হু-সহ বিশ্বের প্রায় সব চিকিৎসকই বলছেন, এই অসুখ কোনও মতেই বায়ুবাহিত নয়।
কোভিড-১৯ বা চলতি কথায় করোনাভাইরাস না কি ‘এয়ারবোর্ন’ (বায়ুতে অনেকটা ছড়িয়ে যাওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন) হয়ে উঠছে! বাতাসে নাকি এর আয়ু বারো ঘণ্টা! গত দু’-এক দিন ধরেই এই ধরনের তথ্য ভেসে বেড়াচ্ছিল হোয়াটসঅ্যাপ-সহ নানা সোশ্যাল সাইটে। ভয়ের পরিবেশে এমন একটি তথ্য শঙ্কার পাল্লা ভারীই করছিল। এই তথ্যকে কেন্দ্র করে সংবাদমাধ্যমের একাংশে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়।
এই প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, ‘‘এমন ভুল ও ভুয়ো তথ্যে জনমনে ভয়ের সঞ্চার হচ্ছে। আসলে সংবাদমাধ্যমের একাংশ চিকিৎসা পরিভাষাটি বোঝেনি। সেখানেই তৈরি হয়েছে জটিলতা। হু-সহ বিশ্বের প্রায় সব চিকিৎসকই বলছেন, এই অসুখ কোনও মতেই বায়ুবাহিত নয়। সাধারণ মানুষের কাছে এই রোগ কখনওই বায়ুবাহিত হিসেবে দেখা দেবে না। ‘হু’-এর তরফেও এমন কোনও গাই়ডলাইন এখনও নেই।’’
আদতে কী?
স্পষ্ট জানালেন বক্ষরোগ বিশেষজ্ঞ সুমিত সেনগুপ্ত। তাঁর কথায়, ‘‘এই রোগ সাধারণ মানুষের কাছে কখনওই এয়ারবোর্ন নয়। ড্রপলেট যখনই বায়ুতে মেশে তা এক ফুটের দূরত্বে ছড়ায়। তাই একে অনেকে বায়ুবাহিত ভাবছেন। কিন্তু এয়ারবোর্ন অসুখ সেগুলোই, যারা তিন থেকে ছ’ফুটেরও বেশি দূরত্বে ছড়াতে পারে। কোভিড-১৯-এর অণুগুলো বড়। একেবারেই তা এয়ারবোর্নের মতো ছ’-ফুটের বেশি যেতে পারে না।’’
তিনি জানান, এ ছাড়া শ্বাসযন্ত্র কোনও ভাবে ব্যাক্টিরিয়া বা ভাইরাসের দ্বারা জটিল ভাবে আক্রান্ত হলে অনেক সময় রোগীকে ইনটিউবেশন (শ্বাসনালীতে নকল নল ঢুকিয়ে শ্বাসক্রিয়া সচল রাখার ব্যবস্থা) করা হয়। এই সময় অসুস্থ মানুষের জীবাণু বাতাসে ভেসে বেড়ায়। কিন্তু এটা একেবারেই ভেন্টিলেশনের মধ্যে হওয়ায় চার পাশে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়া আর কেউ থাকেন না। শুধু কোভিড-১৯ নয়, কিছু কিছু শ্বাসযন্ত্রের অসুখেই এটা হয়। এই সময় চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ‘এন৯৫’ মাস্ক পরতে হয়। এর সঙ্গে কোভিড-১৯ –এর বায়ুবাহিত হওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই।
আরও পড়ুন: কোভিড ১৯–এর ওষুধ এসে গেল? কী বলছেন চিকিৎসকরা
তবে এরই পাশাপাশি বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, যে হেতু করোনাভাইরাস কোভিড-১৯বারে বারে চরিত্র বদলাচ্ছে ও তার জিনগত মিউটেশন হচ্ছে, তাই শেষমেশ এই বদল কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।