বছর শেষে রাতভর হুল্লোড় নতুন নয়। ক্লাব, রেস্তোরাঁ কিংবা বন্ধুর বাড়িতে রাতভর জমজমাট আড্ডা, নাচ-গান সবটাই এখন মধ্যবিত্তের রুটিনে। একে সারা বছরের সিলেবাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ বললেও ভুল হয় না মোটেই। সেই পরীক্ষায় পাশ করাতে অন্তত এক মাস ধরে প্রস্তুতি নিয়েছে শহরের সব ক্লাব-রেস্তোরাঁ-রিসর্ট। কোথাও ডিজে আসছে মুম্বই থেকে তো কোথাও টার্কি আসছে তাইল্যান্ড থেকে। তবে সকলেই যা করে, শুধু সেটুকুতেই কি সব সময়ে মন ভরে? উল্লাস-উদ্যাপনেও বাকিদের থেকে একটু এগিয়ে থাকতে চাওয়া যে স্বভাবেই আছে। বছর শুরুর সকালটাতেও তাই আবার মন দিতে শুরু করেছে কলকাতার জেন-ওয়াই। না, সেই ছোটবেলার মতো চিড়িয়াখানা-নিক্কো পার্ক ভ্রমণ মোটেও নয়। অষ্টমীর অঞ্জলির মেজাজে পয়লা জানুয়ারি সক্কাল সক্কাল সেজেগুজে সপরিবার পাঁচতারা হোটেলে ব্রাঞ্চই এখন এ শহরে নতুন ট্রেন্ড। মেনুতে টার্কি-পর্ক-বিফ থাক বা হোক না শুধুই এশিয়ান কারি, বছর শুরুর ব্রাঞ্চের আহ্লাদই আলাদা।
সেই আহ্লাদটা আরও উস্কে দিতে এখন তৈরি বিভিন্ন পাঁচতারা হোটেলের কর্তৃপক্ষও। তাঁদের ভাবনা এখন আর সীমিত নয় হাতে গোনা ক্লায়েন্টের পছন্দে। বরং বুফের দাম থেকে মেনু, সবেতেই যথেষ্ট প্রাধান্য উৎসবমুখর বাঙালি মধ্যবিত্তের ভাললাগা। সাবেক তাজ বেঙ্গল, হোটেল হিন্দুস্থান ইন্টারন্যাশনালই হোক কিংবা হোক না শহরে নতুন আসা জে ডব্লিউ ম্যারিয়ট— বছর শুরুর ব্রাঞ্চ এখন সর্বত্র বিশেষ ভাবনা। খাদ্যরসিকদের মধ্যে ইতিমধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠা জে জব্লিউ কিচেনে মাছের তাই কারি, রোস্টেড স্প্রিং চিকেন, পিসতাশিও ফাজ কেক-এর মতো নানা সুস্বাদে সাজছে বছর বরণের বুফে। তাজ বেঙ্গলের নানা রেস্তোরাঁয় আবার স্পার্কলিং ওয়াইনের সঙ্গে রকমারি ভিন দেশি রান্নায় জমিয়ে তোলা যায় নতুন বছর। বছরের প্রথম দিনের শুরু আহারের আয়োজনে যত্নে সাজছে এইচএইচআই থেকে গেটওয়ের নানা রেস্তোরাঁও।
নতুন বছরের সকালে শহরের সাহেবিয়ানায় আরও একটু আস্কারা দিতে তৈরি সাবেক পার্ক স্ট্রিটের নস্ট্যালজিয়ায় মশগুল চ্যাপ্টার টু-ও। পুরনো কলকাতার সেই একমাত্র রেস্তোরাঁ পাড়ায় বছরের এই সময়টায় ঠিক যে সব খাবার হতো, সেই টার্কি-পর্ক চপ-বিফ স্টেককেই তারা তুলে ধরছে বর্ষবরণের মধ্যাহ্নভোজে। সঙ্গে থাকছে লাইভ জ্যাজ এবং ব্লুজ।
তাই বলে কি বছরের শেষের আয়োজনে কোনও ভাটা পড়েছে? মোটেও না। রেস্তোরাঁ মহল নিরাশ করছে না কাউকেই। সকালে আছি বলে কি রাতে থাকতে নেই নাকি! দক্ষিণ কলকাতার সেরাফিনায় টার্কি রুলাদ, শ্রিম্প রাভিওলির সঙ্গে রকমারি ককটেলের সুখে ভেসে দিব্যি বিদায় জানানো যায় বছরটাকে। সাদার্ন অ্যাভেনিউর হোয়াটস্আপ কাফে-তে আবার টার্কি-প্রেমে ডুব দেওয়া যায় বছর শেষের সন্ধ্যা থেকে। যত রকম ভাবে চেখে দেখতে ইচ্ছে হবে স্বাধের টার্কিকে, সবের উপায়ই আছে সেখানে। মেনল্যান্ড চায়না, ওহ! ক্যালকাটার সব শাখাতেও থাকছে এই দিনটার জন্য বিশেষ বুফের আয়োজন। আর যদি ইচ্ছে হয় রাতটা কাটুক সেই স্বাদেই, যে সব স্বাদে মজে কেটেছে বাকি বছরটা, তার ব্যবস্থা তো আছেই শহর জুড়ে ছোটবড় কত ঠেকে। তবে ভিড়ের ভয়ে যদি আড্ডা সাজে বাড়িতেই, ক্ষতি নেই তাতেও। বাইক-বোঝাই মনপসন্দ চিনা ও মোঘলাই খানা নিয়ে দোরগোড়ায় হাজির হবেন চাউম্যান কিংবা ওউধ ১৫৯০-এর দূত।