বৃহস্পতিবার ‘মেডিকা সুপার স্পেশালিটি’ হাসপাতালের ক্যানসার সচেতনতা সংক্রান্ত আলোচনায় চিকিৎসকরা। —নিজস্ব চিত্র।
আগামী এক বছরে সারা দেশে ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা ১৫লক্ষ ছাড়িয়ে যেতে পারে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চের (আইসিএমআর) পরিসংখ্যান এমনটাই বলছে। ক্যানসারের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি এবং খরচসাপেক্ষ। ফলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চিকিৎসা করাতে গিয়ে বেগ পেতে হয় রোগী ও তাঁর পরিজনদের। কিন্তু ক্যানসার রোগের চিকিৎসকদের মতে ক্যানসার প্রতিরোধ ও চিকিৎসার জন্য যেমন সচেতনতা ও সময়মতো চিকিৎসা জরুরি, তেমনই টিকার মাধ্যমে মহিলাদের ‘সারভাইকাল ক্যানসার’ বা জরায়ুর মুখের ক্যানসার প্রতিরোধ সম্ভব বলে জানাচ্ছেন ক্যানসার চিকিৎসকেরা।
কিন্তু সচেতনতার অভাবের ফলে বেশির ভাগ যুবতী এবং মহিলা এই টিকা সম্পর্কে জানেন না। আবার ওই টিকার দামও তুলনামূলক ভাবে বেশি। ফলে বৃহস্পতিবারের অন্তর্বর্তী বাজেটে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের ‘সারভাইকাল ক্যানসার’ প্রতিরোধে প্রতিষেধক চালুর পরিকল্পনাকে সাধুবাদই জানাচ্ছেন শহরের ক্যানসার চিকিৎসকেরা।
ক্যানসারে আক্রান্ত মহিলাদের মধ্যে প্রতি আট মিনিটে এক জনের মৃত্যু হয় সারভাইকাল ক্যানসারের কারণে। পরিসংখ্যানগত ভাবেও সারভাইকাল ক্যানসার অন্যান্য ক্যানসারের থেকে এগিয়ে। বৃহস্পতিবার ‘মেডিকা সুপার স্পেশালিটি’ হাসপাতালের ক্যানসার সচেতনতা সংক্রান্ত আলোচনায় চিকিৎসকরা এ-ও মনে করিয়ে দেন যে, শুধু সারভাইকাল ক্যানসার নয়, ক্যানসারে আক্রান্ত মহিলাদের সিংহভাগই ভুগছেন ‘ব্রেস্ট ক্যানসারে’।
টিকার সঙ্গে ক্যানসার প্রতিরোধে সমান ভাবে দরকার সচেতনতা। ক্যানসারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে রোগ কোন স্তরে রয়েছে তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই যত দ্রুত রোগ ধরা যাবে, চিকিৎসার ক্ষেত্রে তত সুবিধা হবে বলে মত চিকিৎসকদের। ক্যানসারের চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় মনে করেন, ব্রেস্ট এবং সারভাইকাল ক্যানসারের সঙ্গে নিবিড় যোগ রয়েছে আর্থ-সামাজিক অবস্থার। এক্ষেত্রে ক্যানসারও বেশ ‘রাজনৈতিক’। সুবীরের মতে, ‘‘ছোট থেকে বেশি প্রোটিন বা ফ্যাটযুক্ত খাবার বা বেশি ওজনের মহিলাদের ব্রেস্ট ক্যানসারের সম্ভাবনা বেশি।’’ বেশি পরিমানে মাঘন, ঘি খাওয়ার ফলে হাই প্রোটিন এবং ফ্যাট-ইস্ট্রোজেন নামের হরমোন বাড়িয়ে দেয়, যা ব্রেস্ট ক্যানসার ডেকে আনতে পারে।
একই কথা মনে করেন চিকিৎসক অরুণাভ রায়ও। সার্বিক ভাবে ক্যানসারের বিস্তারে গ্রাম-শহরের মধ্যে খুব ফারাক না থাকলেও ব্রেস্ট এবং সারভাইকাল ক্যানসারের মধ্যে শহরের মহিলাদের মধ্যেই ব্রেস্ট ক্যানসারের প্রবণতা বেশি। ক্যানসারে আক্রান্ত মহিলাদের মধ্যে ৩০ থেকে ৩৫ জনই এই ক্যানসারে আক্রান্ত বলেও জানান অরুণাভ।
চিকিৎসকদের আরও পর্যবেক্ষণ— আর্থিক ভাবে পিছিয়ে-পড়াদের মধ্যে সারভাইকাল ক্যানসারের প্রবণতা বেশি। এ ক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাসের থেকেও গুরুত্বপূর্ণ পরিচ্ছন্নতা। বিশেষত, ঋতুস্রাবের সময় একই কাপড় বারবার ব্যবহার বা অপরিষ্কার কাপড় বা অন্য কিছু ব্যবহারের ফলে সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়তে পারে। শুধু মহিলাদের ক্ষেত্রেই নয়, নজর রাখতে হবে পুরুষদের ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার দিকেও। সুবীরের কথায়, ‘‘মহিলাদের নিজেদের প্রতি সচেতনতার সঙ্গে পুরুষ এবং মহিলাদের ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা সারভাইকাল ক্যানসার রুখতে পারে।’’ এই পরিস্থিতিতে ওজন যাতে না বাড়ে, তার জন্য সাধারণ এবং সুষম খাবার খাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন সুবীর।
কেন্দ্রীয় সরকারের অন্তর্বর্তী বাজেটে সারভাইকাল ক্যানসারের টিকার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করা হয়েছে বটে। কিন্তু বিদেশে অনেক আগে থেকেই এই টিকার ব্যাপক চল রয়েছে। দেশেও বেসরকারি ভাবে এই টিকা দেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে দু’ধরনের টিকা রয়েছে। একটি টিকার দু’টি ডোজ়ের দাম চার হাজার টাকার মতো। অপর একটি টিকার দাম প্রায় ন’হাজার টাকার কাছাকাছি। তবে চিকিৎসকদের বক্তব্য, এই টিকা সম্পর্কে বেশির ভাগ বাবা-মা সম্পর্কে অবহিত নন। এই টিকা যেহেতু বালিকাদের দেওয়া হয়ে থাকে, তাই শিশু চিকিৎসকদেরও এ বিষয়ে অভিভাবকদের এই টিকা সম্পর্কে অবহিত করার আবেদন জানান ক্যানসার চিকিৎসকরা।
আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি ‘বিশ্ব ক্যানসার দিবস’। ওই পুরো সপ্তাহ ধরে মেডিকার বিভিন্ন ক্যানসার চিকিৎসকেরা বিভিন্ন জেলায় সচেতনতা প্রচার করবেন ব্রেস্ট এবং সারভাইক্যাল ক্যানসার সম্পর্কে। ৪ তারিখে বহরমপুরে এবং কাঁথিতে সচেতনতা মিছিলও হবে।