ভার্চুয়াল পার্টি। —নিজস্বচিত্র
হইহই করে চলে এল বছরের শেষ সপ্তাহ। এখন সবার মনেই বাজছে ‘উই লাইক টু পার্টি’। গুনগুনিয়ে নয়, ড্রামের লাউডেস্ট বিটের সঙ্গে তাল দিয়ে। অনেকদিন পর কলকাতার ঘাড়ে জাঁকিয়ে কামড় বসিয়েছে ঠাণ্ডা। সেই অজুহাতে একটু উষ্ণ হওয়ার সুযোগ তো এখনই, তাই না!
যদিও করোনার দৌলতে সে ইচ্ছে পূরণে এখন অনেক বাধা। চারপাশে বর্ষশেষের পার্টির বিজ্ঞাপন। ক্লাব-হোটেল-রেস্তারাঁয় গ্যাঁটের কড়ি খসিয়ে খাওয়া দাওয়া নাচা গানার জমকালো হাতছানি। কিন্তু, সেখানে যাওয়ার কথা ভাবলেই মাথায় ঘুরছে একরাশ চিন্তা। নিজেকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেওয়া উচিত কি না। ডান্সফ্লোরে যাওয়া উচিত হবে কি না। নাচে মাতলে দৈহিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা কি মনে থাকবে কারও! এইসব। তা হলে শ্যাম আর কূল একসঙ্গে বাঁচাবেন কী ভাবে? সুরক্ষা নষ্ট না করেই মরসুমের আনন্দের প্রতিটা বিন্দু কী করে নিজের দিকে টেনে নেবেন?
উপায় রয়েছে মুঠোফোনে। অফিসের কাজ, কাজের ইন্টারভিউ, পড়াশোনা বা পরীক্ষা সবই যখন ফোন বা ল্যাপটপে ভার্চুয়ালি হচ্ছে, তখন ভার্চুয়াল পার্টিতেই বা সমস্যা কোথায়। বলছে জেন ওয়াই। সদ্য ইউনিভার্সিটি পাশ করে বেরিয়েছেন প্রত্যাশা রায়। বয়স ২৩। জানাচ্ছেন, ‘‘আমার সব বন্ধুই দূরে থাকে। ওদের সঙ্গে দেখা করা সম্ভবই নয়। বছরের শেষ সপ্তাহে তাই অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পার্টি করছি আমরা। তাতে খাওয়াদাওয়া, নাচগান, সাজগোজ সবই হবে। সাধারণ একটা পার্টিতে গেলে যা করতাম, তার সবটাই করব আমরা। শুধু বাড়িতে থেকে। কারও নিরাপত্তার সঙ্গে আপস না করে।’’ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় আবার জানালেন, তাঁরা পার্টি না করলেও নতুন ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ফ্রেশারসের পরিকল্পনা করছেন ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মেই। ‘‘ফ্রেশারস যখন আড্ডা তো হবেই। আবার কেউ যদি পারফর্ম করতে চায় তা-ও হবে।খাওয়া-দাওয়াটা সম্ভব নয়। তবে আড্ডায় আর কী কী হবে তা ঠিক করতে একটা সোশ্যাল গ্রুপ তৈরি করেছি আমরা। সেখানেই চলছে সব প্ল্যানিং।’’
আরও পড়ুন :সিল্কের মরসুম
সোজা কথায় করোনাকে পাশ কাটিয়ে আনন্দ করতে বা পার্টি করতে সোশ্যাল মাধ্যমকে বেছে নিচ্ছেন অনেকেই। কিন্তু, কী ভাবে হবে সেই ভার্চুয়াল পার্টি। লকডাউন পর্বে ভার্চুয়াল আড্ডা তো অনেকেই দিয়েছেন বন্ধুদের সঙ্গে। তার থেকে বছর শেষের এই পার্টিকে আলাদা করবেন কী ভাবে? উত্তর দিলেন বিশেষজ্ঞরা। পার্টির সাজগোজ, অন্দরসজ্জা এমনকি, পান ভোজন নিয়ে সাজিয়ে দিলেন পরামর্শ।
সাজগোজ
‘‘বাড়িতে পার্টি যখন, তখন সবার আগে কমফের্ট জরুরি।’’ বলছেন ডিজাইনার অভিষেক দত্ত। আবার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হলে, সে সামনা সামনি হোক বা ভার্চুয়ালি ছবি তোলার ব্যাপার থেকেই যায়। তাই স্টাইলও দরকার। ‘‘ভার্চুয়াল পার্টির তাই সবচেয়ে ভাল পোশাক হতে পারে কাফতান।’’ পরামর্শ ডিজাইনারের। বললেন, ‘‘এখন নানারকম কাফতান ফ্যাশনে বেশ ‘ইন’। সিল্কের ওপর প্রিন্ট বা সিক্যুইনের কাজ করা কাফতান যেমন ড্রেসি লাগবে, তেমনই কমফর্টেবলও হবে। একই ভাবে বড় ফ্লোরাল প্রিন্ট বা জিওমেট্রিক প্রিন্টের ম্যাক্সি ড্রেসও পড়া যেতে পারে। ম্যাক্সি ড্রেস সাধারণত হালকা ধরনেরই হয়। তাই বাড়িতে থাকার আরামের সঙ্গে এই ড্রেসে বিন্দুমাত্র সমঝোতা করতে হবে না। আবার একটু স্মার্ট লুক আনতে জাম্পস্যুট ও পরা যায়। হালকা সিক্যুইউন কাজের বা একটু সাহসী হলে প্লাঞ্জিং নেকলাইনের জাম্পস্যুট পরতে পারেন। স্টেটমেন্ট তৈরি করতে চাইলে এর সঙ্গে পরে নিন চওড়া বেল্ট। বা খুব হালকা একটা নেকলেস। হালকা মেক আপে এতেই মাত হবে পার্টি।’’ ছেলেরা পরতে পারেন ভাল একটা সোয়েটার বা ঢিলে ঢালা সোয়েট শার্ট। বা উজ্জ্বল রঙের স্লিপিং স্যুট বা সিল্কের ড্রেসিং গাউন।
ঘরের সাজ
অনলাইন মিটিংয়ে কিছুটা হলেও দেখা যাবে ঘরের সাজসজ্জা। পার্টি যদি ফুল ফর্মে করতে হয় তা হলে পার্টির লুক আনতে হবে ঘরের সাজেও। কেমন হবে সেই সাজ। ইন্টিরিয়র ডিজাইনার উর্বশী বসু বলছেন, ‘‘প্রথমেই খেয়াল রাখতে হবে আলোর ব্যাপারটা। ব্যাকগ্রাউন্ডে যা থাকবে তাতে যেন ঠিকঠাক আলো পড়ে। স্টুডেন্টদের পার্টি যদি হয়, তবে তাঁদের পক্ষে সব সময় সুন্দর দেখতে দেওয়াল পাওয়া সম্ভব হবে না হয়তো। সেক্ষেত্রে তারা ক্রিসমাস থিম বা ফেয়ারি লাইট দিয়ে সাজাতে পারে ঘর। অস্থায়ী সুতো ঝুলিয়ে টাঙানো যেতে পারে ক্রিসমাস বলও। আর থার্টিফাস্টের পার্টি হলে একটু গাঢ় রঙের ব্যাকগ্রাউন্ট হলে ভাল। না পেলে গাঢ় রঙিন কাগজ দিয়ে সাজানো যেতে পারে ঘর বা দেওয়ালটাকে। টাঙানো যেতে পারে মিনিয়েচার আলো। বা একটা সুন্দর ছবি। তবে মনে রাখতে হবে, ঘরের সাজসজ্জা যেমন হবে তার সঙ্গে মিলিয়ে কিন্তু নিজের পোশাকও বাছতে হবে। তা হলেই সব মিলিয়ে ভালো লাগবে ঘরটা।’’
পানভোজন
ভার্চুয়াল পার্টি। তার মানে সবার সঙ্গে পাশাপাশি খাওয়া দাওয়া তো নয়। কিন্তু, একা বাড়িতে বসে কী খাবেন, ডাল ভাত রুটি নয় নিশ্চয়ই। পার্টি ফিল আনতে একটু ভাল খাওয়া দরকার। সঙ্গে পানীয় থাকলে তো কথাই নেই। শেফ কৌশিক সাহা জানাচ্ছেন, ‘‘বিদেশি ধাঁচের পার্টিতে বাঙালি খাবারও খাওয়া যেতে পারে। একটু পরিশ্রম লাগলেও কষা মাংস আর লুচি অলটাইম ফেভারিট। তবে যদি কেউ হেলদি খাওয়ার উপর জোর দিতে চান, তবে গ্রিলড চিকেন বানিয়ে ফেলুন বা বেকড ফিশ। স্বাদে নতুনত্ব আর মরসুমি ছোঁয়া আনতে গ্রিলড চিকেনে দেওয়া যেতে পারে নলেন গুড়। তার সঙ্গে লেবুর রস, চিলিফ্লেকস সামান্য আদা বা আদা রসুন দেওয়া যেতে পারে। এ ভাবে ম্যারিনেট করে গ্রিল করে নিজেই বানিয়ে নিতে পারবেন ভাল ডিনার যা পানীয়ের সঙ্গেও দারুণ ভাল লাগবে। মিষ্টি হিসাবে গাজরের হালুয়া বানিয়ে নিতে পারেন বাড়িতেই। সহজ রেসিপি। তবে ইউনিক টাচ দিতে চিনির বদলে দিন নলেনগুড়, পার্টির মুড তৈরি হয়ে যাবে এক চামচ মুখে দিলেই।’’
সোজা কথায় বাড়ির কোনে গুছিয়ে বসে পান, ভোজন, গান, আড্ডা নিয়ে চলতেই পারে পার্টি। বছর শেষের রাতে শেষ কাউন্টডাউনের সময়ে এ বার নয় ফোনের পর্দাতেই পানীয়ের গ্লাস ঠেকিয়ে বলবেন ‘উল্লাস’!