Women

Women in Theatre: হাতের কাজ, হেঁশেলের প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়েই চলছে মেয়েদের নাটকের দল

কাজের লিঙ্গ হয় কি? ‘সমূহ’ পুরনো বিতর্কে আর ঢুকছে না। বরং সেলাই, গয়না তৈরির মতো ‘মেয়েলি কাজ’ই এখন তাঁদের দল বাঁচিয়ে রাখার হাতিয়ার।

Advertisement

সুচন্দ্রা ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২২ ০৭:১৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

মেয়েরা নাটক করেন। মেয়েরা নাটকের দল চালান। তবে এই মেয়েরা নাটকের দল বাঁচিয়ে রাখতে, নাটক নিয়ে বেঁচে থাকতে আরও নানা ধরনের ‘মেয়েলি কাজ’ করেন। তা দিয়ে রোজগারের ব্যবস্থা করেন। কাজ শেখেন। শেখান। কারও সঙ্গে কোনও অন্যায় হলে পাশে এসে দাঁড়ান। প্রতিবাদ করেন।

Advertisement

কোনও কাজের লিঙ্গ হয় কি? লিখতে গেলে হয় না বটে। কাজের সময়ে ঠিকই হয়। সমাজ সহজে বদলায় না। তাই মেয়েদের কাজ, ছেলেদের কাজ এখনও আলাদা হয়ে আছে। ‘সমূহ’ নাট্য দলের মেয়েরা সে সব পুরনো বিতর্কে আর নতুন করে ঢুকছেন না। বরং খাবার বানানো, সেলাই, ব্যাগ-গয়না তৈরির মতো ঘরোয়া কিছু কাজ, যা সমাজ ‘মেয়েলি’ বলে চেনে, তা-ই দল বাঁচিয়ে রাখার জন্য হাতিয়ার করে নিয়েছেন।

২০১৯ সালে তৈরি হয়েছে নারী ও ক্যুয়ারদের এই নাটকের দল। মেয়েদের নাটকের দল মানে পুরুষদের প্রবেশ নিষেধ, এমন নয়। বরং মেয়েদের ভাবনা, প্রয়োজন, মন বুঝে একে অপরের সঙ্গে চলার প্রয়াস এটি। অভিনয় তো করেনই তাঁরা। সঙ্গে নিজেদের দল চালানোর জন্য কেউ রান্না করেন, তো কেউ সাবান বানান। দলের শুরু থেকে থাকা এক সদস্য হলেন মোম। তিনি বলেন, ‘‘নাটকের দল চালানোর জন্য নানা জায়গা থেকে টাকা জোগাড় করতে হয়, তা তো জানা কথাই। কিন্তু আমরা কয়েক জন মেয়ের ছোট্ট একটি দল ছিলাম। কোথা থেকে আর কত টাকা আনব। তখনই ঠিক করলাম, নিজেরা যে যা পারি, তেমন কিছু ‘মেয়েলি কাজ’ করেই দলের জন্য রোজগার করব।’’

Advertisement

খাবার বানানো, সেলাই, ব্যাগ-গয়না তৈরির মতো ঘরোয়া কিছু কাজ, যা সমাজ ‘মেয়েলি’ বলে চেনে, তা-ই দল বাঁচিয়ে রাখার জন্য হাতিয়ার করে নিয়েছেন।

দলের আর এক সদস্য সুদক্ষিণা চৌধুরী আগে থেকেই কেক-চকোলেট বানানোয় পারদর্শী। তিনি সে কাজ শিখিয়েছেন বাকিদেরও। তার পর কেউ সাবান বানানো শিখেছেন। কেউ শিখেছেন ব্যাগ বানানো। কেউ বা আবার সুতোর কাজ করেন। যেখানেই ‘সমূহ’ নাটক মঞ্চস্থ করার আমন্ত্রণ পায়, সেখানে নিজেদের হাতে তৈরি নানা জিনিস নিয়ে যান সদস্যরা। নাটকের হলের বাইরে বিক্রি করা হয় ‘সমূহ’-এর মেয়েদের হাতে তৈরি সে সব সামগ্রী।

তিন বছরে দল বড় হয়েছে। ১১ জনের দল বেড়ে এখন প্রায় ২৫-এর পরিবার। তাই নিজেদের তৈরি সামগ্রীর পরিমাণ বাড়ছে। এখন শুধু নাটকের সময়ে নয়, অন্যত্রও বিক্রি করেন নিজেদের তৈরি জিনিস। দলের আর এক সদস্য সুস্মিতা সিংহ জানান, সম্প্রতি তাঁরা ঠিক করেছেন আগে থেকে অর্ডার নিয়ে ঘরোয়া রান্নাও করে বিক্রি করবেন। কোনও নাটকের দলের রিহার্সালের সময়ের খাবার হোক, কিংবা ছবির শ্যুটিং— ‘সমূহ’-এর তৈরি ভাত-ডাল-তরকারি পৌঁছে যাচ্ছে সময় মতো। মোম-সুস্মিতাদের সঙ্গীরা অনেকে মিলে সেই রান্না করছেন। আবার তাঁদেরই মধ্যে কেউ কেউ রান্না করা খাবার পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নিচ্ছেন। আগামী দিনে ঘরোয়া ধাঁচে রান্না করা খাবার সরবরাহের কাজ আরও বড় করারও ইচ্ছা আছে তাঁদের।

শুনে মনে হতে পারে তবে এঁরা নাটক করেন কখন?

নাট্যচর্চায় ফাঁকি নেই। বরং নাটকের জন্যই তো এত কাজ। তিন বছরে তিনটি নাটকের প্রযোজনা হয়েছে তাঁদের উদ্যোগে। ইতিমধ্যেই তাঁদের ‘তুঁহু মম’, ‘অথ হিড়িম্বা কথা’, ‘এমন যদি সত্যি হত’ মঞ্চস্থ করার ডাক পেয়েছেন রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে। ‘সমূহ’-এর পরিচালক তিতাস দত্তের উদ্যোগেই তৈরি হয়েছে এই দল। তিনি বলেন, ‘‘নারী শরীরকে পুরুষ শাসিত সমাজ কত ভাবে দেখে এবং সে দৃষ্টি কী ভাবে অনুভব করে নারী শরীর, সে সব চিন্তা থেকেই প্রথম নিজের একটি প্রযোজনা করার কথা ভাবি। তার আগে দেশ এবং বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় নাটকের কাজ করেছি। কিন্তু এই কাজটি বাংলায় করতে চেয়েছিলাম। তাই মুম্বই থেকে কলকাতাতেই চলে আসি।’’ সেই থেকে ধীরে ধীরে শুরু হয় ‘সমূহ’-এর যাত্রা। প্রথমে একটি প্রযোজনার কথা ভাবা হলেও সকলের উৎসাহে তৈরি হয় দল। নানা ধরনের মহিলা এতে যোগ দেন। সকলেই যে অভিনয় করেছেন আগে, এমনও নয়। তিতাস জানান, দলের সকলের উৎসাহ দেখে আর মুম্বই ফিরে যেতে ইচ্ছা করেনি তাঁর। বরং এখন একের পর এক প্রযোজনা হচ্ছে। সমাজে লিঙ্গ বৈষম্যের নানা অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখেই তৈরি হচ্ছে নাটক। তবে লিঙ্গভেদ নিয়েই যে শুধু কাজ করবেন তাঁরা, এমন নয়। সমাজে প্রান্তিকের অভিজ্ঞতার বিভিন্ন দিক থেকে তুলে ধরতে চান তাঁরা। নিজের বার্তা সকলের কাছে পৌঁছে দিতে নাটক করেন বিনা টিকিটে। কখনও সে প্রযোজনা নিয়ে চলে যান সুন্দরবন, তো কখনও গোবরডাঙা।

দলের সদস্যদের তৈরি সাবান এবং মাস্ক।

মন দিয়ে নাটক করতে হলে মাথা উঁচু করে বাঁচতেও তো হবে। তাই যে কোনও মহিলা নাট্যকর্মী কোনও নির্যাতনের শিকার হলে পাশে থাকে ‘সমূহ’। যদি সেই নারীর বাসস্থান না থাকে, তবে দলের অন্যদের সঙ্গে থাকতেও পারেন। দক্ষিণ কলকাতায় তৈরি করেছেন তাঁরা নিজেদের থাকার ব্যবস্থা। সেই বাড়িতে জড়ো হয়ে দলের অন্যান্য কাজও করেন সদস্যরা।

দলের ফেসবুক পেজে গিয়ে দেখে নেওয়া যায় তাদের কাজের নির্দশন। সেখানেই যোগাযোগ করে কেনা যায় দলের সদস্যদের তৈরি নানা সামগ্রী। নাটকের জন্য নারীরা এবং নারীদের জন্য নাটক কী ভাবে কাজ করতে পারে অতিমারির এই কঠিন সময়েও, তা মনে করাবে এই নাট্যকর্মীদের নানা প্রচেষ্টা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement