এ বার কফির সঙ্গে কিছু আনুষাঙ্গিক খাবারের সৌজন্যেই ঝরবে মেদ। ছবি: শাটারস্টক।
চা-কফির নেশায় মেটাবলিক রেট কমে ওজন বাড়ে বলেই জানতেন তো? এর সঙ্গে দুধ-চিনি যোগ হলে তো মেদের ঘরে ষোলো আনাই যোগ হল। তবে এ বার মেদ কমানোর দাওয়াই হিসেবে কফিকে চিহ্নিত করছেন ডায়েটেশিয়ানরা। কফির সঙ্গে কিছু আনুষাঙ্গিক খাবারের সৌজন্যেই এ বার ঝরবে মেদ।
পুষ্টিবিদ সুমেধা সিংহের মতে, ‘‘কফিতে যে সব অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট আছে, বিশেষ করে পলিফেনল, তার প্রভাবে শরীরে প্রদাহের প্রবণতা কমে৷ কমে রোগ–শোকের আশঙ্কা৷ কাজেই দিনে ৩–৪ কাপ খেলে (৭২০–৯০০ মিলি), ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, লিভার ক্যানসার ও পার্কিনসন ডিজিজের আশঙ্কা কমে৷ বয়সের প্রভাব পড়ে অনেক ধীরে৷ কমে বাড়তি ওজন৷’’
পুষ্টিবিদদের পরামর্শ অনুসারে, এই ডায়েটে পরিশ্রমও কম। দিনে কম করে তিন কাপ বা ৭২০ মিলি কফি খান৷ হালকা রোস্টেড কফি বিন ঘরে গুঁড়ো করে ফিল্টার করা জলে বানিয়ে নিন৷ অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট বেশি পাবেন৷ তবে এর সঙ্গে একেবারেই দুধ–চিনি–ক্রিম মিশিয়ে ক্যালোরি বাড়াবেন না৷ কফির পাশাপাশি খান ১৫০০ ক্যালোরি খাবার৷ ব্যায়ামের ধাত না থাকলে ১৫০০ ক্যালোরির চেয়ে বেশি খেলে কিন্তু ওজন কমবে না।
আরও পড়ুন: অফিসে খুব চাপ? এ সব উপায় মানলে কাজ শেষ হবে সময়ে, থাকবেন স্ট্রেস ফ্রি!
সাধারণত ১৫০০ ক্যালোরিতে খিদে পাওয়ার কথা নয়। তবু খিদে নিয়ে ভাবনায় থাকলে খাওয়ার আগে এক কাপ ব্ল্যাক কফি খেয়ে নিন, খিদে কম পাবে৷ তার পর খাবেন হোল গ্রেন, শাক–সবব্জি–ফল৷ এ সবে প্রচুর ফাইবার থাকে বলে অল্প খেলেই পেট ভরে যায় ও বেশি ক্ষণ ভরা থাকে৷ তার উপর এদের ক্যালোরি কম, পুষ্টি বেশি৷ ফলে কফির সঙ্গত পেলে হু হু করে ওজন কমিয়ে দেবে৷
কফির পলিফেনল কমায় মেদ।
কফির গুণাগুণ
কফি ও জন কমাতে পারে কি না এ নিয়ে প্রচুর গবেষণা চলছে সারা বিশ্ব জুড়েই। বিভিন্ন গবেষণায় জানা গিয়েছে, এখন যা খাচ্ছেন তার চেয়ে দ্বিগুণ কফি খেলে ওজন, বিএমআই (ওজনের সূচক) ও চর্বি প্রায় ১৭–২৮ শতাংশ কমে যায়৷ খাবার খাওয়ার আগে খেলে কম খাবারে পেট ভরে৷ ব্যায়ামের আগে খেলে দ্বিগুণ এনার্জি নিয়ে ব্যায়াম করা যায়৷ ক্যালোরি ও ফ্যাট ঝড়ে বেশি৷ ব্যায়ামের পর খেলে চর্বি ঝড়ার হার আরও বাড়ে৷
তবে অবশ্যই মাত্রা রাখতে হবে৷ না হলে খিদে–ঘুম কমে যাওয়া থেকে অনিদ্রা, মাথাব্যথা, রক্তচাপ বাড়ার সমস্যা আসতে পারে৷ হাড় ভঙ্গুর হয়ে যেতে পারে, গ্রাস করতে পারে অবসাদ৷ ক্যাফিন–সেন্সিটিভিট থাকলে দু’–চার কাপেই খিটখিটে মেজাজ, উদ্বেগ, বুক ধড়ফড় করতে পারে৷ গ্যাস–অম্বলে কাবু হতে পারেন৷ বরবাদ হতে পারে ঘুম৷ আর কম ঘুম মানে শরীরে অপকারী হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া৷ তার হাত ধরে ওজনও বাড়ে।
অতএব কফি খান, তবে মাত্রা ছাড়িয়ে নয়৷ সঙ্গে মেনে চলুন ডায়েটের অন্য নিয়মগুলি।
আরও পড়ুন: এ সব উপায়ে ব্যবহার করুন অ্যালো ভেরা, ঝরবে মেদ, ভাল থাকবে চুল-ত্বক
আমন্ড রাখুন ডায়েটে।
কফির সঙ্গে আর কী
সকাল, দুপুরে বা রাতে খান গ্রিন স্মুদি৷ এক কাপ জল, ১–৪ টেবিল চামচ চিয়া সিড, আধ কাপ ফ্যাটহীন গ্রিক ইয়োগার্ট, আধ কাপ টাটকা বা ঠান্ডায় জমানো ব্লু বেরি, আধ কাপ ফুটি, অর্ধেক কলা, আধ কাপ পালং, টাটকা মধু, সব মিশিয়ে মিক্সিতে দিলেই তৈরি হয়ে যাবে স্মুদি। দিনে দু’–তিন বার টুকটাক কিছু খান৷ যেমন, একটা ফুটির চার ভাগের এক ভাগ, আধ কাপ পনির, এক মুঠো অ্যামন্ড। একটু বেশি খিদে পেলে এক পিস হোল হুইট ব্রেডের উপর দু’–টেবিল চামচ স্ম্যাসড বেরি, এক চামচ পি–নাট বাটার ও এক চামচ টাটকা মধু লাগিয়ে খেতে পারেন। বড় একটি লেটুসের মাঝে দু–আউন্স মাংসের পুর ও সিকি পরিমাণ অ্যাভোক্যাডো কুচনো কাসুন্দি দিয়ে জাড়িয়ে বানানো রোলও পেট ভর্তি রাখবে অনেক ক্ষণ৷
দুপুরে ও রাতে কী কী খাবেন?
৩-৪ কাপ লো ফ্যাট স্প্রাউটেড ক্যানোলা, ৩/৪ কাপ গ্রিক ইয়োগার্ট, ৩/৪ কাপ কুচোনো স্ট্রবেরি, অল্প দারুচিনির গুঁড়ো মিশিয়ে বানান৷ ৩-৪ কাপ ব্রাউন রাইস নিন৷ তার উপর আধ কাপ টোফু, আধ কাপ মটরশুটি, এক টেবিল চামচ রাইস ওয়াইন ভিনিগার, এক চামচ সোয়া সস, সিকি চামচ রসুন কুচো, আধ চামচ তিল তেল দিয়ে ও কুচোনো শশা–গাজর মিশিয়ে নিন৷ দু–চামচ অলিভ অয়েল, লেবু, মশলা দিয়ে বানানো চার আউন্স স্যামন ও শশা–পেঁয়াজ–পুদিনা রস দিয়ে বানানো স্যালাডের সঙ্গে খান এক কাপ কুইনোয়া বা ব্রাউন রাইস৷ চার আউন্স টুনা বা দুটো সেদ্ধ ডিম টুকরো করে কেটে তাতে সিকি কাপ ফ্যাট–ফ্রি গ্রিক ইয়োগার্ট, সেলারি ও পেঁয়াজ কুচি ও অল্প একটু কারি পাউডার দিয়ে হোল গ্রেইন ব্রেড দিয়ে খান৷ সঙ্গে একটা আপেল বা অন্য কোনও ফল খান৷