স্ট্রেংথ ট্রেনিংয়ের মিথ ও মিথ্যে

শরীরে জোর বাড়ানো, ফিট থাকা বা ওজন কমানোর জন্য স্ট্রেংথ ট্রেনিংয়ের জুড়ি নেই। কিন্তু ভুল ধারণাগুলো তাড়ানো জরুরি ধরুন, এমন কোনও এক্সারসাইজ়ের খোঁজ পেলেন, যা নিয়মিত করলে হার্ট ভাল থাকবে, ব্যালান্স বাড়বে, হাড়ের শক্তিবৃদ্ধি হবে, আবার ওজনও কমবে— উৎসাহী হবেন তো?

Advertisement

অন্তরা মজুমদার

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৯ ০০:০১
Share:

ধরুন, এমন কোনও এক্সারসাইজ়ের খোঁজ পেলেন, যা নিয়মিত করলে হার্ট ভাল থাকবে, ব্যালান্স বাড়বে, হাড়ের শক্তিবৃদ্ধি হবে, আবার ওজনও কমবে— উৎসাহী হবেন তো? বিশেষজ্ঞরা কিন্তু বলছেন, এর সবটাই সম্ভব স্ট্রেংথ ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে। কয়েকটা অভ্যেসের মাধ্যমে পেশির ক্ষমতা বাড়ানো এবং পেশিক্ষয় রোধ করাকে সাধারণ ভাবে স্ট্রেংথ ট্রেনিং বলে। পেশি টোন-আপ করার জন্য তাই স্ট্রেংথ ট্রেনিংয়ের ধারেকাছে কিছু নেই।

Advertisement

কিন্তু অনেকেই ভাবেন, স্ট্রেংথ ট্রেনিং মানে বিরাট ঝুঁকি! কয়েকটা ভ্রান্ত ধারণাও রয়েছে একে ঘিরে। এ বার পালা, মিথ বাস্টিংয়ের।

Advertisement

এক ঝুড়ি মিথ

nমিথ: স্ট্রেংথ ট্রেনিং মানে ভারী ওজন তোলা

সত্যিটা হল: অনেকেই ভাবেন, স্ট্রেংথ ট্রেনিং মানেই ভারী ওজন তুলে ব্যায়াম করা। কিন্তু অনেক সময়ে বাইরে থেকে ওজন ব্যবহার না করে নিজের শরীরের ওজনের বিপক্ষেও এক্সারসাইজ় করানো হয়। যেমন পুশ-আপ, স্কোয়াট ইত্যাদি। ফিটনেস বিশেষজ্ঞ চিন্ময় রায়ের বক্তব্য, স্ট্রেংথ ট্রেনিং নামটা এসেছে এটা বাধার বিপক্ষে ফিটনেস ট্রেনিংয়ের প্রক্রিয়া বলে। ‘‘তাই এর আর এক নাম রেজ়িস্ট্যান্স ট্রেনিং,’’ মন্তব্য তাঁর। প্রতিষ্ঠিত জিমগুলোয় বিভিন্ন রেজ়িস্ট্যান্স টুল ব্যবহার করে স্ট্রেংথ ট্রেনিং করানো হয়। যেমন ডাম্বেল, বার্বেল, কেটলবেল, স্যান্ডব্যাগ বা মেডিসিন বল। তবে ডাম্বেল-বার্বেলের নাম শুনেই আঁতকে উঠবেন না! লোহার বল বা লোহার রড ছাড়াও রেজ়িস্ট্যান্স টিউব বা ফ্লেক্সিবল রাবার ব্যবহার করেও অনেকের শরীরে জোর বাড়ানো হয়।

মিথ: স্ট্রেংথ ট্রেনিং মানেই চোট

সত্যিটা হল: বডি ওয়েট ব্যবহার করে স্ট্রেংথ ট্রেনিং করালে চোট-আঘাতের ভয় কম থাকে। যেমন, কোনও অভিজ্ঞ ট্রেনার প্রথমেই ফান্ডামেন্টাল মুভমেন্ট স্ক্রিন করে দেখে নেবেন, যিনি প্রশিক্ষণ নিতে এসেছেন তিনি স্কোয়াট, লাঞ্জ, পুশ, পুল, টুইস্ট এবং বেন্ড সহজে করতে পারেন কি না। পারলে তবেই তাঁর ক্ষমতা বুঝে তাঁকে ওজন দেওয়া হবে। তবে ট্রেনারের যদি তেমন অভিজ্ঞতা না থাকে, তখন ইনজুরি হতেই পারে।

মিথ: উচ্চতা বাড়বে না

সত্যিটা হল: নিয়মিত স্ট্রেংথ ট্রেনিং করলে গ্রোথ হরমোনের ক্ষরণ হয়। এই গ্রোথ হরমোনই বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। চিন্ময় বলছিলেন, ‘‘ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন জিমন্যাস্টদের মধ্যে যাদের বয়স ১৪-১৫, তারা কিন্তু হেসেখেলে ওজন তোলে। কই, তারা তো বেঁটে হয়ে যাচ্ছে না!’’ সুতরাং গ্রোথ স্পার্ট পিরিয়ড বা পিউবার্টির প্রথম ভাগে যখন উচ্চতা বাড়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি, সে রকম বয়সে শোল্ডার প্রেস, মাঝারি ভারী ওজন তোলা— এগুলো করলে উপকার পাওয়া যায়। একটা কথা মনে রাখলে ভাল, চোট এড়াতে ১২-১৪ বছর বয়সে বার্বেল ব্যবহার না করে নিজের ওজন-ক্ষমতা বুঝে ডাম্বেল ব্যবহার করাই নিরাপদ।

মিথ: মেয়েদের শরীর পেশিবহুল হয়ে ওঠে

সত্যিটা হল: পেশিবহুল চেহারা হয় টেস্টোস্টেরন হরমোন থেকে। যেটা পুরুষদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে। মেয়েদের শরীরেও টেস্টোস্টেরন থাকে। তবে তার পরিমাণ এতই অল্প যে, ডাম্বেল-বার্বেল দিয়ে স্ট্রেংথ ট্রেনিং করালেও পেশি তৈরি হয় না।

মিথ: স্ট্রেংথ ট্রেনিং ওজন কমায় না

সত্যিটা হল: যাঁরা বেশি দৌড়োদৌড়ি করে ওজন কমাতে চান, তাঁদের পেশির ক্ষয় হওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে। সেটা কিন্তু বেশ ক্ষতিকারক শরীরের পক্ষে। কারণ ছোটাছুটি করলে শরীর থেকে কর্টিসল হরমোনের ক্ষরণ হয়। যাকে বলা হয়, স্ট্রেস হরমোন। এর কারণেই দৌড়োদৌড়ি করলে ক্লান্তি আসে শরীরে। আবার স্ট্রেংথ ট্রেনিং করলে শরীরে পেশি তৈরি হয়। শরীরে পেশি বেশি থাকলে ক্যালরি ঝরাতেও সুবিধে। সুতরাং পরিমিত হারে দৌড়ে, বাকিটা স্ট্রেংথ ট্রেনিং করলে সব দিকেই উপকার পাবেন।

মিথ: বয়স্কদের জন্য ক্ষতিকর

সত্যিটা হল: চল্লিশ বছরের পর থেকেই হাড়ের ক্ষয় শুরু। হাঁটুতে ব্যথার রোগও এই বয়স থেকেই দেখা যায় বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বয়সে স্ট্রেংথ ট্রেনিং করলে বোন ডেনসিটি বাড়ে। ফলে অস্টিয়োআর্থ্রাইটিস বা অস্টিয়োপোরোসিসের মতো রোগগুলি আটকানোও যায়।

উপকারিতা

স্কোয়াট, বেল্টপ্রেসের মতো স্ট্রেংথ ট্রেনিং ডায়াবেটিস, হাই ব্লাড প্রেশার, থাইরয়েড এবং‌ ফুসফুসজনিত নানা রোগ আটকায়।

স্ট্রেংথ ট্রেনিংয়ের ফলে স্কিনের টেক্সচার সুন্দর হয়। মুখে গ্লো আসে।

পশ্চার বা দেহসৌষ্ঠব টানটান হয়। কারণ পেশি সুগঠিত হয়।

মনমেজাজ ভাল থাকে। কারণ এনডরফিন হনমোনের ক্ষরণ।

জয়েন্ট পেন, যেমন কাঁধের ব্যথা বা হাঁটুর ব্যথা দূরে থাকে।

ঘরোয়া উপায়ে

অনেকেই জিমে না গিয়ে পকেট বাঁচাতে চান। তাঁরা ঘরোয়া পদ্ধতিতে স্ট্রেংথ ট্রেনিং করতে পারেন। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন রকমের স্কোয়াট, ডাম্বেল রো, পুশ-আপ, পুল-আপ, লাঞ্জ, হিঞ্জ, ডিপ ইত্যাদি।

নিজের শরীরের ওজন ব্যবহার করে পুশ-আপ, লাঞ্জ, স্কোয়াট করতে পারেন।

দু’হাতে দু’লিটারের জলের বোতল নিয়ে প্র্যাকটিস করুন।

এক জোড়া পাঁচ কেজির ডাম্বেল কাছে রাখলে অন্তত কুড়ি ধরনের এক্সারসাইজ় করতে পারবেন।

একটা সুইস বল কিনে রাখুন। তার উপরে প্লাঙ্ক, সাইড প্লাঙ্ক বা ব্রিজ প্র্যাকটিস করতে পারেন। পেটের অংশ টানটান থাকবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement