ডায়াবেটিস এড়াতে সতর্ক হোন এখনই।
৯৫ শতাংশ ডায়াবিটিক রোগী ভোগেন টাইপ ২ ডায়াবিটিসে, অর্থাৎ একটু বেশি বয়সে যে ধরনের ডায়াবিটিস হয়৷ এ রোগের প্রবণতা থাকলে শুয়ে–বসে থাকা, বেশি ওজন, বেশি খাওয়া, মানসিক চাপ ইত্যাদি যে ক্ষতিকর, তা আমরা জানি৷ কিন্তু টিভি দেখা, নরম পানীয় খাওয়া বা মাঝেমধ্যে না খেয়ে থাকাও যে কমবেশি একই দোষে দুষ্ট তা জানা গেল সম্প্রতি৷ ক্রমে সেই তালিকায় জুড়ল আরও নাম৷ সতর্ক করলেন হরমোন বিশেষজ্ঞ সুজয় ঘোষ।‘‘ডায়াবিটিসের প্রবণতা যদি থাকে, এই সব অভ্যাস চালিয়ে গেলে রোগ হতে পারে যখন–তখন৷ কাজেই সাবধান’’ বলছেন সুজয়বাবু।
বদভ্যাস পাল্টান
•অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকলে ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়ে৷ নিয়মিত এমন হলে রোগের সূচনা হতে পারে৷ কাজেই সময়ে খাওয়া–দাওয়া করুন৷
–––––––––––––––––––
দুপুরে ১০–১৫ মিনিট একটু ঘুমিয়ে নিলে যেখানে ক্লান্তি কমে, বিকেলে কাজের উৎসাহ বাড়ে, সেটাই দু–এক ঘণ্ঢা পার করে দিলে বিপদ হয়৷ বাড়ে ডায়াবিটিসের আশঙ্কা৷
–––––––––––––––––––
•সুস্থ জীবনের শত্রু হল নাইট ডিউটি৷ মাত্র বছর খানেক টানা করলে ডায়াবিটিসের আশঙ্কা বাড়ে ১৭ শতাংশ, ৩–৯ বছর করলে ২৩ শতাংশ ও ১০ বছর পেরিয়ে গেলে ৪২ শতাংশের মতো৷ এর প্রধান কারণ মেলাটোনিন হরমোনের ক্ষরণ কমে যাওয়া, যার পরিণতিতে ইনসুলিন ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না বলে সমস্যা হয়৷ এ বিপদ এড়াতে ঘুমোনোর আধ ঘণ্টা আগে ডাক্তারের পরামর্শমতো মেলাটোনিন খান৷
সুস্থ থাকতে পর্যাপ্ত ঘুমান।
আরও পড়ুন: ডায়াবিটিসকে রুখে দিতে চাইলে এ সব অভ্যাস রপ্ত করুন আজ থেকেই
•নরম পানীয়তে থাকে কর্ন সিরাপ, যা নিয়মিত খেলে রক্তে ফ্রুকটোজের পরিমাণ বাড়ে৷ তার হাত ধরে ওজন বেড়ে সূচনা করতে পারে বিপদের৷ প্যাকেটের ফলের রসেও থাকে চিনি৷ নিয়মিত খেলে রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়তে পারে৷ কমতে পারে ইনসুলিনের কার্যকারিতা৷
–––––––––––––––––––––––––––––––––
ব্রাউন সুগার, মধু বা গুড়ের ক্যালোরি চিনির চেয়ে কম৷ কাজেই মিষ্টি খেতে ইচ্ছে হলে চিনির বদলে মাঝেমধ্যে এ সব খেতে পারেন৷ খুব ইচ্ছে হলে চিনিও খেতে পারেন এক–আধ সময়৷
–––––––––––––––––––
•আলুর যত বদনাম, তত খারাপ সে নয়৷ ১০০ গ্রাম আলুতে যেখানে আছে ১০০ ক্যালোরি, ১০০ গ্রাম চাল–আটায় ৩৪০ ক্যালোরি আছে৷ তার উপর আলুতে আছে ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড, যা সুগার কমাতে সাহায্য করে৷ তবে এর আবার গ্লাইসিমিক ইনডেক্স বেশি, অর্থাৎ খেলে চট করে সুগার বেড়ে যায়৷ কাজেই খেতে হয় অল্প করে, খোসা সমেত বা অন্য সবজির সঙ্গে মিশিয়ে৷ ভেজে তো একেবারেই নয়৷ গাদা খানেক আলুসেদ্ধ খাওয়াও ঠিক নয়৷
•রক্তচাপ বেশি থাকলে কফি কম খান৷ কারণ রক্তচাপ বেশি হলে ডায়াবিটিসের আশঙ্কা এমনিই বাড়ে, তার উপর কফি খাওয়ার ফলে গ্লুকোজের বিপাক ক্রিয়ায় গোলমাল হলে তা আরও বাড়বে৷
•রক্তচাপ বাড়ানোর মূলে ধূমপানের বিরাট অবদান৷ তার হাত ধরে ডায়াবিটিস হওয়ার ও তার জটিলতা বাড়ার আশঙ্কা থাকে৷ কাজেই এই অভ্যাসটি ত্যাগ করুন৷
•নিয়মিত এক ঘণ্টা টানা টিভি দেখলে ডায়াবিটিসের আশঙ্কা বাড়ে প্রায় ৩.৪ শতাংশ৷ সারাদিন এতে মশগুল থাকলে ওজন ও ভুঁড়ি বাড়ার হাত ধরে আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়৷
সোফায় বসে টানা টিভি দেখলেও বিপদ হতে পারে।
আরও পড়ুন: ডায়াবিটিসে প্রয়োজন পরিবারের সহায়তা
অতএব
•সকালে ভাল করে খেলে শরীর তৃপ্ত হয়, কমে খাই খাই ভাব৷
•খাওয়ার পর ঘণ্টা খানেক হাঁটতে না পারলে রাত্রে কম করে খান৷ সন্ধ্যে ৭–৮টার মধ্যে খেয়ে শোওয়ার আগে খিদে পেলে এক কাপ দুধ ও দুটো ফাইবার বিস্কুট খান৷
•সতর্ক থাকুন ক্যালোরির ব্যাপারে৷
•ফলের রসের বদলে খান গোটা ফল৷ মিষ্টি পানীয় খান যথাসম্ভব কম৷
•চিনির বদলে আর্টিফিসিয়াল সুইইনার খাবেন না৷ কারণ এতে ব্রেন তৃপ্ত হয় না বলে মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছে বেড়ে যায়৷ তেমন হলে চা খান অল্প চিনি দিয়েই৷ দিনভর তাহলে সন্দেশ–রসগোল্লার মধ্যে তৃপ্তি খুঁজে বেড়াতে হবে না৷
•টিভি দেখুন কাজ করতে করতে৷ বিজ্ঞাপন বিরতিতে, সম্ভব হলে একটু ঘুরে নিন৷
•দুপুরে খাওয়ার পর ১০–১৫ মিনিটের বেশি ঘুমোবেন না৷
•৩০–৪০ মিনিট জোর কদমে হাঁটুন, দৌড়োন বা সাঁতার কাটুন, সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন৷ এতে মানসিক চাপ ও ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স, দুই–ই কমে৷
•রক্তচাপ বেশি থাকলে ধূমপান ও ওজনের ব্যাপারে বিশেষ সতর্ক থাকুন৷
ছবি সৌজন্য: পিক্সাবে।