Vitamin E

যুদ্ধের দুই অস্ত্র

যে কোনও অসুখের মোকাবিলায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলাই আসল। শরীরে অনাক্রম্যতা বাড়াতে ঢাল হোক ভিটামিন ই আর তরোয়াল ভিটামিন সি ভিটামিন সি খুব ভাল বডি ক্লেনজ়ারের কাজ করে। যেহেতু অ্যাসকরবিক অ্যাসিড থাকে, তাই শরীরের টক্সিন বার করে দেয় সহজেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২০ ০১:৩২
Share:

সাম্প্রতিক এক কেস স্টাডি অনুযায়ী, নিউ ইয়র্কের একটি হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীর শরীরে ভিটামিন সি ইনজেকশন দেওয়ায় আশাব্যঞ্জক ফল মিলেছে। তাই চিকিৎসক ও ডায়াটিশিয়ানরাও রোজকার খাবারে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন। আর তার সঙ্গে যদি জুড়ে নেওয়া যায় ভিটামিন ই, তা হলে এই দুই ভিটামিন মিলে শরীরে অনাক্রম্যতা গড়ে তুলতে অনেকাংশেই সফল।

Advertisement

ভিটামিন সি ও ই যে ভাবে কাজ করে শরীর সুস্থ রাখে

Advertisement

• মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার বললেন, ‘‘রান্না করতে চাল, ডাল, মাছ, মাংস যেমন লাগে, তেমনই মশলাপাতি, নুন, হলুদও লাগে। না হলে রান্না সম্পূর্ণ হয় না। ভিটামিনের কাজও ঠিক তাই। এগুলি হল মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস। মূলত কার্বোহাই়ড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট দিয়েই আমাদের খাদ্যতালিকা তৈরি হয়। কিন্তু শরীরকে সুস্থ রাখতে এই মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস ভীষণ ভাবে জরুরি। বরং এরা ছাড়া চলবে না বলা যায়। এদের কাজটা বুঝতে গেলে আগে শরীরের কাজ বোঝা জরুরি।’’

• শরীর এক দিকে মানুষকে রোজ কাজ করার শক্তি যেমন জোগান দেয়। একই সঙ্গে নিজেকে সুস্থ রাখতেও শরীর নিজেই খেটে চলে। আর শরীরকে সুস্থ রাখতে যে সব পুষ্টিকর উপাদানের প্রয়োজন, তার মধ্যে অন্যতম ভিটামিন। বিশেষ করে ভিটামিন সি ও ই। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখতে প্রয়োজন অ্যান্টিবডি উৎপাদন ও তার ডেভেলপমেন্ট। এই কাজ সম্পাদন করে ভিটামিন সি এবং ই।

মনে রাখবেন

• রোজকার খাবার তালিকায় মরসুমি ফল রাখতে হবে। বিশেষ করে মুসাম্বি, পেয়ারা, আনারস জাতীয় ফল তো থাকবেই। কলাও খেতে হবে

• পাতিলেবুর রসও খেতে হবে রোজ। তবে গরম জলে নয়। মনে রাখতে হবে, উচ্চ তাপমাত্রায় ভিটামিন সি নষ্ট হয়ে যায়। তাই রুম টেম্পারেচারে রেখেই তা খাওয়া ভাল

• আমলকীও থাকবে খাদ্যতালিকায়। আমলকী কাঁচা চিবিয়ে খেতে পারলে সবচেয়ে ভাল। আমলকী কিন্তু ভিটামিন সি-তে ভরপুর থাকে

• ভিটামিন সি ও ই কো-এনজ়াইমের কাজও করে। তাই খাবার পরিপাকেও এদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

• ভিটামিন ই-র অভাবে ইমিউনিটি কমে যাওয়ার সঙ্গেই শ্রবণশক্তি কমে যাওয়ার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। অন্য দিকে অ্যালঝাইমার্সের মতো রোগ সারাতেও ভিটামিন ই কার্যকর।

• গর্ভাবস্থায় পরিমাণ মতো ভিটামিন ই গ্রহণ না করলে মিসক্যারেজ পর্যন্ত হতে পারে। আর গর্ভাবস্থায় মায়ের যদি ভিটামিন ই-র অভাব থাকে, তা হলে সেই সন্তানের অ্যানিমিয়া হওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়।

• ভিটামিন সি শরীরে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টসের জোগান দেয়। ফলে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে শরীরকে দূরে রাখতে সাহায্য করে এই ভিটামিন। অন্য দিকে ভিটামিন সি-র এই কাজকে ত্বরান্বিত করে ভিটামিন ই। অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের হাত থেকে কোষের মেমব্রেন, প্রোটিন ও ডিএনএ-কে রক্ষা করে ভিটামিন ই। ফলে কোষের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত হয়। শুধু করোনাই নয়, বাইরের কোনও ভাইরাসই সহজে শরীরকে আক্রমণ করতে পারে না। তাই অনেক চিকিৎসকই অতিমারির মোকাবিলায় শরীরে অনাক্রম্যতা বাড়াতে ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার বা খাদ্যতালিকায় এই ভিটামিনের জোগান দেয়, এমন খাবার রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন।

• ভিটামিন সি খুব ভাল বডি ক্লেনজ়ারের কাজ করে। যেহেতু অ্যাসকরবিক অ্যাসিড থাকে, তাই শরীরের টক্সিন বার করে দেয় সহজেই। কোষ্ঠ পরিষ্কার রাখতেও এটি উপকারী। তা ছাড়া ভিটামিন সি প্রয়োজনের চেয়ে বেশি হয়ে গেলেও সমস্যা নেই। শরীরে এই ভিটামিন সঞ্চিত হয় না। বরং অতিরিক্ত ভিটামিন বেরিয়ে যায়।

ভিটামিনদ্বয়ের উৎস

ডায়াটিশিয়ান প্রিয়া অগরওয়াল বললেন, ‘‘প্রত্যেক দিন ৭০-১০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি জরুরি শরীরের জন্য। খাবারের মাধ্যমে ভিটামিন সি ও ই-র জোগান তো পেয়েই যাবেন। না হলে ভিটামিন সি সাপ্লিমেন্ট নিলেও অনেকটা কাজ হয়। কিন্তু সাপ্লিমেন্টের মাধ্যমে ভিটামিন ই পরিমাণমতো পাওয়া যায় না। প্রত্যেক দিন একজন প্রাপ্তবয়স্কের ১৫ মিলিগ্রাম ও একজন শিশুর ৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই-র প্রয়োজন। তার জন্য খাবারে সানফ্লাওয়ার সিডস, অলিভ অয়েল, আমন্ড, চিনেবাদাম, আখরোট, ডিম সংযোজন করতে হবে। তবে বাদাম জলে ভিজিয়ে খেতে হবে। ভিটামিন সি-র জন্য অনেকেই সিট্রাস ফ্রুট খান বেশি। তবে ভিটামিন সি সবচেয়ে বেশি থাকে আমলকীতে। রোজ একটি কাঁচা আমলকী খেলে তার সমান উপকারিতা আর কিছুতে নেই।’’

রাজমা, ব্রকোলি, বাঁধাকপি জাতীয় আনাজপাতিতেও ভিটামিন ই থাকে। তাই তেলের মধ্যে হালকা করে নেড়ে এই ধরনের আনাজও খেতে পারেন। পাতিলেবু থেকে শুরু করে টম্যাটো ও ক্যাপসিকামেও ভিটামিন সি থাকে প্রচুর পরিমাণে। আর এই ধরনের আনাজ কাঁচাও খাওয়া যায়। এতে শরীরে ভিটামিনের জোগানও অব্যাহত থাকে।

সুস্থ থাকতে শর্করা, প্রোটিন, ফ্যাটের সঙ্গে ভিটামিন সি ও ই-ও অবশ্যই রাখতে হবে রোজকার খাদ্যতালিকায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement