কেন্দ্রের টাকা ফেলেই রাখল দুই এসএনসিইউ

টাকার অভাবে এবং ঋণে জর্জরিত হয়ে পশ্চিমবঙ্গে অনেক ক্ষেত্রে উন্নয়ন ধাক্কা খাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ তাঁর নিজের হাতে থাকা স্বাস্থ্য দফতরের অধীনস্থ, কলকাতার দুই মেডিক্যাল কলেজের ‘সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট’ (এসএনসিইউ)-এই কেন্দ্রের দেওয়া টাকা মাসের পর মাস খরচ না করে ফেলে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৫ ০২:৫২
Share:

টাকার অভাবে এবং ঋণে জর্জরিত হয়ে পশ্চিমবঙ্গে অনেক ক্ষেত্রে উন্নয়ন ধাক্কা খাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ তাঁর নিজের হাতে থাকা স্বাস্থ্য দফতরের অধীনস্থ, কলকাতার দুই মেডিক্যাল কলেজের ‘সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট’ (এসএনসিইউ)-এই কেন্দ্রের দেওয়া টাকা মাসের পর মাস খরচ না করে ফেলে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ‘জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন’ থেকে এসএনসিইউয়ের রক্ষণাবেক্ষণ-পরিচ্ছন্নতা, যন্ত্রপাতি কেনা এবং সারানো, এসএনসিইউয়ের সাফাইকর্মীদের বেতনের জন্য হাসপাতাল পিছু বছরে ১০ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, গত বছর ৪৬ শয্যার ন্যাশনাল মেডিক্যালের এসএনসিইউয়ের রক্ষণাবেক্ষণে খরচ হয়েছে মাত্র ৭ হাজার টাকা এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ১১০ শয্যার এসএনসিইউয়ে খরচের পরিমাণ মাত্র ১ লক্ষ টাকা! স্বাস্থ্য দফতরের এক উচ্চপদস্থ কর্তার কথায়, “আমরা সাধারণত ধরি প্রতি তিন মাসে হাসপাতালগুলি আড়াই লক্ষ টাকা করে খরচ করবে। কিন্তু তার সিকিভাগও ন্যাশনাল এবং মেডিক্যালে খরচ হয়নি।”

অথচ স্বাস্থ্যকর্তারাই জানিয়েছেন, কলকাতারই নীলরতন সরকার হাসপাতাল (এনআরএস) গত বছর ৯ লক্ষ ২০ হাজার টাকা খরচ করেছে এসএনসিইউয়ের রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচ্ছন্নতায়। এম আর বাঙুর হাসপাতাল প্রায় ৫ লক্ষ টাকা, বিসি রায় হাসপাতালও প্রায় ৬ লক্ষ টাকা খরচ করেছে। স্বাস্থ্যকর্তাদের আরও বক্তব্য, প্রতি বছর এক-একটি এসএনসিইউয়ে শয্যাপ্রতি অ্যানুয়াল মেনটেন্যান্স গ্রান্টের টাকা খরচের পরিমাণে বিস্তর ব্যবধান রয়েছে। যেমন, এনআরএসে বছরে এসএনসিইউয়ের শয্যা পিছু রক্ষণাবেক্ষণে খরচ হচ্ছে ২ হাজার টাকা, এমআর বাঙুরে সেই অঙ্ক প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা, সিউড়ি হাসপাতালে ৬ হাজার টাকা, কান্দি হাসপাতালে প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা, রামপুরহাটে প্রায় ৩ হাজার টাকা, মালদহ হাসপাতালে ৪৫০ টাকা। অথচ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসএনসিইউয়ে শয্যা-প্রতি রক্ষণাবেক্ষণে বছরে মেরেকেটে ১০০ টাকা এবং ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে সাকুল্যে ১৭-১৯ টাকা খরচ হচ্ছে।

Advertisement

রাজ্যে মা ও শিশুদের চিকিৎসায় নজরদারির জন্য গঠিত টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান তথা এসএনসিইউগুলির নজরদারির দায়িত্বে থাকা ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “অপেক্ষাকৃত নতুন এসএনসিইউগুলির রক্ষণাবেক্ষণে খরচ কম হবে এবং পুরনোগুলির জন্য খরচ বেশি হবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু রামপুরহাট, সিউড়ি, মালদহ যদি ২০১১-১২ সালে তৈরি হয়, তা হলে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ঠিক তার পরেই ২০১২-১৩ সালে তৈরি হয়েছে। এইটুকু সময়ের ব্যবধানে খরচে এতটা পার্থক্য হওয়ার কথা নয়।” ত্রিদিববাবুর কথায়, “কী ভাবে কোথায় খরচ হচ্ছে, আর কোথায় হচ্ছে না তার রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হবে সব এসএনসিইউগুলির থেকে।”

কেন এসএনসিইউয়ের রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচ্ছন্নতা বা যন্ত্রপাতির জন্য টাকা ব্যয় করছে না মেডিক্যাল কলেজ বা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ?

মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা, এসএনসিইউয়ে চার জন সাফাইকর্মী রয়েছেন। যে এজেন্সি হাসপাতালে সাফাইকর্মী নিয়োগ করে, তারা গত প্রায় পাঁচ মাস এই চার জনের বেতনের বিল পাঠায়নি। তাই সেই টাকা খরচ হয়নি। প্রশ্ন হল, বেতন না পেলে সাফাইকর্মীরা কাজ করবেন কেন? মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষের দাবি, “ওই এজেন্সি আমাদের থেকে টাকা না নিলেও কর্মীদের বেতন দিয়ে দিয়েছে। সাফাইয়ের কাজ ব্যাহত হয়নি।” তবে মেডিক্যালের অ্যাকাউন্টস বিভাগের কর্তাদের অনেকেই স্বীকার করছেন, এসএনসিইউয়ের টাকা খরচে কর্তৃপক্ষের অদ্ভুত অনীহা রয়েছে। এখনও গত বছরের প্রায় ৭ লক্ষ টাকা জমে আছে। এমনকী, এসএনসিইউয়ের চিকিৎসক-নার্সদের ইনসেনটিভ বাবদ ১০ লক্ষ ২০ হাজার টাকা এসে কবে থেকে পড়ে রয়েছে। তা-ও এখনও পর্যন্ত কাউকে দেওয়া হয়নি। যদিও এসএনসিইউয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত তাপস সাবুইয়ের কথায়, “রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছে। যখন যেমন দরকার পড়ছে, টাকা খরচ হচ্ছে।”

অন্য দিকে, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের এসএনসিইউয়ের রক্ষণাবেক্ষণের টাকা পড়ে থাকা সম্পর্কে সুপার পীতবরণ চক্রবর্তীর ব্যাখ্যা, “কিছু যন্ত্রপাতি কিনেছিলাম। কিন্তু একটু ভুল বোঝাবুঝিতে ‘অ্যানুয়াল মেনটেন্যান্স গ্রান্ট’-এর বদলে জেনারেল ফান্ড থেকে টাকাটা নেওয়া হয়েছিল। ঘর পাওয়া যাচ্ছিল না বলে অনেক দিন মায়েদের থাকার আলাদা জায়গা করা যায়নি। কিছুদিন আগে জায়গা পাওয়া

যায়। ঘর তৈরিও হয়েছে। কিন্তু সেই টাকাও জেনারেল ফান্ড থেকে পূর্ত দফতরকে দেওয়া হয়েছে। সুপারের কথায়, “এ বার থেকে আমরা অ্যানুয়াল মেনটেন্যান্স গ্রান্টটাই খরচ করব।” তিনি জানান, ন্যাশনালে বহু দিন সাফাই কর্মী ছিলেন না এসএনসিইউয়ে। এক মাস আগে ৪ জনকে নিয়োগ করা হয়েছে। তাই তাঁদের বেতন বাবদ টাকা খরচ হয়নি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement