জল

করোনা আবহে জলে অরুচি? রোগ প্রতিরোধ বাড়াতে পান করুন এই ভাবে

প্রকৃতিতে এমন অনেক উপাদান আছে যাতে স্বাদ-গন্ধের পাশাপাশি আছে অঢেল পুষ্টি ও রোগ সারানোর ক্ষমতা। জলে সেগুলি মেশাতে পারলে বাড়বে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা

Advertisement

সুজাতা মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২০ ১৫:০৬
Share:

পুদিনা পাতা ভেজানো জল পানে মন হবে সতেজ। ফাইল ছবি।

গরম বাড়ছে, বাড়ছে করোনাভাইরাসের দাপট।কাজেই জল খাব না বললে আর এখন হবে না।শরীরে জল না থাকলে ক্লান্তি, বিরক্তি যেমন চেপে ধরবে, ক্ষতি হবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতারও, যা কিনা এই মুহূর্তে করোনা-লড়াইয়ে একমাত্র সম্বল।অতএব কোনও বিশেষ রোগের কারণে কড়াকড়ি না থাকলে দিনে কম করে আড়াই-তিন লিটার জল খান।খাটাখাটনি বা ব্যায়াম বেশি করলে খেতে হবে আরও বেশি।

Advertisement

কিন্তু সমস্যা হল, এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁদের জলের নামে গায়ে জ্বর আসে।কোনও অজ্ঞাত কারণে তাঁদের তেষ্টা পায় না।বা পেলেও সামান্য দু-এক গ্লাস জল ও চা-কফি-নরম পানীয় দিয়ে সে তেষ্টা মিটিয়ে নেন।ভুলে যান যে, এরা সবাই কম-বেশি ডাইইউরেটিক।অর্থাৎ বেশি খেলে ইউরিনের মাধ্যমে বেশি জল টেনে বার করে শরীরকে ঠেলে দেয় জলশূন্যতার দিকে।

অতএব দিনে ৮-১০ গ্লাস জল খেতেই হবে।স্বাদহীনতা নিয়ে মন খুঁত খুঁত করলে কিছুটা স্বাদ, রং ও সুগন্ধ মিশিয়ে দিতে হবে।প্রকৃতিতে এমন অনেক উপাদান আছে যাতে স্বাদ-গন্ধের পাশাপাশি আছে অঢেল পুষ্টি ও রোগ সারানোর ক্ষমতা, একটু উদ্যোগী হয়ে সে সব মেশাতে পারলে ঘণ্টায় ঘণ্টায় জল খাওয়ার বিরক্তি যেমন কমবে, বাড়বে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও।

Advertisement

আরও পড়ুন: ফ্রিজ থেকে কি করোনা ছড়ায়? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা, জেনে নিন​

ভেষজ জল

প্রাচীনকালে মহামতি চরক বলে গিয়েছিলেন ভেষজ জলের কথা।যাকে বলে 'হিম' বা 'শীত'।পরে 'ভাব সংহিতা' গ্রন্থে আচার্য ভাবমিশ্র তার নাম দেন 'ঊষাপান'।বিভিন্ন উপকারক ভেষজ ও মশলা রাতভর ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই জল খেলে কী কী উপকার হতে পারে তার ব্যখ্যাও দিয়েছিলেন তাঁরা।

আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেবাশিস ঘোষ জানালেন, "বিভিন্ন রোগের প্রকোপ কমাতে যেমন ঊষাপানের ভূমিকা আছে, আবার জলের স্বাদ-গন্ধ বাড়ানোর পাশাপাশি কিছু বিশেষ ধরনের পুষ্টি জোগানোর ক্ষেত্রেও কয়েক ধরনের ভেষজ-জল বিশেষভাবে কার্যকর।সঠিক পদ্ধতিতে বানিয়ে সঠিক সময়ে খেলে সুস্বাস্থ্যের পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতারও প্রচুর উন্নতি হয়।"

রোগমুক্তিতে ভেষজ জল

• এক চামচ ত্রিফলা অর্থাৎ শুকনো আমলকি, হরিতকি ও বহেরা নামে তিনটি ফলের চূর্ণ এক গ্লাস জলে সারা রাত ভিজিয়ে সকালে খালিপেটে খেলে পেট পরিষ্কার হয়, তা সবাই জানেন।কিন্তু জানেন না যে, এর আরও কত গুণ আছে! অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট গুণের জন্য এই মিশ্রণ প্রদাহ কম রাখে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ফ্লু ঠেকাতে কাজে আসে।উষ্ণ জলে গুলে খেলে গলা ব্যথা কমে।এর সঙ্গে এক চিমটি দারচিনির গুঁড়ো ও একচামচ মধু মিশিয়ে খেলে স্বাদ-গন্ধ ও উপকার বাড়ে।

• এক চামচ মেথি শুকনো কড়াইয়ে ভেজে গুঁড়ো করে এক গ্লাস জলে মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে ডায়াবেটিস ও ক্ষতিকর কোলেস্টেরল, এলডিএল-এর প্রকোপ কমে।প্রদাহ কমে বলে বাড়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।হজমও ভাল হয়।

• মৌরির জল বানাতে পারেন দু-ভাবে।হয় এক গ্লাস জলে এক চামচ মৌরি সারা রাত ভিজিয়ে রেখে সকালে ছেঁকে খান।নয়তো এক গ্লাস জল ফুটিয়ে তাতে এক চামচ মৌরি দিয়ে ঢাকা দিয়ে রাখুন ২-৩ মিনিট।ছেঁকে চায়ের মতো খান।স্বাদ ও গুণ বাড়াতে অল্প লেবুর রস ও এক চামচ মধু মিশিয়ে নিতে পারেন।ঠান্ডা করেও খেতে পারেন।নিমেষে তরতাজা লাগবে।পেট ফাঁপা, গ্যাস, বদহজমের উপসর্গ কমবে কিছুটা।শরীরে জমা জল বেরনোর সুরাহা হবে।কম থাকবে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবিটিসের প্রকোপও।

• গরম জলে ১০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে বানান ধনের জল।হজমের যেমন উপকার হবে, কম থাকবে প্রদাহের প্রকোপ।বাড়বে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।

ঠান্ডা জলে শসার টুকরো দিয়ে রাতভর ভিজিয়ে রেখে খেতে পারেন। ফাইল ছবি।

• এক চা চামচ সাদা জিরে, দেড় কাপ জল, আধ চা চামচ মধু নিন।কড়াইতে জিরে হালকা করে ভেজে দেড় কাপ জল দিয়ে ৩-৪ মিনিট ফোটান।ঠান্ডা হলে ছেঁকে মধু মিশিয়ে জলটা খেয়ে নিন।এতে ওজন যেমন কমবে, হজম শক্তিও বাড়বে।

সুগন্ধী ভেষজ জল

• সিকি কাপ পুদিনা পাতা এক কাপ ফুটন্ত জলে দিয়ে ১৫ মিনিট ঢেকে রাখুন।ঠান্ডা হলে তাতে ৭ কাপ জল মিশিয়ে বোতলে ভরে ফ্রিজে রেখে দিন এক ঘণ্টা।সুগন্ধ সবচেয়ে ভাল বেরয় এক দিন পর।এই জল সারা দিন অল্প করে খান।তরতাজা বোধ করবেন।পেট গরম কম হবে।কম থাকবে ফ্লুয়ের উপসর্গ।নিয়মিত খেলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাও ঠিক থাকে বলে জানা গেছে।

• এক মুঠো টাটকা পুদিনা পাতা হালকা থেতো করে তাতে মেশান পাতলা করে কাটা লেবুর টুকরো।৮ কাপ জলে মিশিয়ে ফ্রিজে রেখে দিন।২-৩ ঘণ্টা পর থেকে খেতে থাকুন।

• এক চামচ আদা কুচি ও টুকরো করে কাটা লেবু ফুটন্ত জলে ১৫ মিনিট ভিজিয়ে ঠান্ডা করে ফ্রিজে রেখে দিন।

• কমলা লেবুর কোয়া টুকরো করে কেটে ৮ কাপ জলে মেশান।তাতে দিন ও এক মুঠো তুলসি।ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করুন কম করে এক ঘণ্টা।

• পাতিলেবু, কমলালেবু, চাকতি করে কাটা শসা, আদা কুচি, পুদিনা পাতা মেশান বড় এক বোতল জলে।সারারাত ফ্রিজে রাখুন।আপেল, তরমুজ, আঙুর বা অন্য কোনও মরসুমি ফল দিয়েও বানাতে পারেন এই জল।

আরও পড়ুন: পাতা, ডাঁটা, ফুল...এ গাছের এত গুণ!​

• ১-২ লিটার ঠান্ডা জলে তরমুজ, শসা, মুসুম্বি বা পাতিলেবুর টুকরো ও ১০-১২টি পুদিনা পাতা দিয়ে রাতভর ভিজিয়ে রেখে সকালে খান।

• ১টি নারকেল, পুদিনা পাতা, ১ চা চামচ মধু, ১ টা পাতিলেবু নিন।নারকেলের জল বের করে ভেতরটা কুরিয়ে নিন।কোরানো নারকেল ও জলের সঙ্গে পাতিলেবুর রস, পুদিনা পাতা, মধু ভাল করে মিশিয়ে নিন।টানা কাজের মাঝে যখন ক্লান্ত লাগবে, এক গ্লাস খেলে উদ্যম আবার নতুন করে ফিরে আসবে।

অতএব দিনে এক-আধবার চা-কফি খাওয়ার পর দিনভর জল খেতে থাকুন।মাঝেমধ্যে খান ভেষজ জল।দিনে এক-আধ বোতল।ইচ্ছে হলে আরও বেশি।সাদা জলের বিরক্তি ঘুচবে।ভারী হবে উপকারের পাল্লা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement