— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
দু’মিনিটের পথ কিংবা দীর্ঘ পথ, প্রয়োজন হোক বা প্যাশন, অনেকের কাছেই মোটরবাইকের বিকল্প নেই। এ দেশে চারচাকার চেয়ে দু’চাকার বিক্রি বেশি। শখের কথা স্বতন্ত্র, কিন্তু পেশার স্বার্থে রোজ মোটরবাইক, স্কুটি চালালে একটা বয়সের পরে বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা হতে পারে। আবার কিছু অসুখে বাইক চালানো এড়িয়ে যাওয়াই ভাল।
কী কী সমস্যা হতে পারে
এই বিষয়ে অর্থোপেডিক ডা. সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘স্পন্ডিলোসিস বা স্পন্ডিলোলিস্থেসিসের সমস্যা থাকলে দীর্ঘ সময় ধরে মোটরবাইক চালালে ব্যাক পেন বাড়বেই এবং তার থেকে অন্য সমস্যাও তৈরি হতে পারে। জয়েন্ট পেন থাকলে টু-হুইলার চালাতে ততটা সমস্যা নেই। তবে বয়স্করা ভারী বাইকের বদলে স্কুটার ব্যবহার করতে পারেন। বিশেষ করে যাদের হাঁটুর সমস্যা আছে বা হাঁটু প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। মেরুদণ্ডের সমস্যা থাকলে, স্পাইনাল সার্জারি হলে মোটরবাইক চালানো এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। স্লিপ ডিস্কের ক্ষেত্রে, সমস্যা কতটা গুরুতর তার উপর নির্ভর করছে।’’
একটানা দীর্ঘক্ষণ মোটরবাইক চালালে শরীরে অন্যান্য সমস্যাও হতে পারে। এই বিষয়ে মেডিসিনের ডা. অরুণাংশু তালুকদার বললেন, ‘‘বাইক চালানোর সময়ে হাঁটু অনেকক্ষণ ভাঁজ করে রাখতে হয়, এতে পরে আর্থ্রাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। দুটো হ্যান্ডেল জোরে চেপে ধরে থাকার ফলে হাতে সমস্যা দেখা দেয়। যেমন, লিখতে বা কোনও কিছু গ্রিপ করতে অসুবিধে হয়। বাইকারদের নিয়ম করে হাতের আঙুলের ব্যায়াম করতে হবে। যেমন, দু’হাতের আঙুল পরস্পরের ফাঁকে ঢুকিয়ে উল্টে করে চাপ দেওয়া বা মুঠোয় সফট বল নিয়ে প্রেস করা... এতে রক্ত চলাচল ভাল ভাবে হবে। মাংসপেশি স্টিফ হবে না। যাঁরা রোজ অনেকটা পথ মোটরবাইক চালান তাঁদের নিয়মিত কিছু ব্যায়াম করা প্রয়োজন।’’
প্রয়োজনীয় ব্যায়াম
বাইকারদের এক্সারসাইজ় জরুরি, বলছেন ফিটনেস ট্রেনার সৌমেন দাসও। তিনি বললেন, ‘‘দীর্ঘ সময় বসে থাকার ফলে ভুঁড়ি হয়, ওজন বাড়ে। যার জেরে হাঁটুতে ব্যথা হয়। নিয়মিত বাইক চালালে ৩০-৩৫ বছর বয়সেই কোমরের ব্যথা জানান দেয়। বাইকারদের প্রবণতা হল, সামান্য দূরত্বেও তাঁরা বাইকেই যাবেন। হাঁটায় ভীষণ অনীহা।’’ মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে বাইকারদের নিয়মিত কিছু ব্যায়ামের পরামর্শ দিলেন তিনি।
উচ্চতা ও শরীর বুঝে মোটরবাইক নির্বাচন
বাইকারের নিজের উচ্চতা, দেহের ওজন ও গঠন বুঝে বাহন নির্বাচন করা জরুরি। ‘‘আমাদের দেশের রাস্তা তেমন ভাল নয়। ঝাঁকুনি খেতেই হয়। তাই বাইক কেনার সময়ে তার ফিচারগুলো দেখে নেওয়া জরুরি,’’ বললেন ডা. মুখোপাধ্যায়। তিনি জোর দিলেন কমফর্টেবল ব্যাকসার্পোট, লেস জার্কিং বাইক ব্যবহারে। মোটরবাইক প্রস্তুতকারক সংস্থার বিজ্ঞাপনে প্রভাবিত না হয়ে নিজের প্রয়োজনকে গুরুত্ব দিন। স্ট্যান্ডার্ড, ক্রুজ়ার, স্পোটর্স— নানা অপশন। যাঁরা নিয়মিত দু’চাকা চালান, তাঁদের পক্ষে স্ট্যান্ডার্ড বাইকই ভাল। সেখানে পিঠ সোজা রেখে চালানো যায়। ক্রুজ়ার বা স্পোর্টস বাইকে সিট ও হ্যান্ডেলের পজ়িশন এমন থাকে যে, সামনে অনেকটা ঝুঁকে চালাতে হয়। এতে শিরদাঁড়ার উপরে চাপ পড়ে। দীর্ঘক্ষণ ও ভাবে থাকলে পিঠে-কোমরে ব্যথা হতে পারে। বাইক কেনার পরে সিটের উচ্চতা, হ্যান্ডেল, ফুট রেস্টের পজ়িশন নিজের সুবিধেমতো অ্যাডজাস্ট করে নিতে হবে।