বাজির ধোঁয়া থেকে শ্বাসনালীর প্রদাহ হওয়ার সম্ভাবনা ষোলো আনা।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে দিল্লিতে বাজির বাজারে কিছুটা ভাঁটা পড়লেও কলকাতা-সহ বাংলায় বাজার যথেষ্টই জমজমাট। কিছুটা বাধ সেধেছে নিম্নচাপের বৃষ্টি। তাতে কী! জমিয়ে রাখা বাজি জ্বালানো হবে ভাইফোঁটায়। কিন্তু কিছু সাবধানতা তো নিতেই হবে। একেই আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় ডেঙ্গি, চিকুনগুনিয়া-সহ ভাইরাল ফিভারের প্রায় মহামারি লেগেছে। এর সঙ্গে বাজির ধোঁয়া নাকে গেলে শ্বাসনালীর সমস্যা, কাশি, অ্যাজমা-সহ ফুসফুসের অসুখের প্রবণতা বাড়বে। শব্দবাজির ডেসিবল বেঁধে দেওয়া হলেও এখনও পর্যন্ত আলোর বাজির দূষণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। এই গোলমেলে আবহাওয়ায় জ্বরের প্রকোপ চলছে। জ্বরের সঙ্গে আছে শ্বাসনালীর সংক্রমণ। বাজির ধোঁয়ায় সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। তবে কয়েকটি সাবধানতা মেনে চললে অনেক সমস্যার হাত এড়ানো যায়। আসুন জেনে নেওয়া যাক।
বাজির ধোঁয়া থেকে শ্বাসনালীর প্রদাহ হওয়ার সম্ভাবনা ষোলো আনা। সাধারণ মানুষ তো বটেই, যাদের ধোঁয়া ধুলোয় অ্যালার্জি বা অ্যাজমার প্রবণতা আছে, সিওপিডি, আইএলডি-সহ শ্বাসনালীর অসুখ আছে, বা বারে বারে অ্যালার্জি জনিত হাঁচি কাশির সমস্যা হয়, তাঁরা বাজির ধোঁয়া থেকে সাবধানে থাকবেন। আলোর বাজির নীল আলোর জন্যে ব্যবহার করা হয় তামার যৌগ। আর সবুজ আলোর জন্যে বেরিয়ামের যৌগ। এই দু’টিই আগুনে জ্বলে অত্যন্ত ক্ষতিকর বিষাক্ত গ্যাস তৈরি করে। আমাদের শ্বাসনালীতে গিয়ে এই সব গ্যাসীয় পদার্থ ইরিটেশন সৃষ্টি করে। তাই ধোঁয়া এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ।
ইদানীং বাচ্চাদের অ্যাজমার প্রবণতা বেড়েছে। যে সব বাচ্চারা হাঁপানিতে ভুগছে, বাজি জ্বালানোর আগে তাদের ইনহেলার দিয়ে নিলে ভাল। এমনিতেই ঋতু পরিবর্তনের এই সময়টাতে হাঁচি, কাশি, জ্বর, সর্দির প্রবণতা বাড়ে। তার সঙ্গে ধোঁয়ার প্রকোপে সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে। তবে নিম্নচাপের বৃষ্টিতে ধোঁয়া ধুলোর প্রকোপ এ বার কিছুটা কম। এটাই রক্ষে। মুম্বই-এর ন্যাশনাল হিস্ট্রি সোসাইটি ল্যাবরেটরি সূত্রে জানা গেছে যে, বিভিন্ন আতসবাজিতে কপার আর বেরিয়াম ছাড়াও যে সব যৌগ ব্যবহার করা হয়, সেগুলিও বাতাসে দূষণের মাত্রা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে নীচের দিকে থিতিয়ে পড়ে। ফলে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিশুরা। ক্যাডমিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম-সহ নানান ভারী যৌগ আর সালফারের যৌগ তো আছেই। বাজি জ্বালানোর পরে যে ধোঁয়া বেরোয় তার বেশিরভাগই নীচের দিকে থিতিয়ে যায়। এ সবই আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
কালিপুজোর সময় প্রায় তিন চার দিন ধরে বাতাসে ভাসমান দূষণ কণার ঘনত্ব স্বাভাবিকের তুলনায় বহুগুণ বেড়ে যায়। আর এই কারণে শ্বাসনালীর অসুখের প্রবণতা ভয়ঙ্কর বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বাজির ধোঁয়ায় থাকা সালফার ডাই অক্সাইড শ্বাসনালীর প্রদাহ দৃষ্টি করার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের অ্যালার্জি এমনকী পিগমেন্টেশনও সৃষ্টি করতে পারে। বাজির ধোঁয়া থেকে নাইট্রোজেনের বিভিন্ন অক্সাইড নির্গত হয়। বিশেষ করে নাইট্রিক অক্সাইড শ্বাসনালীর প্রদাহ বাড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি হাঁপানি-সহ সব ধরনের ফুসফুসের অসুখ বাড়িয়ে দেয়। বাজির ধোঁয়ার সব থেকে ক্ষতিকর উপাদান হল কার্বন মনোক্সাইড। এটি চট করে হিমোগ্লোবিনের সঙ্গে মিশে গিয়ে শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ কমিয়ে দেয়। ফলে অসুস্থতা বেড়ে যায়। সিসা বা লেড থেকে স্নায়ুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশি মাত্রায় জিঙ্ক শরীরে প্রবেশ করলে বমির প্রবণতা বাড়ে।
তাই আগামী দিনে দীপাবলি হোক শব্দহীন, দূষণহীন। দেশের পরিবেশমন্ত্রী তথা চিকিৎসক হর্ষ বর্ধন জানিয়েছেন, কম দূষণ হয় এমন আলোর বাজি তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। আসুন, তত দিন আমরা মাটির প্রদীপ, টুনি বাল্ব্ আর ফানুস দিয়ে আলোর উৎসব দীপাবলী পালন করি।