ভালবাসা উদ্যাপন করার কি বিশেষ কোনও দিন থাকতে পারে? ছবি- সংগৃহীত
ভালবাসা উদ্যাপন করার যে বিশেষ কোনও দিন থাকতে পারে, এ কথা বিশ্বাস করতে চান না অনেকেই। আবার, নতুন নতুন ভালবাসার নাগাল পাওয়া যুগলদের মধ্যে ফেব্রুয়ারির ৭ থেকেই যেন চলতে থাকে সপ্তাহব্যাপী উৎসব। ভালবাসার বিশেষ দিনটির প্রস্তুতি পর্বও বলা যেতে পারে। প্রথম দিন গোলাপ দিয়ে, পরের দিন প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে, তৃতীয় দিন চকোলেট আর চতুর্থ দিন টেডি হাতে, পঞ্চম দিন পাশে থাকার অঙ্গীকার করে, ষষ্ঠ দিন একে অপরকে জড়িয়ে, শেষ দিন চুম্বন দিয়ে শেষমেশ বহু প্রতীক্ষিত ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’-র দরজায় পৌঁছনোর ঝক্কি কি কম?
ভালবাসার রং যে হেতু লাল, তাই ওই দিনটিতে লাল রঙের পোশাক, লাল গোলাপ, লাল বেলুন হাতে শহরের বিভিন্ন জায়গায় যুগলদের ভিড়ও জমবে। দিন জুড়েই চলবে দেদার ঘোরা-বেড়ানো, খাওয়াদাওয়া। কিন্তু কয়েক দশক আগে পর্যন্ত বাঙালির প্রেম দিবস মানে ছিল সরস্বতী পুজো। প্রথা ভেঙে হঠাৎ ঐতিহ্যবিলাসী বাঙালি বিদেশি ভালবাসার দিন উদ্যাপনে ব্রতী হল কেন?
ভালবাসার রং লাল হওয়ার নেপথ্যেও রয়েছে রক্তাক্ত এক ইতিহাস। পঞ্চম শতাব্দীর শেষের দিকে পোপ গেলাসিয়াস, ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন। ইতিহাসের পাতা ঘাঁটলেই জানা যায়, সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগের গাথা। রোমের বাসিন্দা, খ্রিষ্টধর্মের যাজক ও চিকিৎসক সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করেই উদ্যাপিত হয়েছিল এই দিনটি। সে দেশে নিষিদ্ধ হওয়া খ্রিষ্টধর্ম প্রচারের জন্য রোমের তৎকালীন সম্রাট দ্বিতীয়ত ক্লডিয়াস সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে কারাগারে বন্দি করার আদেশ দেন। সেখানে আটক থাকাকালীন দৃষ্টিহীন এক মহিলার চিকিৎসা করে চোখের দৃষ্টি ফিরিয়ে দেন তিনি। দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে তাঁর জয়গান। ভ্যালেন্টাইনের এই জনপ্রিয়তায় রাজা ক্লডিয়াস ক্রোধে ফেটে পড়েন এবং তাঁকে নিশ্চিহ্ন করতে মৃত্যুদণ্ড দেন। সেই দিনটি ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি।
তবে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন কোনও দিন ব্যক্তিপ্রেমের কথা প্রচার করেননি। ভালবাসাকে বেঁধে দেননি নারী-পুরুষের শরীরী ছন্দে। তাঁর প্রচার এবং প্রসার ছিল জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মানবপ্রেম নিয়ে। সেই ভালবাসাই বিবর্তনের পদচিহ্ন অনুসরণ করে হয়ে একেবারে ব্যক্তিগত পরিধিতে বাঁধা পড়ে গিয়েছে।