এনসেফ্যালাইটিসে কিশোরের মৃত্যুতে বিতর্ক

বছর দুয়েক আগে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের টিকা নেওয়ার পরও ওই রোগে আক্রান্ত হয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অরূপ রায় নামে আট বছরের এক কিশোরের মত্যু হয়েছে। তাই একবার জেই টিকা দেওয়া হলে তার কার্যকারিতা কতদিন থাকে ওই কিশোরের মৃত্যুর পর তা নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে।

Advertisement

নিলয় দাস

ধূপগুড়ি শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৫ ০৩:০৮
Share:

টিকাকরণের প্রমাণপত্র দেখাচ্ছেন নিহত কিশোরের বাবা। ছবি: রাজকুমার মোদক।

বছর দুয়েক আগে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের টিকা নেওয়ার পরও ওই রোগে আক্রান্ত হয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অরূপ রায় নামে আট বছরের এক কিশোরের মত্যু হয়েছে। তাই একবার জেই টিকা দেওয়া হলে তার কার্যকারিতা কতদিন থাকে ওই কিশোরের মৃত্যুর পর তা নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে।

Advertisement

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ির এলাকার বাসিন্দা ওই কিশোরকে ২০১৩ সালের মে মাসে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের টিকা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার পর দুই বছর আর ওই কিশোরকে এই রোগের কোনও টিকা দেননি পরিবারের লোকেরা। ফের টিকা নেওয়ার দরকার রয়েছে কি না তাও তাঁরা জানেন না। অথচ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজির এক চিকিৎসক দাবি করেছেন, যে টিকা দেওয়া হচ্ছে তার কার্যকারিতা এক বছর থাকে। তাই পরবর্তীতে ‘বুস্টার ডোজ’ নেওয়া দরকার। কিন্তু তা নিয়ে স্পষ্ট কোনও নির্দেশিকা নেই স্বাস্থ্য দফতরের। এদিকে ওই কিশোরের পরিবারের সদস্যরা জানতেন একবার টিকা নেওয়া হয়েছে বলে আর কোনও ভয় নেই। অরূপের শরীরে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু মেলা এবং শনিবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে তার মৃত্যুর পর বিষয়টি সামনে এসেছে। টিকার কার্যকারিতা কতদিন থাকতে পারে তা নিয়ে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্তাদের মধ্যেও নানা মত দেখা যাচ্ছে। তাতে ধোঁয়াশা বেড়েছে আরও।

এ ব্যাপারে বাসিন্দাদের সচেতনতার অভাবের জন্য স্বাস্থ্য দফতরের উদাসীনতাকেই দায়ী করেছেন তাঁরা। কেন না স্বাস্থ্য দফতরের তরফে তা নিয়ে পরিষ্কার করে কিছু জানানো বা প্রচার করা হয়নি। সাধারণ বাসিন্দাদের অধিকাংশই বিষয়টি নিয়ে তাই অন্ধকারে রয়েছেন। এমনকী ওই টিকার কার্যকারিতা কতদিন থাকতে পারে তা জানেন না জেলা হাসপাতাল বা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের অনেকেই। চিকিৎসকদের মধ্যেও নানা মত দেখা যাচ্ছে।

Advertisement

দু’দিন আগে শিলিগুড়িতে স্বাস্থ্য এবং পরিবারের কল্যাণ দফতরের ন্যাশনাল হেল্থ মিশন প্রকল্পের রাজ্যের অধিকর্তা সঙ্ঘমিত্রা ঘোষ এবং রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং হাসপাতাল সুপারদের নিয়ে বৈঠক করেন। সেখানে রোগ নিয়ে কাউকে মুখ খুলতে নিষেধ করে গিয়েছেন। কিছু বলার থাকলে রাজ্যের প্রধান স্বাস্থ্য সচিবই একমাত্র বলবেন বলেও নির্দেশ জারি হয়। এর পর থেকে চিকিৎসক বা স্বাস্থ্য দফতরের অন্য কোনও আধিকারিকও প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাইছেন না। তাতে রোগ নিয়ে বাসিন্দাদের কাছেও সঠিক বার্তা পৌঁছচ্ছে না বলে অনেকে জানিয়েছেন। দার্জিলিং জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘শিবির করে ১৫ বছর পর্যন্ত শিশুদের সকলকে টিকাকরণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে রুটিন টিকাকরণের মধ্যে ৯ থেকে ১০ মাস বয়সে প্রথম প্রতিষেধক দেওয়া হবে শিশুদের। পরে ১৬-১৮ মাস বয়সে দ্বিতীয় বার প্রতিষেধক দেওয়া হবে। তবে আপাতত এটাই জানা গিয়েছে, বাচ্চা ও বয়স্কদের একবার প্রতিষেধক নিলেই চলবে।’’ ওই আধিকারিকের বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকদের একাংশ।

এদিকে জেই এবং অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বাড়ছেই। শনিবার ভোর থেকে বেলা ১১ টার মধ্যে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ধূপগুড়ির কিশোর অরূপ-সহ ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, বাকি দুই জন হলেন কালচিনি চা বাগানের গনরা গোয়ালা (৫৮) এবং বীরপাড়ার বাসিন্দা জগদীশ বিশ্বাস (৪২)। জগদীশবাবুর পরিবারের লোকেরা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর ভাই গোপাল বিশ্বাস জানান, রাতে জগদীশবাবুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে দেখার জন্য চিকিৎসকদের বারবার অনুরোধ করেছিলেন তাঁর স্ত্রী কাকলিদেবী। অথচ কেউ সে কথায় কর্ণপাত করেননি। বারবার ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁদের।

সহ প্রতিবেদন: সৌমিত্র কুণ্ডু

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement