কিছু গল্প বারবার শুনলেও পুরনো হয় না। যেমন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই জমকালো জুতোর গল্পটা। একটা সময়ে শোনা যাচ্ছিল, দেবেন্দ্রনাথের বিষয়-সম্পত্তির অবস্থা ভাল নয়। এক রাজবাড়ির জলসায় তিনি কী পরে আসবেন, তা নিয়ে চলছিল বিস্তর জল্পনা। দেবেন্দ্রনাথ এলেন আপাদমস্তক সাদা পোশাকে। পায়ে ছিল ছোট ছোট মুক্তোখচিত মখমলের জুতোজোড়া। তাঁর সেই সাজ তখন ‘টক অব দ্য টাউন’।
খুব সাদামাঠা সাজের সঙ্গে যদি জম্পেশ একটা জুতো পরা যায়, তা হলে পুরো লুকটাই অন্য রকম হয়ে যায়। চপ্পল, পাম্পস, হাইহিলস তো সব মহিলার শু ক্যাবিনেটেই শোভা পায়। কিন্তু সেগুলো যদি লেদার, ল্যাটেক্স মেটেরিয়ালের বদলে ইক্কত, আজরখ বা কলমকারির হয়? তেমন জুতো আপনার সাজকে বাকিদের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা করে দেবে। ভাবছেন এমন জুতো টেকসই হবে কি না! আসলে এগুলো তৈরি হয় মজবুত কাঠামোর উপরেই। তা ছাড়া শৌখিন জুতো উৎসব-অনুষ্ঠানের জন্য তুলে রাখলেই তার আয়ু বাড়ে বেশি।
কাপড় কথা বলে
ভারতীয় ফ্র্যাবিকই এখন ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির মধ্যমণি। ডিজ়াইনাররাও আন্তর্জাতিক দরবারে এ দেশের ইক্কত, আজরখ, কলমকারি, বেনারসি, বাঁধনি, চিকনের মতো কাজ তুলে ধরছেন। জুতো তৈরি হচ্ছে এই সব মেটিরিয়ালের। চপ্পল, বুটস, পাম্পস— যে কোনও রকম জুতোতেই দেশীয় ফ্যাব্রিক, প্রিন্টের ব্যবহার হচ্ছে। জুতো সাধারণত লেদার, কৃত্রিম লেদার, ল্যাটেক্সে তৈরি হয়। কাপড়ের তৈরি জুতোয় বদল আসছে বহিরঙ্গেই, ভিতরের জিনিসটি একই রকম থাকছে। অনেক সময়ে চামড়া আর প্রিন্ট মিলিয়ে জুতো তৈরি হয়। এই ট্রেন্ডে আবার সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ইক্কত। চলতি কথায় ইক্কতের কাপড় বলা হলেও, এটি আসলে এক ধরনের বুনন। সিল্ক, সুতি— এই দু’ধরনের ফ্যাব্রিকেই ইক্কতের কাজ হয়। এর পাশাপাশি আজরখ, কলমকারি প্রিন্টও বেশ জনপ্রিয় এ ক্ষেত্রে। জমাট নকশা করা রোজকার পরার চপ্পল বা জুতোয় জরির কাজ পুরনো ট্রেন্ড। তবে জরির কাজের কোলাপুরি চপ্পল এখনও ট্রেন্ডি। পঞ্জাবের ফুলকারিকাজও ইদানীং উঠে আসছে জুতোর সাজে।
বাদ নেই বেনারসি, কাঞ্জিভরম-সহ অন্যান্য উজ্জ্বল সিল্কও।
সাজে বৈচিত্র
অফিসের বিশেষ দিনের জন্য আপনি প্যাস্টল শেডের পালাজ়ো আর টপ বেছেছেন। তার সঙ্গে আজরখের তৈরি অ্যাঙ্কল লেংথ বুটস পরতে পারেন। মিড লেংথ শর্ট ড্রেসের সঙ্গে ইক্কত আর লেদারের মিলমিশে তৈরি জুতো আপনার সাজে বাড়তি স্টেটমেন্ট যোগ করবেই। গরমের দিন আসছে, সামার ড্রেসের সঙ্গে বাঁধনি ফ্লিপফ্লপ মন্দ লাগবে না। কলমকারি প্রিন্টের চপ্পলও গরমের দিনে বেশ আরামদায়ক হবে।
ওয়েস্টার্ন ক্যাজ়ুয়ালের সঙ্গে মানানসই ভারতীয় প্রিন্ট, ফ্যাব্রিকের জুতো টিমআপ করলে সাজে বৈচিত্র আসবেই। জুতোকে যদি স্টেটমেন্ট করতে চান, তা হলে পোশাক সাদামাঠা হওয়াই বাঞ্ছনীয়। তবেই না আপনার পায়ের দিকে সকলের নজর আসবে।
বিয়ের দিনে ভারী বেনারসির সঙ্গে জড়ি বা স্টোনের কাজ করা সেই পুরনো স্টাইলের জুতোর বদলে বেনারসি কাজের হাই হিল বা ফ্ল্যাট পাম্পস পরতে পারেন। দক্ষিণী সিল্কের তৈরি জুতোও মানিয়ে যাবে। লেহঙ্গা বা কারুকাজ করা সালোয়ার-পালাজ়োর সঙ্গে বেনারসি, ফুলকারি কাজ, ইক্কত সিল্কের তৈরি জুতো পরতে পারেন। পায়ের সাজেও আভিজাত্য ফুটে উঠবে।
কোথায় পাওয়া যাবে
ডিজ়াইনার স্টোরগুলোয় খোঁজ করতে পারেন। তবে অনলাইন সাইটগুলোয় এই ধরনের জুতোর অনেক ভ্যারাইটি পেয়ে যাবেন। বিভিন্ন মেলায় এই ধরনের জুতোর সম্ভার দেখতে পাবেন।
মডেল: অলিভিয়া সরকার
ছবি: শুভদীপ সামন্ত; মেকআপ: প্রিয়া গুপ্ত
পোশাক ও জুতো: অভিষেক দত্ত
লোকেশন: ক্লাব ইকোহাব, রাজারহাট