Tuberculosis

মাঝপথে ওষুধ বন্ধ করে দিলে টিবি বিপজ্জনক হয়ে ওঠে

ওষুধেও কাজ হচ্ছে না, রোগ বাড়ছে আপন গতিতে। এই সমস্যা আমাদের নিজেদেরই ডেকে আনা। এক দিকে অনেক যক্ষ্মা রোগী আপাত ভাবে সুস্থ হয়ে গেলে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন।

Advertisement

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৯ ১৫:৪০
Share:

দেশের মোট যক্ষ্মা রোগীর প্রায় চার শতাংশ মাল্টি ড্রাগ রেসিস্ট্যান্ট (এমডিআর টিবি)। প্রতীকী ছবি।

ওষুধেও কাজ হচ্ছে না, রোগ বাড়ছে আপন গতিতে। এই সমস্যা আমাদের নিজেদেরই ডেকে আনা। এক দিকে অনেক যক্ষ্মা রোগী আপাত ভাবে সুস্থ হয়ে গেলে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন। আবার অন্য দিকে, টিবি আক্রান্ত হলে দিনের পর দিন বিনা চিকিৎসায় পড়ে থাকেন অথবা অন্য অবৈজ্ঞানিক উপায়ের সাহায্য নিয়ে রোগ বাড়িয়ে তোলেন। আর এই সব কারণেই বাড়ছে মাল্টি ড্রাগ রেসিস্ট্যান্স টিউবারকুলোসিস। বলছিলেন কলকাতার একটি বেসরকারি কলেজ ও হাসপাতালের এমেরিটাস অধ্যাপক ও বক্ষরোগ বিশেষজ্ঞ মলয় মৈত্র।

Advertisement

আবার যাদের মাল্টি ড্রাগ রেসিস্ট্যান্ট টিবি আছে তাঁদের মাধ্যমেও রোগ ছড়িয়ে পড়ে। এই মুহূর্তে আমাদের দেশের মোট যক্ষ্মা রোগীর প্রায় চার শতাংশ মাল্টি ড্রাগ রেসিস্ট্যান্ট (এমডিআর টিবি)।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, ২০১৬ সালে আমাদের দেশে মোট যক্ষ্মা আক্রান্তের সংখ্যা ২৭ লক্ষ ৯০ হাজার। এদের মধ্যে প্রতি বছর (২০০৬ – ২০০১৪ সাল পর্যন্ত) প্রায় ২ লক্ষ ২০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। শুধু তাই নয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষায় জানা গিয়েছে যে, আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ টিবির জীবাণু বহন করছেন। কিন্তু বেশির ভাগেরই অসুখ নেই।

Advertisement

আরও পড়ুন: এই সামান্য উপসর্গগুলিও বলে দিতে পারে আপনি যক্ষ্মায় আক্রান্ত কি না

মহিলা ও শিশুদের মধ্যেও এমডিআর টিবি-র ঝুঁকি ক্রমশ বাড়ছে। আসলে বাড়িতে কোনও এমডিআর রোগী থাকলে তাঁর থেকে রোগ ছড়িয়ে পড়ে, বললেন মলয় মৈত্র। ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্স-এর শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ পল্লব চট্টোপাধ্যায় জানালেন, জন্মের পর বাধ্যতামূলক ভাবে যক্ষ্মার টিকা দেওয়া হয় ঠিকই, কিন্তু তার কার্যকারিতা থাকে ছয় বছর পর্যন্ত। তাই ছয় বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর বাচ্চাদের টিবির ঝুঁকি থাকে। যক্ষার চিকিৎসায় সাধারণত যে দু’টি সব থেকে কার্যকর ওষুধ ব্যবহারে করা হয় সেগুলি হল ইসোনিয়াজ়িড এবং রিফ্যামপিসিন। যখন টিবির চিকিৎসায় এই দু’টি ওষুধ কাজ করে না, তাকেই বলে এমডিআর টিবি।

আরও পড়ুন: ক্যানসার থেকে ডায়াবিটিস, রোগ নিয়ন্ত্রণে পাতে রাখুন এই জাদু চাল!

সাধারণ টিবির সঙ্গে এমডিআর টিবির পার্থক্য বোঝবার উপায় কী?

মলয় মৈত্র জানালেন, এর লক্ষণ সাধারণ টিবির মতোই। নাগাড়ে ৩ সপ্তাহ বা তারও বেশি সময় ধরে কাশি, লাগাতার অল্প অল্প জ্বর, বুকে ব্যথা, শ্বাস কষ্ট, কফের সঙ্গে রক্ত বেরোন, দ্রুত ওজন কমে যাওয়া ও সামগ্রিক দুর্বলতা। চিকিৎসক যদি মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবি সন্দেহ করেন, তবে রোগীকে বিশেষ কয়েকটি পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন। রোগীর কফ নিয়ে জিন এক্সপার্ট ও কালচার ও ড্রাগ সাসেপ্টিবিলিটি টেস্ট করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। এই পরীক্ষার সাহায্যে মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট জীবাণুদের সহজেই চিহ্নিত করা যায়।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে প্রত্যেক বছর বিশ্বের ১৪ লক্ষ মানুষ টিবির কারণে মারা যান। এদের সিংহ ভাগই মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবির শিকার। টিবি ধরা পড়ার পর হুর নির্দেশিকা মেনে নির্দিষ্ট ওষুধের মাত্রা না নিলে এমআরডি টিবির ঝুঁকি বাড়ে। এ ছাড়া অনেকেই সাময়িক ভাবে সুস্থ হয়ে গিয়েছেন মনে করে ওষুধের ডোজ কমিয়ে দেন অথবা ওষুধ খাওয়া ছেড়ে দেন। রোগীকে দ্রুত শনাক্ত করে চিকিৎসা শুরু করালে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে টিবির বাড়বাড়ন্ত রুখে দেওয়া যায়।

২০১৬ সালের মে মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট রোগীদের জন্য ৯ থেকে ১১ মাসের শর্টার রেজিমেন পদ্ধতি অনুমোদন করেছেন। যদি মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবির রোগীদের ওই দু’টি ওষুধেই রেজিস্ট্যান্ট থাকে, তা হলে ২০ থেকে ২৪ মাসের চিকিৎসার আওতায় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বেডাক্যুইলিন এবং ডেলামেনিড নামে দু’টি অত্যাধুনিক ওষুধের সাহায্য নিয়ে রোগ সারানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে এর জন্য টানা চিকিৎসার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকা আবশ্যক।

বিশ্ব যক্ষ্মা দিবসে যক্ষ্মা মুক্ত থাকার শপথ নিন, ভাল থাকুন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement