— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
কোমরের নীচের দিকে যন্ত্রণা। সেখান থেকে হিপ, থাই হয়ে পা দিয়ে ব্যথা পৌঁছে যাচ্ছে পায়ের পাতা পর্যন্ত। এর কারণ হতে পারে সায়াটিক নার্ভ। মানবদেহের দীর্ঘতম এই নার্ভ কোমর থেকে শুরু হয়ে হিপ ও দুই পায়ের পিছন দিক দিয়ে চলে যায় পায়ের পাতা পর্যন্ত। এই নার্ভ চেপে থাকার কারণে পায়ে জ্বালা জ্বালা, অসাড় ভাব, পেশিতে দুর্বলতা, হঠাৎই ঝনঝনে ব্যথা বা সুচ ফোটানোর মতো ব্যথার অনুভূতি হতে পারে।
ফিটনেস বিশেষজ্ঞ গুরুপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “সায়াটিকার ব্যথার জেরে স্বাভাবিক চলাফেরা ব্যাহত হয়। এমনকি, দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলেও এই ব্যথার প্রকোপ বাড়ে। ব্যথা কমাতে পেনকিলার, ঠান্ডা-গরম সেঁক দিয়ে প্রাথমিক ভাবে কিছুটা উপকার পেলেও দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয় এগুলি। বরং সায়াটিকার ব্যথা কমাতে উপকারে আসতে পারে যোগব্যায়াম ও স্ট্রেচিং।” প্রাথমিক পর্যায় থেকেই এগুলি শুরু করলে ব্যথা জয় করা সম্ভব বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
সায়াটিকার ব্যথার অন্যতম কারণ হিসেবে অতিরিক্ত ওজনকে চিহ্নিত করছেন ফিটনেস বিশেষজ্ঞ সৌমেন দাস। বিশেষত তলপেট, হিপ ও থাইয়ে বেশি ওজন থাকলে এই ব্যথার সমস্যা বাড়তে পারে কারণ তাতে সায়াটিক নার্ভের উপরেও চাপ বেড়ে যায়। তাঁদের ক্ষেত্রে ব্যথা কমানোর প্রথম ধাপ হল ওজন কমানো। কিন্তু ব্যথা থাকাকালীন জোরে হাঁটা, দৌড়নো বা জগিংয়ের মতো কোনও ‘হাই ইমপ্যাক্ট’ ব্যায়াম করা যায় না। সৌমেন জানাচ্ছেন, তার বদলে চেয়ারে বসেই এরোবিকস, জগিংয়ের পরামর্শ দেওয়া হয়। শুয়েও বেশ কিছু ব্যায়ামে হিপ ও থাইয়ের ওজন কমানো সম্ভব। তার পরে বিশেষ কিছু যোগব্যায়াম ও হ্যামস্ট্রিং, কাফ ও গ্লুট মাসলের স্ট্রেচিংয়ের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে ব্যথামুক্তির দিকে নজর দেওয়া যেতে পারে।
— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
কী কী ব্যায়ামে উপশম
এ ছাড়া, যাঁরা দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করেন, তাঁদের চেয়ারে সোজা হয়ে বসার চেষ্টা করতে হবে সব সময়ে। নিচু হয়ে কিছু তোলার সময়ে পেট ও কোমরের পেশি মেরুদণ্ডকে ধরে রাখে। সব সময়ে ঝুঁকে বসলে ওই সব পেশির উপরে চাপ বেশি পড়ে, ফলে শুরু হয় কোমরের ব্যথা। এ সব ক্ষেত্রে চেয়ারে বসেই হালকা কিছু স্ট্রেচ করার মাধ্যমে উপকার পাওয়া যেতে পারে।
দুই হাতের তালু দুই হাঁটুর উপরে রেখে কোমর থেকে সামান্য সামনে ঝুঁকে শ্বাস নিয়ে কোমর থেকে ঘাড় পর্যন্ত পিছন দিকে বাঁকিয়ে ছাদের দিকে তাকাতে হবে। বাঁ হাঁটু ডান পায়ের উপরে রাখুন। হাত থাইয়ের পাশে বা চেয়ারের হাতলে রেখে ভর দিয়ে বাঁ দিকে পিছনে ঘুরে তাকানোর চেষ্টা করুন। একই ভাবে উল্টো দিকেও করতে হবে এই স্ট্রেচিং। চেয়ারের পিছনে হাত রেখে দাঁড়ান। ডগ-বার্ড পোজ়ের মতো বাঁ পা একটু হাঁটু থেকে ভেঙে ব্যাক স্ট্রেচ করুন। এ বার ডান হাত উপরের দিকে তুলতে হবে। তার পর পিছনের দিকে সামান্য আর্চ করে পাঁচ সেকেন্ড থাকতে হবে। অন্য হাতেও একই ভাবে করুন এই ব্যায়াম।
সাবধানতা
কোনও ব্যায়ামে ঝটকা দিয়ে কোনও পজ়িশনে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। ব্যথা অনুভব না করে যতটা পজ়িশনে আসা যায়, ততটাই করুন। নিয়মিত অভ্যেসের ফলে পোজ় ভাল করে রপ্ত হবে। প্রথমে মাসখানেক পাঁচ বার করে এবং তার পরে তা বাড়িয়ে সাত বার ও আরও কিছু দিন পরে তা দশ বার করে করা যেতে পারে। তবে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ব্যায়াম শুরু করবেন।