কম বয়স থেকেই ধরা পড়তে পারে টাইপ টু ডায়াবিটিস। জীবনযাত্রায় বদল এনে সতর্ক থাকুন
diabetes

Diabetes: চিন্তা বাড়ায় টাইপ টু ডায়াবিটিস

একটা বয়সের পরে ব্লাড সুগার ধরা পড়ার ঘটনা আমাদের কাছে পরিচিত। তবে এই চেনা ছবিটা গত কয়েক বছরে বদলে গিয়েছে।

Advertisement

সায়নী ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২২ ০৮:০৯
Share:

একটা বয়সের পরে ব্লাড সুগার ধরা পড়ার ঘটনা আমাদের কাছে পরিচিত। তবে এই চেনা ছবিটা গত কয়েক বছরে বদলে গিয়েছে। ডায়াবিটিসের চোখরাঙানি মানছে না বয়স। আগে মনে করা হত, কম বয়সে টাইপ ওয়ান এবং চল্লিশোর্ধ্বদের টাইপ টু ডায়াবিটিস দেখা যায় সাধারণত। এখন ছোটদের মধ্যেও টাইপ টু ডায়াবিটিস দেখা যাচ্ছে বিপুল সংখ্যায়। মূলত লাইফস্টাইল ডিজ়র্ডার, চাইল্ডহুড ওবেসিটি বেড়ে যাওয়া এর অন্যতম প্রধান কারণ।

Advertisement

টাইপ ওয়ান ও টু-এর তফাত
যাঁদের শরীরে কোনও ইনসুলিন তৈরিই হয় না, তাঁদের টাইপ ওয়ান ডায়াবিটিসের প্রবণতা দেখা যায়। সেটার কারণ জিনগত হতে পারে। টাইপ টু ডায়াবিটিসের ক্ষেত্রে ইনসুলিন রেজ়িসট্যান্স দেখা যায়। অর্থাৎ প্যানক্রিয়াস ইনসুলিন উৎপন্ন করলেও তা বিভিন্ন কোষে গিয়ে কাজ করতে পারে না। এর ফলে প্যানক্রিয়াস আরও বেশি করে ইনসুলিন তৈরি করতে থাকে। এ ভাবে যখন প্যানক্রিয়াস বিটা সেলগুলি আর কাজ করে না, তখন রিলেটিভ ইনসুলিন ডেফিশিয়েন্সি দেখা দেয়। অর্থাৎ, যতটা পরিমাণ ইনসুলিন তৈরি হওয়া দরকার, ততটা হয় না। এই অবস্থাই টাইপ টু ডায়াবিটিস।

উপসর্গ ও রোগ নির্ণয়
ডায়াবিটিস ও এন্ডোক্রিনোলজি বিশেষজ্ঞ ডা. অভিজিৎ চন্দ জানালেন, টাইপ টু ডায়াবিটিসের ক্ষেত্রে গলা শুকিয়ে যাওয়া, বারবার প্রস্রাবের পাশাপাশি চোখের পাওয়ার ঘন ঘন পরিবর্তন, জেনিটাল ফাঙ্গাল ইনফেকশনের মতো উপসর্গ দেখা দেয়। ‘‘গর্ভবতী নন, এমন রোগীদের ফাস্টিং ১২৬-এর উপরে হলে এবং র‌্যান্ডম ২০০-র উপরে হলে এবং সঙ্গে অন্যান্য উপসর্গ থাকলে আমরা ডায়াবিটিস বলে ধরে নিই। টেস্টে অ্যান্টিবডি যদি পজ়িটিভ হয় এবং সি পেপটাইড খুব কম থাকে, তখন আমরা নির্ধারণ করি যে, এটি টাইপ ওয়ান ডায়াবিটিস। আবার, টাইপ টু-র ক্ষেত্রে দেখা যাবে, সি পেপটাইড নর্মাল, অ্যান্টিবডি নেগেটিভ,’’ বললেন ডা. চন্দ।

Advertisement

এইচবিএওয়ানসি টেস্টের মাধ্যমে রক্তে ব্লাড সুগারের মাত্রা নির্ণয় সম্ভব। বাড়িতে গ্লুকোমিটারেও মনিটর করা যায়। ফাস্টিং ১২০-এর নীচে এবং পিপি ১৬০-এর নীচে রাখার লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়ে থাকে সাধারণত। তবে তা ব্যক্তিবিশেষে আলাদা হয়। লক্ষ্যমাত্রা পেরিয়ে গেলে ওষুধ খেতে হবে। ডা. চন্দ বললেন, ‘‘চেষ্টা করা হয়, এইচবিএওয়ানসি ৭-এর নীচে যদি রাখা যায়। যাঁরা খুব বয়স্ক, তাঁদের ক্ষেত্রে ডায়াবিটিস কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় না। কারণ, সেটা করতে গেলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে। হার্ট, কিডনি ইত্যাদির সমস্যায় তা ক্ষতিকর। যাঁদের ৩০-৩৫ বছর বয়সে ডায়াবিটিস ধরা পড়ছে, অন্য কোনও কো-মর্বিডিটি নেই, তাঁদের ক্ষেত্রে একটু অ্যাগ্রেসিভলি কন্ট্রোল করি আমরা। এইচবিএওয়ানসি ৬.৫-এর নীচে নামাতে চাই।’’ কম বয়সে টাইপ টু ডায়াবিটিস ধরা পড়লে যদি তাড়াতাড়ি ওষুধ শুরু করা যায়, তা হলে দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসায় ভাল ফল পাওয়া যায়।

কতটা ক্ষতিকর টাইপ টু ডায়াবিটিস?
সাম্প্রতিক অতীতে দেখা গিয়েছে, রোগীদের মধ্যে টাইপ ওয়ান ডায়াবিটিসের প্রবণতা যত বাড়ছে, টাইপ টু-র প্রবণতা বাড়ছে তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। তার মূল কারণ, সেডেন্টারি লাইফস্টাইল, ওবেসিটি ইত্যাদি। টাইপ টু ডায়াবিটিস শরীরের বিভিন্ন অংশে গভীর প্রভাব ফেলে। যেমন, হাইপারটেনশন, কোলেস্টেরল, হার্ট, কিডনি, নার্ভের সমস্যা প্রকট হয়। ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি, ক্যাটারাক্ট, গ্লকোমা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। কিডনির ক্ষতি, নিউরোপ্যাথি, অর্থাৎ নার্ভের সমস্যা, ডায়াবিটিক ফুট হতে পারে। বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন হওয়ার প্রবণতাও বেড়ে যায়। বাড়ে ত্বকের সমস্যাও।

প্রতিকার ও সাবধানতা
টাইপ টু ডায়াবিটিসের প্রতিকারে ডায়েট, এক্সারসাইজ় এবং ওষুধ— এই তিনটি একসঙ্গে কাজ করে। ডা. চন্দ স্পষ্ট জানালেন, ‘‘ডায়েট-এক্সারসাইজ় বাদ দিয়ে শুধু ওষুধ খেলে কিন্তু কোনও কাজ হয় না। সে ক্ষেত্রে ওষুধে নিয়ন্ত্রণ না হলে পরবর্তী কালে ইনসুলিন নিতে হয়।’’ কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কমানো, সময় মতো খাওয়া, একসঙ্গে বেশি না খাওয়ার মতো বিষয়গুলি প্রাধান্য দিতে হবে, জানালেন ডা. চন্দ।

ডায়াবিটিসের চিকিৎসায় ডায়েটের ভূমিকা ১/৩ অংশ, জানালেন ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট হিনা নাফিস। ‘‘কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, হেলদি ফ্যাট, সঙ্গে ভিটামিন ও মিনারেলস— খাদ্যতালিকায় এগুলি রাখা বাঞ্ছনীয়। ডায়াবেটিক হলেই মিষ্টি ফল, ভাত, আলু ইত্যাদি বর্জন করতে হবে, এই ধারণা পুরোপুরি ঠিক নয়। রোগীর শারীরিক অবস্থা ও খাদ্যাভ্যাস অনুযায়ী ব্যালান্সড ডায়েট চার্ট ঠিক করা হয়। সেখানে ফল সম্পূর্ণ রূপে বাদ দেওয়া হয় না,’’ বললেন হিনা। ভিটামিন বি টুয়েলভ, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ও অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট-সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। ডায়েটে কার্বস এমন ভাবে বাছতে হবে, যার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। সেই সঙ্গে শারীরচর্চা এবং ওষুধ আবশ্যিক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement