Sciatica Pain

ব্যায়ামেই মুক্তি সায়াটিকার ব্যথা থেকে

বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো নিয়মিত কিছু ব্যায়ামের অভ্যেস করতে পারেন। তা হলেই কমবে ব্যথা।

Advertisement

সুনীতা কোলে

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২৪ ০৫:২০
Share:

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

কোমরের নীচের দিকে যন্ত্রণা। সেখান থেকে হিপ, থাই হয়ে পা দিয়ে ব্যথা পৌঁছে যাচ্ছে পায়ের পাতা পর্যন্ত। এর কারণ হতে পারে সায়াটিক নার্ভ। মানবদেহের দীর্ঘতম এই নার্ভ কোমর থেকে শুরু হয়ে হিপ ও দুই পায়ের পিছন দিক দিয়ে চলে যায় পায়ের পাতা পর্যন্ত। এই নার্ভ চেপে থাকার কারণে পায়ে জ্বালা জ্বালা, অসাড় ভাব, পেশিতে দুর্বলতা, হঠাৎই ঝনঝনে ব্যথা বা সুচ ফোটানোর মতো ব্যথার অনুভূতি হতে পারে।

Advertisement

ফিটনেস বিশেষজ্ঞ গুরুপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “সায়াটিকার ব্যথার জেরে স্বাভাবিক চলাফেরা ব্যাহত হয়। এমনকি, দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলেও এই ব্যথার প্রকোপ বাড়ে। ব্যথা কমাতে পেনকিলার, ঠান্ডা-গরম সেঁক দিয়ে প্রাথমিক ভাবে কিছুটা উপকার পেলেও দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয় এগুলি। বরং সায়াটিকার ব্যথা কমাতে উপকারে আসতে পারে যোগব্যায়াম ও স্ট্রেচিং।” প্রাথমিক পর্যায় থেকেই এগুলি শুরু করলে ব্যথা জয় করা সম্ভব বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

সায়াটিকার ব্যথার অন্যতম কারণ হিসেবে অতিরিক্ত ওজনকে চিহ্নিত করছেন ফিটনেস বিশেষজ্ঞ সৌমেন দাস। বিশেষত তলপেট, হিপ ও থাইয়ে বেশি ওজন থাকলে এই ব্যথার সমস্যা বাড়তে পারে কারণ তাতে সায়াটিক নার্ভের উপরেও চাপ বেড়ে যায়। তাঁদের ক্ষেত্রে ব্যথা কমানোর প্রথম ধাপ হল ওজন কমানো। কিন্তু ব্যথা থাকাকালীন জোরে হাঁটা, দৌড়নো বা জগিংয়ের মতো কোনও ‘হাই ইমপ্যাক্ট’ ব্যায়াম করা যায় না। সৌমেন জানাচ্ছেন, তার বদলে চেয়ারে বসেই এরোবিকস, জগিংয়ের পরামর্শ দেওয়া হয়। শুয়েও বেশ কিছু ব্যায়ামে হিপ ও থাইয়ের ওজন কমানো সম্ভব। তার পরে বিশেষ কিছু যোগব্যায়াম ও হ্যামস্ট্রিং, কাফ ও গ্লুট মাসলের স্ট্রেচিংয়ের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে ব্যথামুক্তির দিকে নজর দেওয়া যেতে পারে।

