সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর আশঙ্কা কমানো যায় কী ভাবে? ছবি: সংগৃহীত
রবিবার পথদুর্ঘটনায় টাটা গোষ্ঠীর প্রাক্তন চেয়ারম্যান সাইরাস মিস্ত্রির মৃত্যুর পর থেকেই একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল। গাড়িতে সাতটি এয়ারব্যাগ থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে মৃত্যু হল সাইরাসের? ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সে প্রশ্নের খানিকটা উত্তর দিল। তার সঙ্গে ফের উঠে এল সিটবেল্ট ব্যবহারের গুরুত্বের প্রসঙ্গ।
ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, মহারাষ্ট্রের পালঘরের কাছে ওই দুর্ঘটনার ফলে মাথা এবং শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে গুরুতর আঘাত লাগে সাইরাসের। এই অবস্থাকে ডাক্তারি পরিভাষায় ‘পলিট্রমা’ বলে। এমন আঘাতের কারণে দুর্ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই মৃত্যু হয় যাত্রীর। পুলিশ জেনেছে, সাইরাসের সঙ্গে গাড়ির পিছনের আসনে বসেছিলেন সহযাত্রী জহাঙ্গীর পান্ডোলে। রিপোর্ট বলছে, জহাঙ্গীরের মৃত্যুর কারণও এক।
পুলিশের দাবি, পালঘরের পর ২০ কিলোমিটার রাস্তা মাত্র ন’মিনিটে অতিক্রম করেছিল সাইরাসদের গাড়ি। অর্থাৎ, ঘণ্টায় প্রায় ১৩৫ কিলোমিটার বেগে চলছিল গাড়িটি। তার পরই ডিভাইডারে ধাক্কা লাগে।
পিছনে বসা দুই আরোহী সিটবেল্ট পরেননি বলে অনুমান পুলিশের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যতই এয়ারব্যাগ থাকুক, সিটবেল্ট না পরা থাকলে বিপদের আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়। আচমকা ব্রেক কষলে বা ধাক্কা লাগলে গাড়ি থেমে গেলেও জাড্যের কারণে সামনের দিকে এগিয়ে যায় যাত্রীদের শরীর। এমন সময়ে কোনও যাত্রীর আঘাত লাগলে তা প্রাণঘাতী হতে পারে।
সাইরাস মিস্ত্রি এবং তাঁর সহযাত্রী জহাঙ্গীরের মৃত্যু ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল সিটবেল্টের গুরুত্ব। ছবি: প্রকৃতি
‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো’র তথ্য বলছে, ভারতে সড়ক দুর্ঘটনায় গত বছর দেড় লক্ষেরও বেশি মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, চার চাকার গাড়ির ক্ষেত্রে যাত্রীদের প্রাণ বাঁচাতে পারে সিটবেল্ট। সিটবেল্ট পরা থাকলে আকস্মিক ধাক্কা বা ঝাকুনির প্রথম অভিঘাত এসে পরে কাঁধ ও নিতম্বে। মানবদেহের এই দুই অঙ্গই সবচেয়ে বেশি অভিঘাত সহ্য করতে পারে। তাই দুর্ঘটনা ঘটলেও মাথা, ঘাড়, মেরুদণ্ড কিংবা অন্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলি বড় আঘাতের থেকে রক্ষা পায়। কমে প্রাণ হারানোর আশঙ্কা। পিছনের আসনে বসলেও দুর্ঘটনার সময়ে দেহ যদি সামনে গিয়ে ধাক্কা খায়, তবে গুরুতর চোট লাগতে পারে। দেহের ভিতরে শুরু হতে পারে প্রবল রক্তক্ষরণ।
এখনও ময়নাতদন্তের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট আসা বাকি। তবে প্রাথমিক তদন্তের তথ্য ঘেঁটে অনেকেরই মনে হচ্ছে, দুর্ঘটনায় শিল্পকর্তা সাইরাস মিস্ত্রি এবং তাঁর সহযাত্রী জহাঙ্গীরের মৃত্যু ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল সিটবেল্টের গুরুত্ব।