নীলচে-বেগনি রঙের গোলাকার চিহ্নটি কিসের? ছবি: সংগৃহীত।
সকালবেলা ঘুম চোখ খুলেই আগে মোবাইলের খোঁজ পড়ে। ঘড়িতে ক’টা বাজে দেখার অছিলায় এক বার হোয়াট্সঅ্যাপ কিংবা ফেসবুক থেকেও ঘুরে আসা যায়। অনেকেই মনে করেন, খবরের কাগজ পড়ার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল সমাজমাধ্যমে এক বার চোখ বুলিয়ে নেওয়া। অভ্যাসবশত সেই কাজটি করতে গিয়েই এক দিন হঠাৎ খেয়াল হল হোয়াট্সঅ্যাপের চ্যাট বাক্সতে নতুন একটি গোলাকার চিহ্নের আমদানি। নীলচে-বেগনি রঙের এই চিহ্নটির নাম ‘মেটাআই’। কিন্তু তার কাজ কী?
বেশ কিছু দিন ধরেই শোনা যাচ্ছে, বাজারে ‘এআই’ বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আমদানি হতেই মানুষের মাথার দাম কমছে। শুধু মাথা কেন? গোটা একটি মানুষের বিকল্প হয়ে উঠেছে এই ‘চ্যাটবট’ প্রযুক্তি। মনের মতো সঙ্গী বা সঙ্গিনীর অভাব পূরণেও এগিয়ে এসেছে ‘এআই’ নিজের পছন্দ-অপছন্দের তালিকা ‘চ্যাটবট’কে জানিয়ে দিলে প্রায় কুমোরটুলি থেকে অর্ডার দেওয়ার মতো পছন্দসই সঙ্গী বা সঙ্গিনী হাজির করবে। ‘এআই’ প্রযুক্তির সাহায্যে সে একেবারে রক্ত-মাংসের মানুষের মতোই কথা বলবে।
ব্যবসা, চাকরি কিংবা স্বাধীন যে কোনও কর্মক্ষেত্রে এআই তার নিজস্ব প্রতিভা দেখাতে শুরু করেছে। একেবারে মানুষের মস্তিষ্কের মতোই নানা সমস্যার সমাধান করতে পারে এই প্রযুক্তি। মনের গোপন কথা বিশ্বাস করে বলা যায় এই ‘প্রযুক্তিমানব’কে। তাই এই প্রযুক্তি ব্যবহারে মেটাও পিছিয়ে নেই। ‘চ্যাটজিপিটি’, ‘বিংএআই’ এবং ‘গুগ্ল বার্ড’-এর মতো মেটা সংস্থা ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, মেসেঞ্জার এবং হোয়াট্সঅ্যাপের হয়ে কাজ করবে মেটা এআই। অর্থাৎ স্মার্টফোন আরও ‘স্মার্ট’ হয়ে উঠবে। কোনও অজানা বিষয় মাথায় এলে ‘গুগ্ল সার্চ’-এ গিয়ে খুঁজতে যতটা সময় ব্যয় হয়, তার চেয়ে অনেক কম সময়ে, নির্ভুল তথ্য ব্যবহারকারীর সামনে তুলে ধরবে এই ‘চ্যাটবট’। ‘এআই’ জেনারেটেড ছবি তৈরি করতেও সাহায্য করবে এই প্রযুক্তি।
মেটা এআই বর্তমানে ওই সংস্থারই নিজস্ব ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল (এলএলএম)-এর সাহায্যে হোয়াট্সঅ্যাপ, ফেসবুক, মেসেঞ্জার কিংবা ইনস্টাগ্রামে কাজ করছে। প্রতি দিনের খুঁটিনাটি কাজ থেকে বৃহৎ বাজার পরিকল্পনা— সবই সম্ভব এই প্রযুক্তির সাহায্যে। এমনকি স্ত্রীর মানভঞ্জন করতে পথে এগোনো নিরাপদ, সেই খোঁজও এনে দেবে।
ছবি: সংগৃহীত।
হোয়াট্সঅ্যাপে মেটা ‘এআই’ কী ভাবে কাজ করে?
হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপে বন্ধুরা একসঙ্গে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন? সাহায্য করবে মেটা এআই চ্যাটবট। কোথায় যাবেন, কোথায় থাকবেন, কেমন খরচ হতে পারে কিংবা যেখানে ঘুরতে যাবেন, সেখানকার আবহাওয়া কেমন, সেই সম্পর্কিত নানা ধরনের তথ্য জানাবে মেটা এআই। ফুড ভ্লগিং করেন? শহরে নতুন কোনও রেস্তরাঁ চালু হলে সেই খোঁজও বাড়ি বসেই পেয়ে যেতে পারেন এখানে। আবার কল্পজগতে বিচরণ করা মানুষদের মস্তিষ্কে খানিক ধোঁয়া দিতেও সাহায্য করবে। যেমন ধরা যাক মঙ্গলগ্রহে যদি ‘কার রেসিং’ হয়, তা চাক্ষুষ করার অভিজ্ঞতা হবে। টি২০ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রাণী ডাইনোসর যদি ক্রিকেট খেলে তা দেখতে কেমন লাগবে, সেই ছবিও মুহূর্তে চোখের সামনে তুলে ধরবে মেটা এআই।
কী ভাবে ব্যবহার করবেন?
প্রথমেই দেখে নিতে হবে হোয়াট্সঅ্যাপ আপডেট করা আছে কি না। যদি না থাকে, তা হলে প্লে স্টোর থেকে আগে হোয়াট্সঅ্যাপের একেবারে নতুন ভার্সনটি আপডেট করে নিন। তার পর ফোন বা ওয়েব হোয়াট্সঅ্যাপ খুললেই নীলচে-বেগনি রঙের গোলাকৃতি একটি চিহ্ন ফুটে উঠবে। সেই ‘আইকন’-এ ক্লিক করলেই মেটা চ্যাটবটের আলাদা একটি উইন্ডো খুলে যাবে। সেখানে যা প্রয়োজন সবই লিখে জিজ্ঞাসা করা যাবে।
ইনস্টাগ্রামে মেটা ‘এআই’ কী ভাবে কাজ করে?
ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীরা মেটা ‘এআই’-এর সঙ্গে সরাসরি মেসেজে কথা বলতে পারবেন। বিয়ের পরিকল্পনা থেকে নতুন তথ্য সম্পর্কে অনুসন্ধান— মেটা এআই-এর দৌলতে সবই সম্ভব।
কী ভাবে ব্যবহার করবেন?
ইনস্টাগ্রামে সার্চ অপশনে গিয়ে ‘অ্যাট’ লিখে সরাসরি যা জানতে চান, সেই সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য জানিয়ে দেবে মেটা চ্যাটবট।
ফেসবুকে মেটা ‘এআই’ কী ভাবে কাজ করে?
যে কোনও বিষয় সম্পর্কে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের আলাদা করে বিভিন্ন ধরনের তথ্য প্রদান করবে মেটাআই। ধরা যাক, কোনও এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ‘অরোরা’ বা মেরুজ্যোতির ছবি পোস্ট করেছেন। সেই ছবি দেখে কেউ যদি জানতে চান মেরুজ্যোতি সম্পর্কে, সে ক্ষেত্রে মেটাআই সমস্ত ধরনের তথ্য জানিয়ে দেবে। বছরের কোন সময়ে, কোথায় এবং কত ক্ষণের জন্য মেরুজ্যোতি দেখা যায়, কিংবা মেরুজ্যোতি দেখতে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলে কী কী করতে হবে— সেই সমস্ত তথ্য হাতের সামনে তুলে ধরবে মেটা এআই।