Home Decoration

সাজেই বাড়ুক ঘরের বহর

নীড় ছোট, ক্ষতি নেই। দরকার প্ল্যানিং। কার্পেট এরিয়ার আয়তন বাড়িয়ে ফেলুন অন্দরসাজের মাধ্যমেই

Advertisement

সায়নী ঘটক

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২১ ০৮:০৩
Share:

লিভিং রুমে টার্কোয়েজ় ব্লু সোফার সঙ্গে মানানসই মাল্টিকালারড কার্পেট

নতুন ফ্ল্যাট নেওয়ার পরেই প্রথম চিন্তা মাথায় আসে, কী করে স্বল্প পরিসরের মধ্যে এমন ভাবে ফ্ল্যাটটি সাজিয়ে তোলা যায়, যাতে তা আকারে বড় দেখায়। কোথায় কোন আসবাবটি রাখলে জায়গার পরিপূর্ণ ব্যবহার সম্ভব, পুরনো আসবাবকে কী করে নতুন করে নেওয়া যায়— এ সব পরিকল্পনার মধ্য দিয়েই এগোতে থাকে ইন্টিরিয়র প্ল্যানিং।

Advertisement

শিল্পী মৈনাক দাস টালিগঞ্জে টু বিএইচকে ফ্ল্যাট কিনেছিলেন সে এলাকার সবচেয়ে পুরনো আবাসনে। তাই ফ্ল্যাটের গড়ন নিজের মতো করে যুগোপযোগী করে নিয়েছেন তিনি। ইন্টিরিয়র প্ল্যান করার শুরুতেই তাঁর মাথায় ছিল, কী করে ৯০০ স্কোয়্যার ফুটের ফ্ল্যাটকে এমন ভাবে সাজানো যায়, যাতে ফ্লোর এরিয়া বড় দেখায়। ব্যালকনিটি ঘরের থেকে আলাদা না করে ড্রয়িং অ্যান্ড ডাইনিং রুমের এক্সটেনশন করে নিয়েছেন মৈনাক। মাঝে দরজার বদলে সেপারেটর হিসেবে লাগিয়ে দিয়েছেন ভারী পর্দা, উপরে বক্স কভার করে। বারান্দার অংশটি ঘরের ভিতরে করে নেওয়ার পরে তাতে আলাদা রংও করে দিয়েছেন। ব্যালকনির ছোট্ট ফালিতে শরীর এলিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থাও যেমন আছে, পাশাপাশি সেটি কাজে লাগানো হয়েছে স্টোরেজ ইউনিট হিসেবেও। ফ্রেঞ্চ উইন্ডোর ও পারে রেলিংয়ের পরিধি বাড়িয়ে নিয়ে রাখা গাছের টব। ‘‘যাঁরা আমার বাড়িতে আসেন, তাঁরা মনে করেন এটা বারোশো কিংবা চোদ্দোশো স্কোয়্যার ফুটের ফ্ল্যাট বোধহয়। আসলে ব্যালকনির স্পেস ঘরের ভিতরে ঢুকিয়ে নেওয়ায় দেখতে বেশ বড় লাগে,’’ বললেন মৈনাক।

কাঠের মিস্ত্রিকে বরাত দিয়ে ঘরের বেশির ভাগ আসবাব তৈরি করানো। দেওয়াল জোড়া টিভি ইউনিট তৈরি করানো মাঝে যথাযথ স্পেস রেখে। এই ইউনিটের বিভিন্ন তাক তৈরিতে কাজে লেগে গিয়েছে অন্য আসবাব তৈরির বাড়তি কাঠ। এই জায়গার সিলিংয়ের উপরে একটি সুদৃশ্য ঝাড়বাতিও লাগিয়েছেন তিনি। এজরা স্ট্রিটের মার্কেট থেকেই তাঁর ঘরের বেশির ভাগ আলো কেনা। এথনিক দু’টি হ্যাঙ্গিং ল্যাম্প রয়েছে তাঁর মাস্টার বেডের ঠিক উপরে। ডাইনিংয়ের জায়গাটিও আলাদা ল্যাম্পশেডে সাজানো।

Advertisement

ডাইনিং এরিয়ার পরিধি বাড়িয়েছে লাগোয়া ঘর-বারান্দা

টিভি ইউনিটের উল্টো দিকেই বসার জায়গা। এল শেপড সোফা সেটটির রং আগে ছিল ধূসর। ‘‘পরে মনে হল, ঘরে একটু রঙের ছোঁয়া থাকলে মন্দ কী? সোফার কভার বদলে ফেললাম টার্কোয়েজ় ব্লু-তে, ঘরের লুকটাই পাল্টে গেল। সোফার সামনে যে ফ্লোর রাগ পাতা, সেটাও মাল্টিকালারড। রং মন ভাল রাখতে সাহায্য করে,’’ মত মৈনাকের। একই ভাবে নিজের শোয়ার খাটটিও নতুন করে সাজিয়ে নিয়েছেন তিনি। বছর সাত-আট আগে বানানো সাধারণ খাটটির ভোল পাল্টে গিয়েছে চারপাশে স্পঞ্জ আর ব্লু কভার লাগিয়ে। খাটে লাগিয়েছেন বেজ রঙা হেডবোর্ডও। স্টোরেজ ইউনিট সারা ঘরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হয়েছে এমন ভাবে, যাতে এক জায়গায় অনেক জিনিস একসঙ্গে রাখতে না হয়। ফলে কোনও একটা বড় স্টোরেজ ইউনিট ঘরের অনেকটা অংশ দখল করে নেই। বসার জায়গা, শোয়ার জায়গার নীচের অংশগুলিই হয়ে উঠেছে স্টোর স্পেস।

বারান্দায় বসার জায়গার নীচে স্টোরেজ ইউনিট

বিভিন্ন ঘরের ফ্লোর রাগ এবং কার্পেটগুলি মৈনাক বিশেষ অর্ডার দিয়ে আনিয়েছেন বারাণসী থেকে। কাঠের ডাইনিং টেবলের সঙ্গে কনট্রাস্ট করে হালকা রঙের কার্পেট বিছিয়েছেন সেখানে। আবার খাটের ঠিক সামনে রয়েছে ব্লু কভারের সঙ্গে মানানসই রঙের কার্পেট। যদিও সেগুলি বাঁচিয়ে রাখতে হয় তাঁর আদরের পোষ্য ‘পুচু’র নাগাল থেকে!

মৈনাকের ঘর সাজানোর উপকরণে বেশি করে চোখে পড়ে বুদ্ধমূর্তি, পাখি, মাছ আর পেঁচার বিভিন্ন রূপ। বুদ্ধমূর্তিগুলি কলকাতা, ব্যাংকক এবং দার্জিলিং থেকে সংগ্রহ করা। ‘‘ঘরে কোথায় কী রাখব, তা মাথায় রেখেই জিনিস কিনি। দামি আসবাব বা শো-পিসেই যে ভাল ডেকরেশন সম্ভব, এ কথায় বিশ্বাস করি না। সৌন্দর্যবোধই আসল।’’

মিনিম্যালিস্টিক টিভি ইউনিট

শো পিসের পাশে স্থান পেয়েছে অজস্র ইনডোর প্লান্ট, যা মাঝে মাঝেই বদলে ফেলা হয়। ‘‘ছোট ছোট জিনিস পাল্টে নতুন লুক আনার চেষ্টা করি, যাতে একঘেয়ে না লাগে। কম খরচে বদলে ফেলা যায় ওয়ালপেপারও,’’ পরামর্শ মৈনাকের। হোয়াইট অন হোয়াইট টেক্সচার্ড ওয়ালপেপার বসার ও শোয়ার ঘরের দেওয়ালে। বসার ঘরের দেওয়াল জুড়ে লাগানো ওয়াল প্লেটস, প্রতিটিতেই পাখির নকশা। এ ধরনের ডেকর আইটেমের আইডিয়া পাওয়ার সহজ উপায় ইনস্টাগ্রাম।

অতিমারি যেহেতু বাড়িতেই বেশির ভাগ সময় কাটাতে বাধ্য করেছে, তাই গৃহকোণটিই সাজিয়ে নিন মনের মতো করে। যাতে কফিশপ, রেস্তরাঁর বদলে আপনার ঘরটিই হয়ে ওঠে আরামের আড্ডাস্থল।

ছবি: সহেলি দাস মুখোপাধ্যায়

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement