ঠিকমতো কথা বলতে পারেন না। ছোট থেকেই সঙ্গী হুইলচেয়ার। কিন্তু সেই শারীরিক দুর্বলতাও ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি একটুও। শিয়ালদহের দীপক ঘোষ মনের কথা বলেন পায়ের সাহায্যেই। পা দিয়েই টাইপ করেন কম্পিউটারে বা তাঁর বিশেষ ধরনের ট্যাবলেটে। ইতিমধ্যে তিনি এগিয়ে গিয়েছেন অনেকটা পথও। সাতাশের যুবক এখন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সেরিব্রাল পালসির অগমেনটেটিভ অ্যান্ড অল্টারনেটিভ কমিউনিকেশন বিভাগের কর্মী।
তাঁরই মতো অসুস্থ, অসহায় ছেলেমেয়েদের জন্য কিছু করতে চেয়েছিলেন দীপক। সেই স্বপ্নের টানেই সহকর্মী জিজা ঘোষকে নিয়ে কমপ্লেক্স কমিউনিকেশনের প্রয়োজন আছে এমন শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য কাজ শুরু করেছেন। সেরিব্রাল পলসি আক্রান্ত জিজাদেবীরও কথা বলার সমস্যা রয়েছে। সম্প্রতি আইস্যাক (ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর অগমেন্টেটিভ এবং অল্টারনেটিভ কমিউনিকেশন) এই বিষয়ের উপর কাজ করা তাঁদের একটি পেপার মনোনীত করেছে। আন্তর্জাতিক বেসরকারি এই সংস্থার সদস্য ভারত-সহ ৫০টি দেশ। আগামী ২১ জুলাই থেকে পতুর্গালে তাদের আয়োজিত তিন দিনের এক আলোচনাচক্রে মনোনীত পেপারটি পড়বেন দীপকবাবুরা।
এমন সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত দীপকবাবু। পা দিয়ে লিখেই জানালেন, সাধারণ আবেদনকারীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই তাঁদের পেপার মনোনীত হয়েছে। পাশে বসা জিজাদেবী তখন ভাঙা কথায় বলছেন, “ভারতে প্রতিবন্ধীদের ও অল্টারনেটিভ কমিউনিকেশন ব্যবহারকারীদের বেশি সুযোগ নেই। নেত্ৃত্ব দেওয়ার মতো পরিস্থিতিতেও পৌঁছতে পারেন না অনেকে। বিশ্বের দরবারে এটা তুলে ধরতে পারলে অনেকেই অনুপ্রাণিত হবে।”
তবে রয়েছে উদ্বেগও। আমন্ত্রিতদের ছাড়া অন্য কারও ব্যয়ভার বহনের নিয়ম না থাকলেও অনুরোধ মেনে আইস্যাক শুধু জিজাদেবীর যাতায়াতের খরচ বহন করতে রাজি। দীপকবাবুর রোজকার জীবনে এক জন সাহায্যকারীর প্রয়োজন হয়। দু’জনের যাতায়াত, থাকা-খাওয়ার জন্য প্রয়োজন চার লক্ষেরও বেশি টাকা। তার জোগান কী ভাবে হবে, সাফল্যের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে সেই চিন্তাই এখন তাড়া করে বেড়াচ্ছে দীপকবাবুদের।