weather

Weather forecast: খারাপ আবহাওয়ার ভাল দিক, সাধে কি দাদা বলছেন, বাপি বাড়ি যা!

হাওয়া অফিস নিয়ে এখন আর রসিকতা চলে না। ঝড়বৃষ্টির খোঁজ তারা নেহাত মন্দ দেয় না। বিপদের আভাস আগে থেকে পাওয়া যায় এখন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২২ ১৮:৫৩
Share:

প্রযুক্তির উন্নতি হওয়ায় কম্পিউটারের গতি অনেক বেড়েছে। তাই পরিসংখ্যান এবং তথ্য নিয়ে অনেক দ্রুত কাজ করা যাচ্ছে। ছবি: রয়টার্স

বৃষ্টি হবে? হলে কখন? কতটা?

Advertisement

ঝড় হবে? হলে কখন? কতটা গতিবেগে?

একদা হাওয়া অফিস নিয়ে বিবিধ রসিকতা চালু ছিল বাংলায়। মেঘমুক্ত আকাশের পূর্বাভাস থাকলে ছাতা নিয়ে বেরোনো মাস্ট! বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকলে রোদ ঝলমলে দিনে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা বাঁধা! ইত্যাদি।

Advertisement

কিন্তু সেদিন এখন গিয়েছে। এখন আবহাওয়া অফিসকে আর কেউ লঘু করে নেন না। এখন আকাশে স্থিত উপগ্রহের ছবিতে স্পষ্ট ধরা পড়ে, কোথায় রয়েছে আমপান, কোথায় ফণী। কোন পথে এগোচ্ছে ঘূর্ণিঝড়। ঠিক কোন এলাকায় আছড়ে পড়বে। এবং কখন। ধরা পড়ে, কোথায় প্রবল বৃষ্টিতে কোন এলাকা বানভাসি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। সল্টলেকের সেক্টর ফাইভের আইটি কর্মী যেমন সেই পূর্বাভাসের উপর ভরসা করেই কাজে যাওয়ার আগে গাড়িতে বড় ছাতা রাখেন, তেমনই সেই পূর্বাভাসের উপর ভরসা করে সুন্দরবনের মৎস্যজীবী ঠিক করেন, তিনি সে দিন মাঝসমুদ্রে জাল ফেলতে যাবেন কি না।

যেমন মঙ্গলবার কলকাতা শহর সকাল থেকে উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করেছে। প্রশ্ন একটাই— মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইডেনে আইপিএলের প্লে-অফ ম্যাচের সময় কি বৃষ্টি হবে? তীব্র কালবৈশাখী কি উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে ইডেনের যাবতীয় আচ্ছাদন? আদৌ খেলা হবে তো! দুপুরে এক পশলা প্রবল বৃষ্টি সেই আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু সেই মেঘ কেটে গিয়ে রোদ্দুর উঠেছে। আলিপুরের আবহাওয়া দফতর পূর্বাভাস দিয়েছে— ম্যাচ চলাকালীন কালবৈশাখীর সম্ভাবনা নেই। মনে রাখুন, নেই। ‘সম্ভবত নেই’ নয়। বৃষ্টি হলেও খেলা হবে। নইলে কি আর সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় মঙ্গলবার দুপুরেই বুক ঠুকে বলতে পারতেন, ‘‘ম্যাচ না হওয়ার কোনও কারণ নেই। বৃষ্টি থামলেই খেলা শুরু হবে। ভাল ত্রিপল দিয়ে মাঠ ঢাকা আছে।’’ প্রসঙ্গত, কখন মাঠ ঢাকতে হবে, তার আভাসও কিন্তু পাওয়া গিয়েছে হাওয়া-দফতরের পূর্বাভাস থেকেই।

খারাপ আবহাওয়ার এই হল ভাল দিক। আধুনিক প্রযুক্তি যা এনে দিয়েছে নাগরিক জীবনে।

আমপান থেকে অশনি— সম্প্রতি বহু ঘুর্ণিঝড়ের উৎস, গতিপথ, শক্তি সঠিক ভাবে নির্ণয় করে আগেই সতর্ক করে দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। সেই মতো প্রস্তুতি নিতে পেরেছে সরকারও। এই উন্নতির কারণ কী?

আবহাওয়া দফতরের পূর্বাঞ্চলের অধিকর্তা সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘আবহাওয়া পূর্বাভাসের মূল স্তম্ভ হল পর্যবেক্ষণ। এখন পর্যবেক্ষণ অনেক বেড়েছে, সেটা সারফেস লেভেলে হোক বা স্যাটেলাইটে। এই পর্যবেক্ষণের নেটওয়ার্ক আমরা অনেকটা বড় করতে পেরেছি।’’

ঠিকই। সারা রাজ্যে পর্যবেক্ষণ (অবজার্ভেশন) কেন্দ্রের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। সমস্ত রাজ্যে ‘অটোম্যাটিক ওয়েদার স্টেশন’ বসেছে। প্রযুক্তির উন্নতি হওয়ায় কম্পিউটারের গতি অনেক বেড়েছে। তাই পরিসংখ্যান এবং তথ্য নিয়ে অনেক দ্রুত কাজ করা যাচ্ছে। সঞ্জীবের কথায়, ‘‘যে মডেলগুলো নিয়ে আমরা কাজ করি, তার থেকে তথ্য অনেক দ্রুত বার করা যাচ্ছে।’’ তবে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ গাণিতিক পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ (নিউমারিক্যাল ওয়েদার প্রেডিকশন)। আগে ‘সিনোপটিক’ পদ্ধতিতে কাজ হত। যাতে এক-দু’দিনের বেশি পূর্বাভাস দেওয়া যেত না। আর সেই পূর্বাভাস করতে হত হাতেকলমে। যা সময়সাপেক্ষ। কিন্তু গাণিতিক বিশ্লেষণে কাজ হয় আরও লক্ষ লক্ষ পরিসংখ্যান নিয়ে। পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পাওয়ায় তা বিপুল ভাবে পাওয়া সম্ভব হচ্ছে। সেই পরিসংখ্যান জড়ো করে দ্রুত বিশ্লেষণ করা যায় যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং প্রযুক্তির উন্নতির জন্য।

ছবি: রয়টার্স

আবহাওয়ার পূর্বাভাস করার জন্য সবচেয়ে প্রথমে প্রয়োজন আমজনতার কাছে তথ্য পৌঁছে দেওয়া। সেই চেষ্টাই এখন প্রতিনিয়ত করে আবহাওয়া দফতর। নিজেদের ওয়েবসাইট, ফেসবুক-টুইটার এমনকি, প্রত্যন্ত গ্রামে যাঁদের স্মার্টফোন নেই, তাঁরাও যাতে খবরের কাগজ, টেলিভিশন বা রেডিয়োতে দুর্যোগের পূর্বাভাস ঠিকঠাক পেয়ে যান, তা নিশ্চিত করতে এখন হাওয়া অফিস প্রত্যেক দিন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখে।

গত পাঁচ-সাত বছরে প্রচন্ড বৃষ্টি, প্রচন্ড গরম, তীব্র ঘুর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের দাপট অনেক বেড়েছে। ‘ডপলার রাডার’ আসার পর ঘুর্ণিঝড়ের সাধ্য নেই আচম্বিতে হাজির হওয়ার। উপগ্রহ চিত্রের মানও আগের তুলনায় উন্নত। সঞ্জীবের কথায়, ‘‘বিশ্বজুড়ে বায়ুমণ্ডল নিয়ে গবেষণা এবং তা নিয়ে জ্ঞানও অনেকটাই বেড়েছে। ফলে কোন পরিস্থিতিতে কী ধরনের বিপদের আশঙ্কা রয়েছে, তা বোঝা সহজ হয়ে গিয়েছে। তাই আবহাওয়া দফতরও এখন পূর্বাভাসের ধরন বদলে ফেলতে পেরেছে। শুধু ভারী বৃষ্টি হবে বলেই তারা হাত তুলে নেয় না। বরং আগাম সতর্ক করে দিতে পারে কোন পুর এলাকার কোথায় জল জমবে, কোথায় টিনের চাল উড়ে যাবে, আর কোথায় শস্যের কতটা ক্ষতি হবে।’’

ফলে?

ফলে জনতা সন্ধ্যা নামার আগে ইডেনমুখো হয়। আর সৌরভ বুক ঠুকে বৃষ্টিকে বলতে পারেন— ‘‘বাপি বাড়ি যা!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement