প্রতীকী ছবি।
ওজন কমানোর কথা ভাবলে প্রথমেই আমাদের মাথায় আসে কার্ডিও এক্সারসাইজের কথা। ওয়েট ট্রেনিং বিশেষ গুরুত্ব পায় না। কারণ, ক্যালোরি ঝরানোর জন্য বিশেষজ্ঞরা ওয়েট ট্রেনিং-এর উপদেশ দেন না। তাই ওয়েট ট্রেনিং প্রোগ্রাম কতটা গুরুত্বপূর্ণ সে বিষয়ে অনেকেরই ধারণা নেই। আমরা মনে করি শুধু পেশীবহুল চেহারা বানাতে হলেই ওয়েট ট্রেনিং প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, তাড়াতাড়ি ফ্যাট ঝরানোর জন্য কার্ডিও খুবই কার্যকর। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে মেদহীন চেহারা ধরে রাখার জন্য ওয়েট ট্রেনিং-এর কোনও বিকল্প নেই। পেশী মেদ ঝরাতে সাহায্য করে। এই কথাটা প্রায়ই শোনা যায়। প্রকৃতপক্ষে পেশী আমাদের শরীরের রেস্টিং মেটাবলিক রেট বাড়িয়ে দেয়। শরীরে মেদ জমার জন্য কোনও এনার্জির প্রয়োজন হয় না। একবার বসে গেলে তা যতক্ষণ না আপনি এনার্জির উত্স হিসেবে ব্যবহার করছেন তা শরীরে থেকেই যায়। কিন্তু পেশীর ক্ষেত্রে বিষয়টা একেবারেই আলাদা।
যুক্তি
সঠিক ডায়েট ও ট্রেনিংয়ের সাহায্যে সকলের শরীরেই এক বছরে ৫ পাউন্ড পর্যন্ত পেশীর গঠন হতে পারে। যা ধরে রাখার জন্য প্রতি ১ পাউন্ড পেশীর প্রতি দিন ৪০-৬০ ক্যালোরি এনার্জি ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। অর্থাত্, আমাদের মেটাবলিজম এমন হওয়া উচিত যা প্রতি দিন গড়ে ৫০ ক্যালোরি পর্যন্ত খরচ করবে। ৫ পাউন্ড ধরে রাখার জন্য তাই প্রতি দিন ২৫০ ক্যালোরি খরচ করা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: মাইগ্রেনের ব্যথা হলেই এগুলো করুন, আরাম পাবেন
সমস্যা
পুরুষরা পেশীবহুল চেহারা পছন্দ করেন। কিন্তু মহিলারা নিজেদের পেশীবহুল দেখতে পছন্দ করেন না। ৫ পাউন্ড ফ্যাট শরীরে বাড়লে বা কমলে কতটা পার্থক্য হতে পারে তা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু ৫ পাউন্ড পেশী বাড়লে বা কমলে কেমন হবে চেহারা সে সম্পর্কে আমাদের বিশেষ ধারণা নেই। ফ্যাটের তুলনায় পেশীর ঘনত্ব অনেক বেশি।
ওয়েট লিফটিং ও কার্ডিও
ক্যালোরি ঝরানোর জন্য কার্ডিও খুবই প্রয়োজনীয়। কিন্তু কার্ডিও শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ক্যালোরি বার্নিং প্রক্রিয়াও শেষ হয়ে যায়। কিন্তু ওয়েট ট্রেনিং-এর এক ঘণ্টা পরেও মেটাবলিজম রেট বেশি থাকে। আবার ওয়েট ট্রেনিং-এর ফল যে পেশী শরীরে গঠিত হয় তা ক্যালোরি ঝরাতেও সাহায্য করে।
আরও পড়ুন: কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে খেতে পারেন এই ৭ জুস
ওয়ার্কআউট শেষ করার পরও এই ক্যালোরি বার্নিং চলতে থাকাকে বলা হয় এক্সেস পোস্ট-এক্সারসাইজ অক্সিজেন কনসাম্পশন। ওয়েট ট্রেনিং-এর পর শরীরে বেশি পরিমাণ অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। যা আরও বেশি ক্যালোরি ঝরাতে সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ওয়েট ট্রেনিং মেটাবলিজমের মাত্রা ৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়়াতে সাহায্য করে। যার প্রভাব পুরুষদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। পুরুষরা ওয়েট ট্রেনিং-এর সাহায্যে এক দিনে যেখানে ১৪০ ক্যালোরি পর্যন্ত ঝরাতে পারেন, সেখানে মহিলাদের ক্ষেত্রে এক দিনে মাত্র ৫০ ক্যালোরি ঝরানো সম্ভব।
আবার ঠিক কতটা ক্যালোরি কেউ এক্সারসাইজ করার সময় ঝরাতে পারবেন তা নির্ভর করে শরীরের মাপ, কী ধরনের এক্সারসাইজ তিনি করছেন এবং কতক্ষণ ধরে করছেন তার ওপর। তুলনা করলে দেখা যাবে, একই সময় ধরে এক্সারসাইজ করলে কার্ডিও ওয়েট ট্রেনিং-এর তুলনায় বেশি ক্যালোরি ঝরাতে সাহায্য করে। কিন্তু ওয়েট ট্রেনিং দীর্ঘ সময় ধরে মেটাবলিজমের গতি ধরে রাখতে সাহায্য করে। এমনকী যখন আমরা কিছুই করছি না তখনও ওয়েট ট্রেনিং-এর প্রভাবে ক্যালোরি কমতে থাকে। তাই পেশী গঠন করতে সময় বেশি লাগলেও তার উপকারও দীর্ঘ সময় ধরে পাওয়া যায়।