যন্ত্রণা কমিয়ে, কম সময়ে মেরুদণ্ডের অস্ত্রোপচার শহরে। ছবি: শাটারস্টক।
মিনতি মাকে হারায় জন্মের পর পরই। অভাবের সংসারে ঠাকুরমার কাছে বড় হওয়া। তিন বছরে শরীরে বাসা বাঁধে জটিল রোগ। শিরদাঁড়া দুমড়ে-মুচড়ে যায়। পায়ের জোর কমতে থাকে। শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। ২০১৫ সালের ২৫ মে ‘স্পাইন রিসার্চ ফাউন্ডেশন’ (এসআরএফ)-এ জটিল অস্ত্রোপচার হয় মিনতির। একরত্তির শরীরের ওজন তখন দশ কিলোগ্রামও ছাড়ায়নি। এত বড় অস্ত্রোপচারের জন্য প্রয়োজন পুষ্টিকর খাবার। শুরু হল লড়াই। এক দিকে ওজন বাড়ানোর চেষ্টা, অন্য দিকে মাথায় কাঁটার মুকুট লাগিয়ে শিরদাঁড়ায় সরাসরি ট্র্যাকশনের ব্যবস্থা। মিনতির খাওয়াদাওয়া থেকে চিকিৎসা সম্পূর্ন দায়িত্ব নেয় এসআরএফ। টানা দু’মাস ধরে হয় প্রথম অস্ত্রোপ্রচার। এক মাস পরে আবার হয় অস্ত্রোপচার। এ বার প্রায় সাত ঘণ্টা। অস্ত্রোপচার সফল হয়। নিজের পায়ে হেঁটে মিনতি ফিরে যায় নিজের বাড়ি। মিনতি এখন স্কুলে যায়। দৌড়দৌড়িও করে।
অনেকেই আছেন, যাঁরা মেরুদণ্ডের সমস্যায় ভুগছেন। দিন দিন পরিস্থিতি খারাপ হলেও কেউ অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারেন না, কেউ আবার কার পরামর্শ নেবেন, তাই বুঝতে পারেন না। মেরুদণ্ডের যে কোনও সমস্যার সমাধানের ঠিকানা হল এসআরএফ। অভিজ্ঞ চিকিৎসক এবং আধুনিক চিকিৎসার যন্ত্রপাতির সাহায্যে এই চিকিৎসাকেন্দ্রে সুস্থ হয়েছেন কয়েকশো রোগী। মেরুদণ্ডের কোনও অস্ত্রোপচার করাতে হলে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হয়, অনেকেই সেই টাকা দিয়ে চিকিৎসা করাতে পারেন না। গরিব, দুস্থ রোগীদের জন্যেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় এই সংস্থা।
মেরুদণ্ডের সমস্যায় জীবন অচল হয়ে পরে পৌলমীরও। আর পাঁচটা দিনের মতোই সে দিনও স্কুলে গিয়েছিল পৌলমী। ছুটির বেল পড়তেই ছটফটানি আর পাঁচটা দিনের মতোই। কিন্তু ঘটে গেল অঘটন। বন্ধুদের ধাক্কাধাক্কি সামলাতে না পেয়ে স্কুলের সিঁড়ি দিয়ে পড়ে গেল সে। ছুটে এলেন শিক্ষিকারা। সবাই মিলে দাঁড় করানোর চেষ্টা করলেও কোনও সাড় ছিল না পৌলমীর পায়ে। খবর পেয়ে ছুটে এলেন পৌলমীর বাবা-মা। চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হল পৌলমীকে। জানা গেল, বিপুল অর্থের প্রয়োজন অস্ত্রোপচারের জন্য। এ ক্ষেত্রেও এসআরএফ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। সেখানকার চিকিৎসকেরা জানান, ওর মেরুদণ্ডে বাসা বেঁধেছে যক্ষা রোগ। শুরু হয় চিকিৎসাপর্ব। সঙ্গে ফিজ়িওথেরাপি আর রিহ্যাপ। ছ’মাস পরে হাঁটতে শুরু করে পৌলমী। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে পায়ের জোর। ঘটনার পর প্রায় চার বছর পেরিয়ে গিয়েছে। পৌলমী এখন সুস্থ। পৌলমী এখন প্রথম বর্ষের ডাক্তারি ছাত্রী।