দিলীপ ঘোষ গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
কখনও কাউকে ‘রগড়ে দেব’ বলে হুমকি দেন! কখনও কাউকে বলেন ‘রিজেক্টেড মাল’! তিনি এত বেশি কথা বলেন যে, সম্প্রতি মুখে কুলুপ আঁটতে বলে দিলীপ ঘোষকে চিঠি দিয়েছে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কিন্তু খুব একটা লাভ হয়নি তাতে। তাঁকে ‘সেন্সর’ করার প্রসঙ্গেও দিলীপ জোর গলায় বলেন, ‘‘এখনও আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি। কই, কেউ তো বাধা দেয়নি!’’
একাধিক বার তির্যক মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন দিলীপবাবু। তা-ও কেন এত কথা বলেন দিলীপ? তিনি নিজে অবশ্য এ বিষয়ে একদমই মাথা ঘামান না। প্রশ্ন করলে তাঁর সটান উত্তর, ‘‘মানুষ আমাকে বিরোধী নেতা বানিয়েছে। মানুষ যে ভাষায় কথা শুনতে চান, আমি সেই ভাষায় কথা বলি। আমি চিরকালই সংযত। যতটুকু দরকার, তার চেয়ে বেশি কথা বলি না।’’ দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার যে অভিযোগ উঠেছে, তাকেও আমল দিতে চাননি বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি। তাঁর সাফ কথা, ‘‘এ সব নিয়ে ভাবার জন্য দলে লোক আছে। আমার ভাবার প্রয়োজন নেই!’’
কিন্তু মনোবিদরা এই নিয়ে কী ভাবেন? কেন কেউ বেশি কথা বলে ফেলেন? কোনটা বলা উচিত, কোনটা নয়, তার বিচারবোধ যাঁদের কাজ করে না, তাঁদের কি কোনও রকম সমস্যা থাকে? এ প্রসঙ্গে মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘কেউ কেন বেশি কথা বলেন, তার কারণ ব্যক্তি বিশেষে আলাদা হতে পারে। যে কোনও মানুষের আচরণ বুঝতে গেলে তাঁর বড় হওয়ার ইতিহাস, প্রাক অভিজ্ঞতার কথা জানার প্রয়োজন আছে। হয়তো কেউ দেখেছেন বেশি কথা বলেই আগে তাঁর লাভ হয়েছে। কারও হয়তো বেশি কথা বলাটাই কোনও পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ার রাস্তা, তেমন অভি়জ্ঞতাই হয়তো তার আগেও হয়েছে। কে কোন বিষয়ের প্রভাবে বেশি কথা বলছেন, তা এ ভাবে বলা মুশকিল।’’
দিলীপ ঘোষ অবশ্য কেন বেশি কথা বলেন, তার অনেক কারণ হতে পারে। অনেকেই মনে করেন, তিনি তাঁর মনের কথা স্পষ্ট ভাবে বলতে পছন্দ করেন। কাউকে খুশি করা বা বেশি কৌশলী, অতি সাবধানি হওয়া তাঁর ব্যক্তিত্বের সঙ্গেই বেমানান। লোকে কী ভাবল, বা কার চোখে তিনি মন্দ হলেন, তা নিয়ে খুব একটা বিচলিত হন না তিনি। আবার অন্য এক দল মনে করেন, দিলীপ ঘোষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচের মতো পাওয়ার প্লে-তেই বেশি রান করে নেওয়ায় বিশ্বাসী। তাই সাত সকালে রোজ তিনি কিছু না কিছু বক্তব্য রেখে বসেন। সেই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া দিতেই বাকি দিনটা বেরিয়ে যায় বাকি রাজনীতিবিদদের। তাই সপ্রতিভ কথা বলা প্রচারের আলোয় থাকার সহজতম ফিকির দিলীপের।
অনুত্তমা মনে করালেন, ‘‘বেশি কথা মানেই অবান্তর বা অপ্রয়োজনীয় না-ও হতে পারে। কথা নিয়ে কথা ওঠে যখন সে কথার প্রভাব বা পরিণতিতে অন্যদের মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি হয়।’’ সেই সমস্যা সৃষ্টি করাই দিলীপ ঘোষের অন্যতম অ্যাজেন্ডা, হয়তো নয়!
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।