সৌরসেনী মৈত্র। ছবি: দেবর্ষি সরকার।
‘‘চার বছরে পা দেওয়া মেয়েকে মা যখন সবুজ পাড় বসানো বাসন্তী রঙের শাড়ি পরিয়ে দিল, তখন থেকেই যেন সরস্বতী পুজোয় আমার সাজ নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। আমার প্রথম শাড়ি কিনে দিয়েছিল বাবা। বাড়িতে পুজো হত না। সেই সময় সবুজ বা লাল পাড়ের বাসন্তী শাড়িতে স্কুলের ফাংশনের জন্য তৈরি হতাম। একটু বড় হওয়ার পরে ভাই-বোনেরা মিলে শুরু করলাম পুজো...’’ সরস্বতী পুজোর প্রসঙ্গ উঠতেই পুরনো কথা মনে পড়ে গেল অভিনেত্রী সৌরসেনী মৈত্রর। পুজোর আবহের সঙ্গে সঙ্গত রেখে এ বারের ফ্যাশনের বিষয় হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল ‘সাদা’, যাকে জড়িয়ে স্নিগ্ধ, বিশুদ্ধ আমেজ।
আর ক’দিন পরেই বসন্ত পঞ্চমী। আর বাঙালি মেয়েদের কাছে শ্বেতচন্দনচর্চিতা দেবী সরস্বতীর পুজো মানেই শাড়ি। যে কন্যা জিনস টি-শার্টে সারা বছর কাটিয়ে দেন, তিনিও ওই দিন সেজে ওঠেন শাড়িতেই! আর যাঁরা বছরভর মাঝেমধ্যেই নানা উপলক্ষে শাড়ি পরতে ভালবাসেন, তাঁরা আবার ভাবতে বসেন, কী ভাবে শাড়ির ভিড়ে তাঁদের আলাদা লাগবে। সরস্বতী পুজোয় শাড়ি নিয়ে সেই উন্মাদনা কি এখন আদৌ ছুঁয়ে যায় সৌরসেনীকে? ‘‘হোয়াট্সঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রামের হাতছানিতে সাজগোজের ধরন পাল্টালেও সরস্বতী পুজো মানেই শাড়ি, এই সরলীকরণ আজও একই ভাবে সত্যি। বাসন্তী রঙের শাড়ি ছিল ছোটবেলায় পুজোর সাজ। কিন্তু সাজগোজের প্রতি নিজের আকর্ষণ তৈরি হওয়ার পরে সাদা রঙের প্রতি ভালবাসা বাড়ল। এখনও আমার পছন্দের রং সাদা।’’ শুধু পুজোয় নয়, অন্য উৎসব অনুষ্ঠানেও সাদা পরতে ভালবাসেন তিনি। কিছু দিন আগেই তাঁর বন্ধু দর্শনা বণিক ও সৌরভ দাসের বিয়েতেও সাদা কাতান বেনারসি পরেছিলেন বলেই জানালেন অভিনেত্রী।
সাদা রঙের সঙ্গে এই ফেব্রুয়ারিতে অন্য ভাবে জুড়ে গিয়েছেন অভিনেত্রী। ক’দিন পরেই মুক্তি পাচ্ছে সৌরসেনী অভিনীত ‘সাদা রঙের পৃথিবী’ ছবিটি। তাই পুজোটা এ বার নায়িকার কাছে একেবারেই অন্যরকম। ‘‘পুরোপুরি নারীকেন্দ্রিক ছবি এটি। রূপেলক্ষ্মী গুণে সরস্বতী মেয়েদের প্রকৃত সেই সংজ্ঞার দেখা মিলবে আমার চরিত্রে,’’ ব্ল্যাক কফিতে গলা ভিজিয়ে বললেন অভিনেত্রী। ঋতুবদলেরএ সময়ে কখনও ঠান্ডা, কখনওগরম। তাই কফির আমেজই সৌরসেনীর সঙ্গী।
তাঁর কাছে, ‘‘সাদা মানেই শুভ্র, মার্জিত, নির্মল। বারো হাতের পরিশীলিত পরিমিতিতে সে আরও সুন্দর। বসন্তের আগমনে সাদা রং যেন চোখের আরাম প্রাণের শান্তি। আবার সান্ধ্য সাজেও সাদা রং সমান নান্দনিক।’’ এই শুভ্র সৌন্দর্যের সূত্র ধরেই পত্রিকার ফ্যাশন ক্যানভাসে এবার সাদা শাড়ির বর্ণময় বিন্যাস।
প্রথমেই সৌরসেনী বেছে নিলেন চান্দেরি বেনারসি। জমিতে জরির বুননে খেজুর চটির ডিজ়াইন। ‘‘এতই হালকা শাড়ি যে অনেকক্ষণ পরে থাকা যাবে। সাজটা যে কোনও সময়ের উপযোগী আর মোটেই উচ্চকিত নয়। সঙ্গে ভারী গয়না পরলেও খুব সুন্দর মানিয়ে যাবে,’’ স্টাইলিস্টের সঙ্গে একমত অভিনেত্রীও। বেনারসির সঙ্গে মুক্তোর উপর সোনার চোকার, সীতাহার আর সঙ্গে মানানসই ঝুমকোয় সাজলেন তিনি। পুজোর সকালে অঞ্জলি দেওয়া থেকে, দুপুরের প্রসাদ খাওয়া, বিকেলের আড্ডা... সবেতেই এই সাজে নজর কাড়া যাবে। নায়িকার স্নিগ্ধ রূপের সঙ্গে তাল মিলিয়েছে খোঁপায় শোলার মালা ও লাল টিপ। বাংলার সংস্কৃতির ফেলে আসা বেশ কিছু ডিজ়াইন দিয়েই তৈরি কাতান বেনারসি। এ যেন সুতোর কাজের মধ্য দিয়ে ঐতিহ্যের হাত ধরেছে আধুনিকতা। সঙ্গে রুপোর নেকলেস, কানপাশা ও চুড়। ‘‘আমার খুব ভারী গয়না পছন্দ নয়, ডিজ়াইনটা খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং সেটা যেন আমার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে খাপ খায়। নিজের রুচি অনুযায়ী পরা দরকার, কে কী পরছে স্রোতের জোয়ারে গা ভাসিয়ে নয়,’’ কালো কফিতে চুমুক দিয়ে পরের শাড়ি বাছতে বাছতে বললেন নায়িকা।
জর্জেটের জমিতে ব্রোঞ্জ রঙের পাড় শাড়িটিকে আর্কষক করেছে। সঙ্গে রুপোর উপর সোনার জলের সুন্দর নকশাদার গয়না শাড়ির সঙ্গে দারুণ মানানসই। পরের শাড়িটি কাতান বেনারসি। শাড়িতে রুপোলি ও সোনালি সুতোর কারুকাজের কারণে সান্ধ্যসাজেও ভাল মানাবে। সঙ্গে মানানসই গয়নার সঙ্গত।
সরস্বতী পুজোর সাজে সব সময় যেন স্নিগ্ধতা বিরাজ করে। আর সাদার সঙ্গে তার সখ্য চিরকালীন।