ফাইল চিত্র
অতিমারি পরিস্থিতিতে যাঁরা বাড়িতে বসে কাজ বা ক্লাস করছেন, সবচেয়ে বেশি চাপ নিতে হচ্ছে তাঁদের চোখদু’টিকে। পড়াশোনার কারণেই হোক বা পেশার প্রয়োজনে, চোখের বিরামহীন কাজের ফলে দেখা দিতে পারে নানা সমস্যা, চোখে আসতে পারে পাওয়ারও। স্বাভাবিক নিয়মে চোখের পাওয়ার এলেও সতর্ক হওয়া দরকার প্রথম থেকেই। জিনগত ও পারিপার্শ্বিক কারণে অনেকের চোখে ছোট থেকেই এসে যায় হাই পাওয়ার। আবার কেউ চল্লিশ পরেও দিব্যি চশমা ছাড়াই ঝকঝকে দেখতে পারেন। পুরোটাই নির্ভর করে ব্যক্তিবিশেষে। তবে চোখে পাওয়ার এলে প্রথমেই চিনে নিতে হবে, তার লক্ষণগুলি কী কী।
ধরা পড়া জরুরি
• চোখ লাল হওয়া এবং করকর করা
• চোখে জ্বালা ও চোখ থেকে জল পড়া
• মাথা ধরা, কপালে বা ঘাড়ে যন্ত্রণা
• চোখে বারবার পিচুটি আসা
• ছোট লেখা বা দূরের কোনও লেখা পড়তে অস্বস্তি
• পড়তে গিয়ে মনে হওয়া, আর একটু স্পষ্ট হলে বা আরও আরাম করে পড়তে পারলে ভাল হয়
• ড্রাই আইজ়
এই সমস্যাগুলি দেখা দিলে বুঝতে হবে, চোখের পাওয়ার আসার সম্ভাবনা রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সুমিত চৌধুরী বললেন, ‘‘চোখের সমস্যার ক্ষেত্রে সাধারণত দু’ধরনের রোগী দেখতে পাওয়া যায়। এক, ছাত্রছাত্রী বা অফিসকর্মীরা, যাঁরা সারাক্ষণ স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে কাজ করছেন। দুই, যাঁরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা টিভি বা মোবাইল স্ক্রিন দেখে সময় কাটাচ্ছেন। দু’ক্ষেত্রেই স্ক্রিন টাইম কমানো কিংবা একটানা দেখার মাঝে গ্যাপ বাড়ানোর পরামর্শ দিই আমরা।’’
পর্দায় চোখ, ক্ষতি চোখের পর্দায়
২০২১ সালে দাঁড়িয়ে প্রবীণ-নবীন নির্বিশেষে স্ক্রিন টাইম কমিয়ে শূন্য করে ফেলা একপ্রকার অসম্ভব। তবে টিভি, মোবাইল, ট্যাব, ল্যাপটপ— যা-ই দেখুন, তার মাঝে বিরতি দেওয়া খুব জরুরি। ডা. চৌধুরীর কথায়, ছোটরা ল্যাপটপ বা ডেস্কটপের পরিবর্তে মোবাইলে অনলাইন ক্লাস করলে তাদের চোখে চাপ পড়ে বেশি। স্ক্রিন যত বড় হবে, একটানা কাজ করার জন্য তা ততই আরামদায়ক। টানা স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখের পাতা তুলনায় কম পড়ে, তাই চোখের স্বাভাবিক আর্দ্রতা শুকিয়ে ড্রাই আইজ়ের সম্ভাবনা বাড়ে। ব্রাইটনেস খুব বাড়ানো থাকলেও চোখে চাপ পড়ে। আর এই সব কারণই পরোক্ষে চোখের পাওয়ার বৃদ্ধিতে ইন্ধন দেয়।
বয়স, জিন ও চোখের পাওয়ার
পারিপার্শ্বিক কারণ ছাড়াও কোনও শিশুর চোখে স্বাভাবিক নিয়মেও পাওয়ার আসতে পারে। সাধারণত শরীরের বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিশুর চোখও আয়তনে বাড়তে থাকে। প্রথমে চোখদু’টি ছোট থাকে, প্লাস পাওয়ারের মতো। মোটামুটি বছর তিনেক বয়সের মধ্যে তা বেড়ে এমেট্রোপিয়া পর্যায়ে আসে, অর্থাৎ পাওয়ারহীন অবস্থা। চোখের এই গ্রোথ যদি স্বাভাবিক ভাবে না হয়ে একটু কমবেশি হয়, তখনই পাওয়ার চলে আসে। চশমার সাহায্যে তখন সেই প্লাস অথবা মাইনাস পাওয়ার অ্যাডজাস্ট করা হয়। ঠিক পাওয়ারযুক্ত লেন্সের মাধ্যমে রেটিনায় যথাযথ ভাবে আলো এসে পড়লেই পরিষ্কার হয় দৃষ্টিশক্তি।
অনেক সময়ে বাবা-মায়ের মধ্যে কারও চোখে মাইনাস পাওয়ার থাকলে সন্তানের ক্ষেত্রেও পাওয়ার এসে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শিশুদের তাড়াতাড়ি স্কুলে ভর্তি হওয়া, কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোমও অল্প বয়সে পাওয়ার আসার কারণ হতে পারে। একটি শিশু যতক্ষণ না প্রাপ্তবয়স্ক হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত পাওয়ার ওঠানামা করতেই পারে। কারও দ্রুত হারে, কারও ক্ষেত্রে স্থিতিশীল ভাবে। তবে সাধারণত ১৮-২০ বছর বয়সে গিয়ে তা মোটামুটি স্থিতাবস্থায় পৌঁছে যায়।
চোখের আরাম, মনেরও
• যে কোনও স্ক্রিনের দিকে একটানা তাকিয়ে না থেকে মাঝে মাঝে বিরতি নিন। সেই সময়ে চোখে জলের ঝাপটা দিয়ে আসুন। মাঝে মাঝে সবুজের দিকে তাকালেও চোখ আরাম পায়।
• সামান্য উষ্ণ বা ঠান্ডা জলে (যার যেটায় আরাম) তুলো ভিজিয়ে চোখের উপরে চেপে রাখুন। ড্রাই আইজ়ের সমস্যায় লুব্রিকেটিং টিয়ার ড্রপ দিন।
• ফোনে অনলাইন ক্লাস করার সময়ে নির্দিষ্ট দূরত্বে ফোনটি রাখুন। সম্ভব হলে স্ট্যান্ডের উপরে রাখুন। টানা কাজ করলে স্ক্রিন বড় হলেই ভাল। ব্রাইটনেস অ্যাডজাস্ট করে নেবেন। ঘর অন্ধকার করে টিভি দেখলে চোখে চাপ পড়ে বেশি।
• পাওয়ার যত সামান্যই হোক, সব সময়ে চশমা পরার অভ্যেস তৈরি করুন। পড়ার সময়ে আলো যেন পিছন দিক বা উপর থেকে আসে। হয়তো কোনও বই পড়ছেন, সামনে আলো থাকলে দেখবেন, তা চোখে প্রতিফলিত হয়।
তবে এই উপায়গুলি পাওয়ার আসা বা তার বৃদ্ধি আটকাতে পারে না। পাওয়ার নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের সাধ্যের বাইরে। তবে চোখে চাপ পড়ার বাহ্যিক কারণগুলি চাইলেই কমিয়ে ফেলা যায় অনেকাংশে। শরীরের দামি অঙ্গটিকে যত্নে রাখুন যথাসাধ্য।