কেটে ছড়ে যাওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যে রক্তপাত বন্ধ হয়ে যাওয়াই তো স্বাভাবিক। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায় রক্তপাত বন্ধ হতেই চায় না। এই সমস্যা গুরুতর আকার নিতে পারে। অথচ হিমোফিলিয়া বা রক্ত বন্ধ না হওয়ার সমস্যা সম্পর্কে আমাদের সচেতনতা প্রায় নেই বললেই চলে। সারা বিশ্বে লক্ষ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা ও অল্পবয়সী মেয়ে এই সমস্যায় ভোগায় সচেতনতা গড়ে তুলতে ১৭ এপ্রিলকে বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবস ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)।
গবেষকেরা জানাচ্ছেন, বিশ্বে প্রতি হাজার পিছু ১ জন রক্ত জমাট না বাঁধার এই জেনেটিক সমস্যায় ভোগেন। এই সমস্যা থাকলে কোনও আঘাত বা অস্ত্রোপচারের পর দীর্ঘ ক্ষণ ধরে রক্তপাত হতে থাকে। সাধারণত বাবা অথবা মা, অথবা উভয়ের কাছ থেকেই এই অস্বাভাবিকতা শিশুর দেহে বাহিত হয়।
কী এই হিমোফিলিয়া?
সাধারণত দু’ধরনের হিমোফিলিয়া দেখা যায়। ‘হিমোফিলিয়া এ’ এবং ‘হিমোফিলিয়া বি’। তবে হিমোফিলিয়ার বি-এর তুলনায় হিমোফিলিয়া ‘এ’ অনেক বেশি প্রচলিত অস্বাভাবিকতা। দুই হিমোফিলিয়ার ক্ষেত্রেই লক্ষণগুলো একই থাকে। প্রকোপ যত গুরুতর হয়, লক্ষণও তত প্রকট হতে থাকে। রক্তপাতের সময়ও তত দীর্ঘ হয়।
মাইল্ড হিমোফিলিয়া
মাইল্ড হিমোফিলিয়া থাকলে সাধারণ অবস্থায় কোনও লক্ষণ দেখা যায় না। কোনও অস্ত্রোপচার বা দাঁতের সমস্যা হলে দীর্ঘ সময় ধরে রক্তপাত হতে পারে।
মডারেট হিমোফিলিয়া
এই ধরনের হিমোফিলিয়ার লক্ষণ শৈশবে বেশি প্রকট থাকে। যে শিশুরা মডারেট হিমোফিলিয়া নিয়ে জন্মায় তাদের শরীরে সহজে কালশিটে পড়ে বা ভিতরে ভিতরে রক্তপাত হওয়ার সমস্যা দেখা যায়। সাধারণত শরীরের বিভিন্ন গাঁটের কাছে রক্তপাত হয়। এই সময় গাঁটে অস্বস্তি বা কোনও রকম ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
যদি চিকিত্সা না করা হয় তা হলে জয়েন্ট স্টিফনেস হতে পারে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে গাঁট ফুলে উঠতে পারে।
সিভিয়ার হিমোফিলিয়া
এই হিমোফিলিয়ার লক্ষণগুলোও মডারেট হিমোফিলিয়ার মতোই। তবে এ ক্ষেত্রে গাঁটে রক্তপাতের সমস্যা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। কোনও শিশুর সিভিয়ার হিমোফিলিয়া থাকলে বিশেষ কোনও কারণ ছাড়াই শরীরে রক্তপাত শুরু হয়ে যেতে পারে। নাক, মাড়ি, গাঁট এমনকী পেশীতেও রক্তপাত হতে পারে।সিভিয়ার হিমোফিলিয়া
যদি চিকিত্সা না করা হয় তা হলে সিভিয়ার হিমোফিলিয়া হাড়, টিস্যু বিকৃতির মতো সমস্যা ডেকে আনতে পারে।
আরও পড়ুন: ডায়াবেটিসের এই ৪ সাধারণ লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন থাকুন
চিকিত্সকরা জানাচ্ছেন, হিমোফিলিয়া কখনই সম্পূর্ণ সারানো সম্ভব নয়। তবে সচেতন থাকলে চিকিত্সার মাধ্যমে গুরুতর সমস্যা থেকে দূরে থাকা যায়।