শারদীয় পুজোকে ‘অকালবোধন’ বলা হয়। ছবি: সংগৃহীত
পুজোর শুরুতেই হয় বোধন। অন্য দেবদেবীর পুজোর বোধন অত গুরুত্ব না পেলেও বাঙালির কাছে দুর্গার বোধন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আসলে এর সঙ্গে মিশে রয়েছে অনেক রীতি আর বিশ্বাস।
‘বোধন’ কথার মানেই হচ্ছে জাগরণ। মানে দেবীর নিদ্রাভঙ্গের উদ্যোগ। হিন্দু বিশ্বাস মতে বছরকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়। একটি দক্ষিণায়ন এবং অপরটি উত্তরায়ন। দক্ষিণায়নে দেবতাদের রাত্রি। আর উত্তরায়ন মানে দিন। সেই দিনেই দেবীর বোধন। বাংলায় দেবীর বোধনের সঙ্গে আবার রামায়ণের যোগ রয়েছে। বলা হয়, রাবণের বিনাশের জন্য রামচন্দ্র দেবীর আরাধনা করেছিলেন শরৎকালে। সেটা নিয়ম অনুযায়ী ‘অকাল’। তাই এই পুজোকে ‘অকালবোধন’ বলা হয়। শারদীয় পুজোয় ষষ্ঠীতে বোধন-মন্ত্রে সে উল্লেখও রয়েছে।
মন্ত্রে বলা হয়েছে— ‘রাবণস্য বধার্থায় রামাস্যানুগ্রহায় চ। অকালে ব্রহ্মণা বোধো দেব্যাস্তয়ি কৃতঃ পুরা। অহমপ্যাশ্বিনে ষষ্ঠাং সায়াহ্নে বোধয়ামি বৈ।’ অর্থাৎ, রাম রাবণবধের জন্য বিল্ববৃক্ষে অকালে দেবীর বোধন করেছিলেন। আমিও আশ্বিন মাসে শুক্লাষষ্ঠীর সায়াহ্নে দেবীর বোধন করছি। মন্ত্রের শেষাংশে বলা হয়, ‘যথৈব রামেণ হতো দশাস্য শত্রুন্ বিনিপাতয়ামি।।’ যার অর্থ, রাম যেমন তাঁর শত্রু রাবণকে বধ করেছিলেন তেমন আমি যেন আমার শত্রু বিনাশ করতে পারি।
শাস্ত্রবিদ নবকুমার ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘অনেক ভাববেন শত্রু বিনাশ করতে চাইব কেন? আমার তো কোনও শত্রু নেই! আসলে আমাদের মনের ভিতরেও অনেক আঁধার থাকে। সে-ও আমাদের শত্রু। তারও বিনাশের জন্য আমাদের বোধনে প্রার্থনা করতে হয়। তাতেই হয় মঙ্গল।’’