পোশাকের সঙ্গে মানাচ্ছে তো বা হেয়ারস্টাইলের সঙ্গে... সানগ্লাস বা রোদচশমা কেনার সময় অধিকাংশ ক্রেতার মাথায় এই কথাগুলোই ঘোরে। কিন্তু সানগ্লাস কি শুধুই ফ্যাশন অ্যাকসেসরিজ়? “সানগ্লাস আমরা ব্যবহার করি সূর্যের আলট্রা ভায়োলেট রে থেকে নির্গত ব্লু রে থেকে চোখ বাঁচানোর জন্য। ব্লু রে কর্নিয়ার বেশ ক্ষতি করে। তাই দীর্ঘদিন যাঁরা খালি চোখে রোদে অনেকক্ষণ কাজ করেন তাঁদের দ্রুত ছানি পড়ে। আমাদের মতো ট্রপিকাল দেশে কম বেশি সকলেরই ছানি পড়ে, কিন্তু নিয়মিত সানগ্লাস পরলে ছানি পড়ার গতিকে কিছুটা কম করা যায়,” বললেন চক্ষুবিশেষজ্ঞ ডা. সুমিত চৌধুরী। শুধুমাত্র বাইরে বেরোলেই প্রয়োজন, তাই দাম দিয়ে নামী ব্র্যান্ডের সানগ্লাস কেনার মানসিকতা অনেকেরই নেই। তাঁরা পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে পরার জন্য একাধিক ডিজ়াইনের সানগ্লাস কেনেন মানের বিচার না করে। এতে কিন্তু হিতে বিপরীত হয়।
সানগ্লাস কেনার সময়
• রেডিমেড সানগ্লাস জ়িরো পাওয়ারের হয়। কিন্তু বেশ কিছু সানগ্লাস পরলে মালুম হয় পাওয়ার আছে। ‘‘কম দামি সানগ্লাসে মানের সঙ্গে সমঝোতা করা হয়। অধিকাংশ সময়ে স্মুদ সারফেসড গ্লাস থাকে না। সারফেস আনইভন হওয়ার জন্য সানগ্লাস পরে হাঁটার সময়ে রাস্তা উঁচুনিচু মনে হয়, হাঁটতে গিয়ে টাল খেতে হয়। তখন মনে হতে পারে, সানগ্লাসে পাওয়ার আছে। আসলে কিন্তু তা নয়। বেশিরভাগ সানগ্লাস জ়িরো পাওয়ারের হয়। নামী ব্র্যান্ডের সানগ্লাসে এই সমস্যা থাকে না,’’ বললেন ডা. চৌধুরী। দীর্ঘদিন এ ধরনের সানগ্লাস পরলে চোখের মাসল ও দৃষ্টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই সানগ্লাস কিনুন প্রতিষ্ঠিত চশমা প্রস্তুতকারকদের কাছ থেকে।
• রোদচশমা কিনতে হবে দিনের বেলা। কেনার আগে সানগ্লাস পরে দোকানের বাইরে এসে অবশ্যই পরখ করে নেবেন আপনার চোখ কতটা ডার্ক গ্লাসে স্বচ্ছন্দবোধ করছে। সেটা পরে হেঁটে দেখুন, মাটির দিকে তাকান, একটু উঁচু-নিচু জায়গা দিয়ে হাঁটুন। পরখ করে নিন আপনার দেখতে কোনও সমস্যা হচ্ছে কি না। ব্যবহার করতে করতেও স্ক্র্যাচ পড়ে, সে ক্ষেত্রে সানগ্লাস বদলে ফেলুন। স্ক্র্যাচের ফলে চশমায় পড়া আলো ছড়িয়ে যায়, যা চোখের পক্ষে ভাল নয়।
• যাঁদের চোখে পাওয়ার আছে তাঁরা অবশ্যই পাওয়ার দিয়ে সানগ্লাস তৈরি করিয়ে নিতে পারবেন। চশমার উপরে আলাদা ক্লিপ করে টিন্টেড গ্লাস লাগিয়ে নিতে পারেন। রোদ না থাকলে প্রয়োজনে সেই গ্লাস উপরে তুলে দিন।
• সানগ্লাস কেনার সময় দেখে নেবেন ১০০ শতাংশ ইউভি রে প্রোটেকশন দিচ্ছে তো। অনেকেরই ধারণা, রোদচশমার কাচ যত ডার্ক হবে, ইউভি প্রোটেকশন তত মজবুত হবে। ইউভি প্রোটেকশনের সঙ্গে লাইট বা ডার্ক কালার্ড গ্লাসের কোনও সম্পর্ক নেই।
• “পাহাড়ে গেলে সানগ্লাস মাস্ট, বিশেষ করে বরফের উপর। বরফের উপর সূর্যের আলোর প্রতিফলনের ফলে যে আলো নির্গত হয়, তা কর্নিয়ার ক্ষতি করে। তাই দেখা যায়, বেড়াতে গিয়ে যাঁরা খালি চোখে বরফের উপর ঘোরাঘুরি করেন সন্ধেবেলা তাঁদের চোখ জ্বালা করছে,” বললেন ডা. চৌধুরী। শুধু পাহাড়ে নয় যাঁরা নিয়মিত বোটিং করেন বা লং ড্রাইভে যান তাঁদের জন্য ইউভি রে প্রোটেকটেড পোলারয়েড সানগ্লাস উপযুক্ত। বরফ বা জলের উপরে সূর্যের আলোর প্রতিফলনের ফলে নির্গত আলোর তেজ কমিয়ে দেয় পোলারয়েড লেন্স। ফলে চোখে বেশ আরাম লাগে, শীতলভাব অনুভূত হয়।
• একেবারে চোখের মাপে নয়, ওভারসাইজ়ড গ্লাস পরলে ভাল। এতে চোখের নীচে কালি পড়ে না, দ্রুত রিঙ্কল পরাও কিছুটা আটকানো যায়।
• ছোটদের জন্য সানগ্লাস কেনার আগে চশমাটি পরখ করে নিন। মেলার দোকান, ট্রেন, বাস থেকে ছোটদের জন্য সানগ্লাস কিনবেন না।
নিয়মিত পরিষ্কার করুন
সানগ্লাস পরিষ্কার জলে ধুয়ে নিন। ভাল হয়, এক ফোঁটা লিকুইড সোপ বা ডিশ ওয়াশার লিকুইড সোপ ব্যবহার করলে। গোটা ফ্রেমটাই ভাল করে ধোবেন। মোছার জন্য লিন্ট ফ্রি কাপড় ব্যবহার করুন, পেপার ন্যাপকিন নয়। চটজলদি মুখের ভিতরের বাষ্প দিয়ে কাপড় দিয়ে সানগ্লাস পরিষ্কার করবেন না। লেন্স ক্লিয়ার স্প্রেও পাওয়া যায়, কিন্তু সেটা ব্যবহার করার আগে আপনার সানগ্লাসের উপযুক্ত কি না দেখে নিন। সানগ্লাস কেনার সময়ই অভিজ্ঞ বিক্রেতার কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন পদ্ধতিগুলো।
চোখে পাওয়ার থাক বা না থাক প্রত্যেকেরই রোদে বেরোনোর আগে সানগ্লাস পরা ভাল। ছোটদেরও এই অভ্যেস করানো জরুরি। শর্ত একটাই, রোদচশমাটি উপযুক্ত হতে হবে। যাঁদের গ্লকোমা আছে, সাদা-কালো রঙের মধ্যে তফাত করতে সমস্যা হয় তাঁরা সানগ্লাস ব্যবহার করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। মনে রাখবেন, সানগ্লাস পরে সরাসরি সূর্যের দিকে তাকাবেন না, এতে রেটিনার ক্ষতি হতে পারে। সূর্যগ্রহণের সময় অনেকেই এই ভুলটা করেন। এ ক্ষেত্রে কোনও সানগ্লাসই চোখ রক্ষা করতে পারবে না। সূর্যগ্রহণ দেখার জন্য আলাদা ধরনের সানগ্লাস প্রয়োজন।