আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এমন কিছু স্বভাব আছে, যা নিয়ে আমরা খুব একটা সচেতন নই। অনেকটাই অভ্যাসবশে সে সব আমাদের আচরণে ঢুকে পড়ে। কিন্তু এই ধরনের শারীরিক ভঙ্গি তথা বডি ল্যাঙ্গুয়েজ অজান্তেই ক্ষতি ডেকে আনে আমাদের পেশাদার জীবনে। এমনকি, চাকরি চলে যেতে পারে স্রেফ এর কারণেই। জানেন সে সব কী কী?
অফিসে মিটিং চলাকালীন বা অন্য সময় মতান্তর হলেই চোখের ভঙ্গিমার মাধ্যমে সেই অসন্তোষ প্রকাশ করে ফেলেন অনেকে। রোলিং আই তার মধ্যে অন্যতম। কারও মতামত পছন্দ না হলে বা আপনার মতকে গুরুত্ব না দেওয়া হলে চোখের তারাকে এক দিক থেকে আর এক দিকে ঘোরান অনেকে। এতে অন্যের প্রতি অশ্রদ্ধা ফুটে ওঠে। এমন স্বভাব থাকলে তা দ্রুত বদলান।
অফিসের সহকর্মীর সঙ্গে যতই বন্ধুত্ব থাকুক না কেন, অফিসের মধ্যে কিছুটা পেশাদারি দূরত্ব বজায় রাখাও জরুরি। অনেকেই অফিসে সহকর্মীর ব্যক্তিগত মেল, হোয়াটসঅ্যাপ বা টেক্সটে উঁকিঝুঁকি মারেন। সহকর্মীরা কম্পিউটারে বসে ব্যক্তিগত কোনও কাজ করলেও সে দিকে তাকিয়ে থাকেন। এমন স্বভাব অত্যন্ত আপত্তিজনক ও অপেশাদারিত্বের পরিচায়ক।
অফিসের কোনও মিটিংয়ে বা বসের সঙ্গে কথা বলার সময় পা ক্রশ করে বসা বা কনুই ভাঁজ করে ক্রশ করে দাঁড়িয়ে কথা বলার অভ্যাস আছে না কি? এমন হলে সে স্বভাব এখনই বদলান। অনেক কর্পোরেট অফিসেই এমন বডি ল্যাঙ্গুয়েজকে ‘পুওর অ্যাটিটিউড’ বলে গণ্য করা হয় ও তার প্রভাবও পড়ে চাকরিতে।
চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারেন না? একে আত্মবিশ্বাসের অভাব বলে গণ্য করা হয়। অফিসের মিটিং হোক বা বসের সঙ্গে কথাবার্তা— এই অভ্যাস যদি আয়ত্তে না আনতে পারেন, তা হলে পেশাদার জীবনে চিরকালই কম আত্মবিশ্বাসের মানুষ বলে পরিচিত হবেন।
অফিসে নানা প্রয়োজনে হ্যান্ডশেক করার প্রয়োজন পড়ে। পেশাদার জীবনে দুর্বল হ্যান্ডশেক সামনের মানুষটির প্রতি কম গুরুত্ব প্রকাশ করে। আবার কাজের প্রতি আপনার ভালবাসা কম, এমনটাও বোঝায়।
কোনও কথা জানতে চাইলে তোতলানো, আমতা আমতা করা, না জেনে ভুল তথ্য দেওয়া, পেন্সিল বা পেনের পিছন চিবোনো— এ সব অত্যন্ত অপেশাদার স্বভাব। ‘নার্ভাস অ্যাটিটিউড’ বলেই পরিচিত। টেনশন থেকেই এদের জন্ম। এমন স্বভাব থাকলে আগে মানসিক ভাবে স্থির থাকুন। বিশেষ মনোযোগ দিন অন্যের কথায়। শান্ত হয়ে উত্তর দিন ঠিক যেটা জানতে চাইছেন।
কোনও কথা ভাল করে না শুনেই প্রতিক্রিয়া দেওয়া অভ্যাস আপনার? সে স্বভাব আজই ছাড়ুন। অনেক সময় খুব বুঝে তার পরই অফিসিয়াল কথায় উত্তর দেওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে মিটিংয়ে। কোন কথা বক্তা কেন বলছেন, ঠিক কতটুকু জানতে চাইছেন এ সব জেনে তবেই মন্তব্য করুন। নইলে হাস্যাস্পদ হবেন।
কাজের সময় ঘনঘন ঘড়ি দেখেন? তা হলে আজ থেকে সে স্বভাবে দাঁড়ি টানুন। হয়তো কতটুকু সময়ে একটা কাজ সারছেন এ হিসাব রাখতেই আপনি ঘড়ি দেখেন, কিন্তু কাজের ফাঁকে ঘনঘন ঘড়ি দেখার স্বভাব ভুল বার্তা দেয়। এতে বোঝায়, আপনি ছুটির অপেক্ষায় আছেন বা কাজটা উপভোগ করছেন না। তেমন হলে কম্পিউটারেই সেট করা ঘড়ি দেখুন।
অন্য সহকর্মীর সাফল্যে যেমন উৎসাহ দেবেন, তেমন তার ব্যর্থতাতেও পাশে দাঁড়াবেন। কিন্তু কোনও বডি ল্যাঙ্গুয়েজ যেন পরিমিতবোধকে টপকে না যায়। অফিসে কারও সঙ্গে টুকটাক বচসা থেকে বড় অশান্তিতে টেনে নিয়ে যান অনেকেই।এমন স্বভাব যেমন ত্যাগ করতে হবে, তেমনই ভালবাসা প্রকাশের ভঙ্গিতেও রাখতে হবে নিয়ন্ত্রণ।