Advertisement

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

কী কী ব্যায়ামে উপশম

  • পেলভিক ব্রিজ: চিত হয়ে শুয়ে দু’টি পা একসঙ্গে ভাঁজ করে পায়ের পাতা মাটিতে রাখতে হবে। হাত থাকবে কোমরের পাশে, সোজা। শ্বাস নিয়ে মেরুদণ্ড কোমর থেকে যতটা উপরে তোলা যায়, তা তুলতে হবে। থাই, কোমর থেকে ঘাড়ের দিকে পিঠ অবধি অংশ থাকবে উপরে। দেহের ভর থাকবে পা, হাত ও ঘাড়ের উপরে। পাঁচ সেকেন্ড এই ভাবে থেকে শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে ধীরে ধীরে আগের পজ়িশনে আসতে হবে।
  • পেলভিক টিল্ট: ব্রিজ করার মতো শুয়ে পড়তে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, এ সময়ে যেন কোমর থেকে হিপ পর্যন্ত অংশটি উপরে থাকে। কোমর পর্যন্ত পুরো পিঠের অংশ মেঝেতে ঠেকানো থাকবে। শ্বাস ছেড়ে পেটের পেশিগুলি শক্ত করে ধীরে ধীরে ওই অংশটি নীচের দিকে নামিয়ে মেঝেতে ঠেকিয়ে রাখতে হবে পাঁচ সেকেন্ড।
  • ভুজঙ্গাসন: প্রথমে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়তে হবে। থুতনি মেঝেয় ঠেকিয়ে, দুটো হাত ভাঁজ করে কাঁধের পাশে, তালু মেঝেতে ঠেকিয়ে রাখতে হবে। তালু, ঘাড়, পিঠের উপরিভাগ ও কোমরের জোর একসঙ্গে ব্যবহার করে শ্বাস নিতে নিতে ধীরে ধীরে পিঠ বেঁকিয়ে হাত সোজা করার চেষ্টা করতে হবে। উপরের দিকে তাকানোর চেষ্টা করে পুরো মেরুদণ্ড স্ট্রেচ করার চেষ্টা করতে হবে। পাঁচ সেকেন্ড থাকার পরে শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে নীচের দিকে নেমে আসতে হবে।
  • নি টু চেস্ট: দু’টি পা একসঙ্গে ভাঁজ করে পায়ের পাতা মাটিতে রাখতে হবে। হাত দেহের পাশে রেখে চিৎ হয়ে শুতে হবে। এ বার শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে বাঁ পা ভাঁজ করে বুকের দিকে টেনে আনতে হবে। দু’টি হাত থাইয়ের পিছনে পেশির উপরে রেখে বুকের উপরে পা চেপে রাখতে হবে। পাঁচ সেকেন্ড পরে পা আগের পজ়িশনে ফিরিয়ে দিতে হবে। একই ভাবে ডান পায়েও এই ব্যায়াম করতে হবে।
  • লাইন সাইড রোটেশন: পা দুটো আগের ব্যায়ামের মতো রাখতে হবে। দুটো হাত কাঁধ বরাবর সোজা করে রাখতে হবে। শ্বাস নিয়ে দুটো হাঁটু একসঙ্গে ডান দিকে নিয়ে আসতে হবে। কোমর থেকে তখন সামান্য টুইস্ট হবে। এর পাশাপাশিই ঘাড় বাঁ দিকে ঘুরিয়ে বাঁ হাতের আঙুলের দিকে তাকাতে হবে। এই সময়ে কোমর ও পিঠ স্ট্রেচ হবে। এই স্ট্রেচ খুব আরামদায়ক। এই ভাবে পাঁচ সেকেন্ড থাকার পরে বাঁ দিকে হাঁটু ঘুরিয়ে ডান দিকে তাকাতে হবে।
  • বার্ড-ডগ পোজ: দুই হাত ও পায়ের উপরে ভর দিয়ে উপুড় হয়ে পজ়িশনে আসতে হবে। হাত কাঁধ থেকে টানটান অবস্থায় তালু মেঝের উপরে থাকবে। হাঁটু থেকে পা ভাঁজ করা অবস্থায় থাকবে। হাঁটু এবং হাঁটু থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত অংশ মেঝের উপরে থাকবে। অর্থাৎ পিঠ যেন টেবিলের উপরিতল এবং হাত-পা যেন পায়া। এই অবস্থায় শ্বাস নিয়ে বাঁ পা আস্তে আস্তে কোমর থেকে পিছন দিকে সোজা করে তুলতে হবে। একই সঙ্গে ডান হাত মেঝে থেকে সরিয়ে সামনের দিকে প্রসারিত করতে হবে। অর্থাৎ এই সময়ে হাত-পিঠ-পা একই সরলরেখায় থাকবে। এই ভাবে পাঁচ সেকেন্ড থাকার পরে প্রথম পজ়িশনে ফিরে এসে একই ভাবে অন্য দিকে ব্যায়ামটি করতে হবে। এটি করতে গিয়ে হাঁটুতে লাগলে তলায় একটি চাদর বা তোয়ালে রাখা যেতে পারে।

এ ছাড়া, যাঁরা দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করেন, তাঁদের চেয়ারে সোজা হয়ে বসার চেষ্টা করতে হবে সব সময়ে। নিচু হয়ে কিছু তোলার সময়ে পেট ও কোমরের পেশি মেরুদণ্ডকে ধরে রাখে। সব সময়ে ঝুঁকে বসলে ওই সব পেশির উপরে চাপ বেশি পড়ে, ফলে শুরু হয় কোমরের ব্যথা। এ সব ক্ষেত্রে চেয়ারে বসেই হালকা কিছু স্ট্রেচ করার মাধ্যমে উপকার পাওয়া যেতে পারে।

দুই হাতের তালু দুই হাঁটুর উপরে রেখে কোমর থেকে সামান্য সামনে ঝুঁকে শ্বাস নিয়ে কোমর থেকে ঘাড় পর্যন্ত পিছন দিকে বাঁকিয়ে ছাদের দিকে তাকাতে হবে। বাঁ হাঁটু ডান পায়ের উপরে রাখুন। হাত থাইয়ের পাশে বা চেয়ারের হাতলে রেখে ভর দিয়ে বাঁ দিকে পিছনে ঘুরে তাকানোর চেষ্টা করুন। একই ভাবে উল্টো দিকেও করতে হবে এই স্ট্রেচিং। চেয়ারের পিছনে হাত রেখে দাঁড়ান। ডগ-বার্ড পোজ়ের মতো বাঁ পা একটু হাঁটু থেকে ভেঙে ব্যাক স্ট্রেচ করুন। এ বার ডান হাত উপরের দিকে তুলতে হবে। তার পর পিছনের দিকে সামান্য আর্চ করে পাঁচ সেকেন্ড থাকতে হবে। অন্য হাতেও একই ভাবে করুন এই ব্যায়াম।

সাবধানতা

কোনও ব্যায়ামে ঝটকা দিয়ে কোনও পজ়িশনে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। ব্যথা অনুভব না করে যতটা পজ়িশনে আসা যায়, ততটাই করুন। নিয়মিত অভ্যেসের ফলে পোজ় ভাল করে রপ্ত হবে। প্রথমে মাসখানেক পাঁচ বার করে এবং তার পরে তা বাড়িয়ে সাত বার ও আরও কিছু দিন পরে তা দশ বার করে করা যেতে পারে। তবে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ব্যায়াম শুরু করবেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement