বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধু অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতাই নয়, সম্প্রতি করোনার কারণেও আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে দেশে দেশে।
একাকিত্ব, আর্থিক সমস্যা এবং সমাজের নানাবিধ চাপে অবসাদে ভোগেন এরকম মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। মেধাবী ছেলে ভাল রেজাল্ট করতে পারেনি, ব্যবসা ডুবেছে, প্রচুর দেনা হয়ে গিয়েছে, ভাল পড়়াশোনা করা সত্ত্বেও যোগ্য ব্যক্তি তাঁর উপযুক্ত চাকরি পাচ্ছেন না, বা কর্মক্ষেত্রে যথাযথ মর্যাদা বা স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, ব্যক্তিগত জীবনে অপ্রাপ্তি, পারিবারিক অশান্তি চলছে—ইত্যাদি নানা কারণ থেকে মানুষ আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। ইদানিং বয়স্কদের মধ্যেও একাকিত্ব থেকে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এমনও বহু মানুষ আছেন যাঁদের পরিবারে মানসিক সমস্যার থেকে আত্মহত্যার প্রবণতা রয়েছে। সেখান থেকেও কারণে অকারণে লোকজন আত্মহননের দিকে এগোয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধু অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতাই নয়, সম্প্রতি করোনার কারণেও আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে দেশে দেশে। ভাইরাসটিকে নিয়ে ভীতি মানুষকে অসহায় করে তুলছে, কোয়ারেন্টিন বা আইসোলেশন মানুষকে নিঃসঙ্গ করে তুলছে। নিজে আক্রান্ত হওয়া বা নিজের দেহ থেকে পরিবারের অন্যান্যদের মধ্যে রোগ ছড়িয়ে পড়়ার আতঙ্ক, একাকিত্ব এবং সর্বোপরি অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা, লকডাউনের জন্য কাজ হারানো, ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা—প্রভৃতি কারণে বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা।
এর থেকে কাউকে বাঁচাতে প্রয়োজন আইসোলেশনে শারীরিকভাবে দূরে থাকলেও মানসিকভাবে পরিবারের সদস্যদের একে অপরের খুব কাছে থাকা। প্রয়োজন নিয়মিত সবার খোঁজ খবর নেওয়া, সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকের সঙ্গে সব কিছু শেয়ার করা, তথ্য বিনিময় করা, শিশপদের সঙ্গ দেওয়া, বয়স্ক মানুষদের সহ্গে যোগাযোগ আরও বাড়ানো।
আত্মহত্যার ৭০ ভাগ কারণ হল মনোরোগ।
আত্নহত্যার নিরিখে পিছিয়ে নেই পশ্চিমবঙ্গও। পরিসংখ্যান বলছে, যুবক-যুবতীদের মধ্যে এই আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি। প্রধান কারণ হিসেবে ডিপ্রেশনের কথা বলা হচ্ছে। জীবনটা আসলে অনেক বড়়। অনেক কিছু করার থাকে। অনেক কিছু জানার থাকে। সোশ্যাল নেটওয়ার্কের বাইরেও একটা জগৎ থাকে। কথা বলুন। অনেক বেশি করে মিশতে হবে সবার সঙ্গে। ভার্চুয়াল বন্ধুদের সঙ্গে আপনি চ্যাট করতে পারবেন। তবে পরিবার ও পাশে থাকা বন্ধুরা বেশি গুরুত্বপূর্ণ জানবেন। আপনার পছন্দের কাজ করুন। তার মধ্যেই আনন্দ খুঁজে নিন। নিজেকে বলতে হবে, আমি ভালো থাকবো। জানবেন, আপনার চারপাশে এ রকম অনেক মানুষ আছেন যাঁরা আপনার থেকে অনেক বেশি সমস্যার মধ্যে রয়েছেন। অনেক বেশি খারাপ রয়েছেন।তা-ও লড়াই করছেন। পছন্দের মানুষজনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। পারিবারিক অনুষ্ঠানে থাকার চেষ্টা করুন।
সাফল্য-ব্যর্থতা, ভাল থাকা-মন্দ থাকা জীবনের অঙ্গ। ঘুরে-ফিরে সবই আসে। সময়ের উপর ধৈর্য রাখুন। আজ না হলে কাল সাফল্য আসবেই। ভালো কিছু কারও ক্ষেত্রে তাড়়াতাড়়ি হয়, কারও তা দেরিতে আসে। মনের কথা খুলে বলুন ভরসার লোককে। সে রকম কেউ না থাকলে মনোবিদের কাছে যান। আমার ভাল থাকা কেউ আটকাতে পারবে না। এই কথাটি মন্ত্রের মতো জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে নিতে হবে।
আত্মহত্যার ৭০ ভাগ কারণ হলো মনোরোগ। বিষণ্ণতা আরেকটি খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ। তাতে মানুষ অসহায়বোধ করে। জীবনের প্রতি তার কোনো মায়া থাকে না। বিষণ্ণতায় আত্মহত্যার হার বেশি। এ ছাড়া সিজোফ্রেনিয়া নামে একটি কঠিন মানসিক রোগ রয়েছে। তাতেও অনেকের মধ্যে আত্মহত্যার ইচ্ছা জন্ম নেয়। তবে বিষণ্ণতা যদি রোধ করা যায়, তা হলে আত্মহত্যার প্রবণতাকে অনেকটা রোধ করা যাবে।
এর জন্য একটু শরীর চর্চা করা দরকার। আমরা যদি রোজ আধ ঘম্টা শরীরচর্চা করি, ব্যায়াম করি, প্রাণায়াম ও জগিং করি, তা হলে মস্তিষ্ক একটি রাসায়নিক তৈরি করে। তাতে শরীরে সুখানুভূতি তৈরি হয়। অনেক রোগ কমে। উচ্চ রক্তচাপ কম হবে, ডায়াবেটিস হবে না, আরথ্রাইটিস হবে না, হার্টের রোগ কম হবে। মনের ভাল লাগাটাও বাড়়বে। সব কাজে উৎসাহ আসবে।
একটি স্লোগান ছিল—‘টক অ্যাবাউট ডিপ্রেশন।’ চলুন, অবসাদ নিয়ে আমরা কথা বলি। মনের ভাব প্রকাশ করি। আমি যেহেতু অসহায়, একটি আশার পথ খুঁজতে হবে। দেখা যাক কারও সঙ্গে কথা বলে পথটা পাওয়া যায় কিনা। কাছের মানুষদের সঙ্গে কথা বলতে পারি। কিংবা সাইকোলজিস্ট, কাউন্সেলরের কাছে যেতে পারে। কিছুই না করে নিজেকে শেষ করে দেওয়াটা কোনও কাজের কথা নয়। ‘উইনার্স নেভার কুইট।’ আর জীবন হল ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ দান। তাকে এই ভাবে শেষ করে দেওয়াটা চরম বোকামি।