Winter Season

শীতে চলুন নিয়ম মেনে

শীতের আবহাওয়া আরামদায়ক হলেও অনেকের এ সময়ে দেখা দেয় নানা সমস্যাও। শীতে কী ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত এবং খাদ্যতালিকায় কোন কোন বিষয়ে নজর দিতে হবে, তা নিয়ে কথা বললেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের জেনারেল মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান বিকাশ স্বোয়াইকা পুষ্টিকর ও সুস্বাদু এ সব ফল-আনাজ খেতে সে ভাবে কোনও বিধিনিষেধ নেই। যদি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কোনও খাবারে আপত্তি থাকলে, তা মেনে চলতে হবে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২০ ০০:০৫
Share:

প্রশ্ন: শীতের সময়ে খাদ্যতালিকায় বেশ কিছু বদল ঘটে। এই সময়ে যাঁরা নিরামিষ খাবারে অভ্যস্ত, তাঁদের সুষম পুষ্টির জন্য কোন কোন খাবার খাওয়া উচিত?

Advertisement

উত্তর: শীতকালে বাজারে নানা ধরনের আনাজ, শাক-সবজি ও ফল পাওয়া যায়। অনেক মানুষই এ সব আনাজ ও ফলের জন্য বছরভর অপেক্ষা করে থাকেন। পুষ্টিকর ও সুস্বাদু এ সব ফল-আনাজ খেতে সে ভাবে কোনও বিধিনিষেধ নেই। যদি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কোনও খাবারে আপত্তি থাকলে, তা মেনে চলতে হবে। যদি কোনও আনাজ বা ফলমূলে নিষেধাজ্ঞা না থাকে তা হলে সুষম পুষ্টির জন্য সব রকম আনাজপাতি বা ফলই খাওয়া যেতে পারে। তবে রান্নার সময়ে কম তেল ও মশলা ব্যবহার করাটাই বাঞ্ছনীয়। বিট, গাজর বা মটরশুঁটির মতো আনাজ সিদ্ধ করে খাওয়াই ভাল।

Advertisement

প্রশ্ন: শীতের সময়ে যাঁদের অ্যালার্জি বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে, তাঁদের কোন ধরনের খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেবেন?

উত্তর: এ ক্ষেত্রে সবার আগে অ্যালার্জি পরীক্ষা এবং ‘প্রোফাইল’ করে নেওয়া জরুরি। কেউ যদি অ্যালার্জির সমস্যায় ভোগেন, তা হলে শীতের শুরুতেই এক বার অ্যালার্জি পরীক্ষা করিয়ে নিলে ভাল হয়। তাতে কোন ধরনের খাবারে অ্যালার্জি রয়েছে, সে সম্পর্কে সহজেই নিশ্চিত হয়ে যাওয়া যায়। অনেকেরই বেগুন বা চিংড়ির মতো নানা খাবারে অ্যালার্জি থাকে। তাঁদের ক্ষেত্রে বিষয়টি জানা না থাকলে সমস্যা হতে পারে। আবার, কারও ক্রনিক অ্যালার্জি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ নেওয়া প্রয়োজন এ সময়ে। শীতে আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় ধুলো-বালির কারণেও অ্যালার্জির সমস্যা বাড়তে পারে। তাই সতর্ক থাকা দরকার।

প্রশ্ন: যাঁদের থাইরয়েডের সমস্যা রয়েছে, তাঁদের এ সময়ে খাদ্যতালিকা কেমন হলে ভাল হয়?

উত্তর: যাঁদের থাইরয়েডের সমস্যা রয়েছে, তাঁদের ফলমূল ও আনাজ খাওয়ার বিষয়ে অতিরিক্ত সতর্ক হওয়ার তেমন কোনও প্রয়োজন নেই। তবে তাঁরা চর্বি জাতীয় খাবার যত এড়িয়ে চলতে পারেন, ততই ভাল।

প্রশ্ন: শীতের সময়ে সর্দি-কাশির সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। খাদ্যতালিকায় কী যোগ করলে ঠান্ডা লাগা এড়ানো যায়?

উত্তর: অনেকেই শীতের শুরু থেকে ঠান্ডা লাগার সমস্যায় ভোগেন। তাঁদের ঠান্ডা লাগানো একেবারেই চলবে না। ঠান্ডা লাগানো এড়াতে পারলে শীতকালে অনেকটাই সুস্থ থাকা যায়। দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় বিশেষ কিছু পরিবর্তন করার দরকার নেই। তবে ঠান্ডা জাতীয় খাবার না খাওয়াই ভাল। রাতের দিকে শোওয়ার আগে যদি গরম দুধ খাওয়া যায়, তা হলে ভাল হয়। পাশাপাশি, ঠান্ডা থেকে বাঁচতে মধু, তুলসী পাতা, গোলমরিচ, রসুনের ব্যবহার করেন অনেকে। তবে সবটাই করতে হবে শরীর বুঝে।

প্রশ্ন: শীতের সময়ে মেলা-পার্বণ বা অনুষ্ঠানবাড়িতে নিমন্ত্রণও থাকে প্রচুর। বর্তমান পরিস্থিতিতে এ সব ক্ষেত্রে খাওয়া-দাওয়ার বিষয়ে কী ধরনের সাবধানতা মেনে চলা উচিত?

উত্তর: বিয়ে বাড়ি বা কোনও অনুষ্ঠানবাড়িতে বেশিরভাগ খাবারেই তেল-মশলা বেশি থাকে। রাতের দিকে বেশ ভারী খাওয়া-দাওয়া হয়। এ বিষয়ে প্রথমেই বলব, অম্বল, গলা জ্বলা, পেট ফাঁপা বা পেটের কোনও উপসর্গ দেখা দিলে পেটকে আরাম দিন। সে ক্ষেত্রে নিমন্ত্রণ এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। প্রবীণদের ক্ষেত্রে বাইরের খাবার যত কম খাওয়া যায়, ততই ভাল। পরপর বিয়েবাড়ি থাকলে খাওয়ার বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা নিতে হবে। রাতের দিকে তেল-মশলাদার খাবার খাওয়ার পরে অসুস্থ বোধ করলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে হজমের ওষুধ আনিয়ে রাখা প্রয়োজন। শীতে বিভিন্ন খাবারে অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা বাড়ে। সমস্যা চলতে থাকলে চিকিৎসক দেখান।

প্রশ্ন: এ সময়ে মাছ-মাংস খাওয়ার বিষয়ে কী ধরনের সাবধানতা মেনে চলা উচিত?

উত্তর: শুধু শীতকাল নয়, সারা বছরই বড় মাছ যত কম খাওয়া যায়, ততই ভাল। মাছের ওজন কখনওই যেন চারশো থেকে পাঁচশো গ্রামের বেশি না হয়। চর্বিজাতীয় মাছ খেলে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। শীতে সামুদ্রিক মাছ বা বরফ দেওয়া মাছ যতটা এড়িয়ে যাওয়া যায়, ততই মঙ্গল। আর রেড মিটের চেয়ে মুরগি খান।

প্রশ্ন: যাঁদের ডায়াবিটিস রয়েছে, তাঁদের কোন কোন খাবার এড়িয়ে চলা উচিত?

উত্তর: ডায়াবিটিক রোগীদের ডায়েট চার্ট করে দেওয়া হয়। শীতেও তাঁদের সেই ‘ডায়েট চার্ট’ মেনে চলা উচিত। পেয়ারা, কমলালেবু, পরিমাণমতো গাজর খেতে পারেন।

প্রশ্ন: শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়াতে এ সময়ে কী খাওয়া যেতে পারে?

উত্তর: সব খাবারের মধ্যে কোনও না কোনও পুষ্টিগুণ রয়েছে। নির্দিষ্ট একটি খাবার থেকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠবে, এ ভাবে বলা কঠিন। যদিও এ সময়ে ব্রোকোলি, মিষ্টি আলু, কমলালেবু খাওয়া খুবই স্বাস্থ্যকর। আদা দেওয়া চা গলার জন্য কার্যকরী। কিন্তু, আমার পরামর্শ, প্রতিদিন এমন ভাবে খাবার খেতে হবে, যাতে সব ধরনের খাদ্যোপাদান সুষম মাত্রায় থাকে। এর সঙ্গে ব্যায়াম করা, ধূমপান পরিহার করা, পর্যাপ্ত জল পান করার মতো বিষয়গুলি মেনে চললে শরীর অনেকটাই সুস্থ থাকবে।

প্রশ্ন: শীতকালে ধূমপান করলে কী সমস্যা হয়?

উত্তর: শীতে গলা খুসখুস, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকে। সে সময়ে যদি আপনি ধূমপান করেন, তা হলে এ ধরনের সমস্যা জটিল আকার নিতে পারে৷ এ ছাড়া, শীতে শরীর সঞ্চালনে ঘাটতি পড়ে। এটা যেন না হয়। শীতেও ‘ফিটনেস ফার্স্ট’, বিষয়টি মানা জরুরি।

প্রশ্ন: অনেকেরই শীতের সময়ে গায়ে গরম পোশাক চাপালে গা জ্বালা করার মতো সমস্যা দেখা দেয়। এটি কী কোনও খাবারের জন্য হতে পারে? সে ক্ষেত্রে কী করণীয়?

উত্তর: এটার উত্তর একেবারে প্রথমেই দিয়েছি। অ্যালার্জি টেস্টের যে বিষয়টি বলেছিলাম, সেটিও এর অন্তর্ভুক্ত। অনেক সময়ে শীতকালে এ ধরনের সমস্যা হয়। কিন্তু প্রথমেই অ্যালার্জি টেস্ট করিয়ে নিয়ে, ঠিক কী কারণে শরীরে জ্বালা করছে বা র‌্যাশ বেরোচ্ছে, তা জেনে নেওয়া যায় এবং সেই অনুযায়ী সতর্কতা অবলম্বন করা যাবে।

প্রশ্ন: অনেকের এ সময়ে ব্যথা-বেদনার সমস্যাও বাড়ে। যাঁরা বাতের মতো অসুখে ভোগেন, তাঁদের কী ধরনের খাবার এড়িয়ে চলা উচিত?

উত্তর: যাঁদের বাতের সমস্যা আছে, তাঁদের শীতকালে কষ্ট বাড়ে। অনেকের ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা থাকলেও শীতে গাঁটের ব্যথা বৃদ্ধি পায়। সে ক্ষেত্রে মসুর ডাল, রেড মিট, মশলা জাতীয় খাবার পরিহার করাই ভাল।

সাক্ষাৎকার: সুপ্রকাশ চৌধুরী

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement