোনও উল্লেখই নেই। কমিটির চেয়ারম্যান মুরলী মনোহর জোশী বলেন, “জলসম্পদ, স্বাস্থ্য, গ্রামোন্নয়নের মতো আটটি মন্ত্রক তাদের বক্তব্য জানিয়েছে। কিন্তু সকলেই নিজেদের দায় এড়িয়ে যেতে চেয়েছে। আর্সেনিক সমস্যার সমাধানে কেন্দ্রীয় সরকারের সামগ্রিক কোনও নীতি নেই। আর্সেনিক নিয়েও একেক জনের কাছে একেক রকম তথ্য। তাই আমরা চাই আর্সেনিক সমস্যা সমাধানে পৃথক একটি নীতি তৈরি করুক কেন্দ্রীয় সরকার।” একই সঙ্গে সংসদীয় কমিটির সুপারিশ, ওই নীতি রূপায়ণের জন্য সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হোক। তৈরি হোক কেন্দ্রীয় স্তরে একটি তথ্যভাণ্ডার।

এস্টিমেট কমিটির রিপোর্ট বলছে, পশ্চিমবঙ্গের আটটি জেলা, কলকাতা, দুই ২৪ পরগণা, মালদা, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, বর্ধমান, হাওড়া ও হুগলির জলে বিপজ্জনক মাত্রার থেকে বেশি আর্সেনিক মিলেছে। দক্ষিণ ২৪ পরগণার বারুইপুর ব্লকের দুই নম্বর রামনগর গ্রাম পঞ্চায়েতে আর্সেনিকের মাত্রা সবথেকে বেশি। জোশীর বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে অবশ্য আর্সেনিক মোকাবিলায় কিছুটা কাজ হয়েছে। সিএসআইআর পশ্চিমবঙ্গে চাষের জন্য দু’রকমের ধান বীজ বের করেছে। যে ধান চাষ করলে চালের মধ্যে আর্সেনিক বেশি মাত্রায় ঢুকতে পারবে না।

কমিটির বক্তব্য, কোন রাজ্যে কতখানি আর্সেনিকের বিষ ছড়িয়ে রয়েছে, সে বিষয়েও একেক জন একেক রকম তথ্য দিয়েছে। জলসম্পদ মন্ত্রক যখন বলছে, ১০টি রাজ্যের ৮৬টি জেলায় আর্সেনিকের প্রকোপ রয়েছে, তখন কৃষি গবেষণা ও শিক্ষা দফতরের তথ্য, ৯ রাজ্যের ৭১টি জেলায় আর্সেনিক রয়েছে! বিজ্ঞান মন্ত্রক আবার অন্য তথ্য দিয়েছে। সিএসআইআর জানিয়েছে, ৬টি রাজ্যের ৩৫টি জেলায় ৭ কোটি মানুষ আর্সেনিকের বিষে আক্রান্ত।

সংসদীয় কমিটি খোঁজখবর শুরু করতেই অবশ্য কিছুটা নড়ে বসেছে কেন্দ্রীয় সরকার। কমিটিকে জানানো হয়েছে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের সচিবদের নিয়ে একটি টাস্ক ফোর্স গঠন হয়েছে। জোশী ওই টাস্ক ফোর্সকে তিন মাসের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁর দাবি, প্রতি ছয় মাস অন্তর এই টাস্ক ফোর্সের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে সংসদে রিপোর্ট পেশ করা হোক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement