COVID19

Covid 19: মস্তিষ্কে কতটা থাবা গেড়েছে কোভিড, জানতে গবেষণা

অতিমারি খানিকটা আয়ত্তে আসতেই শরীরে সংক্রমণের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব  বুঝতে দেশে-বিদেশে গবেষণা শুরু হয়েছে।

Advertisement

জয়তী রাহা

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২২ ০৭:৩৩
Share:

প্রতীকী ছবি

‘ব্রেন ফগ’, অর্থাৎ কুয়াশাচ্ছন্ন মস্তিষ্ক— চিকিৎসা শাস্ত্রে এটি কোনও নতুন শব্দ নয়। তবে কোভিড-১৯ অতিমারিই এই শব্দবন্ধকে সাধারণের সঙ্গে পরিচয় করিয়েছে। কারণ, বিশ্বে সংক্রমিত অনেক ব্যক্তিরই ‘ব্রেন ফগ’ হওয়ার তথ্য সামনে আসছে। অতিমারি খানিকটা আয়ত্তে আসতেই শরীরে সংক্রমণের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব বুঝতে দেশে-বিদেশে গবেষণা শুরু হয়েছে। সেখানে মানবদেহের চালিকাশক্তি মস্তিষ্কে কোভিডের প্রভাব নিয়ে বিশেষ করে চিন্তিত গবেষকেরা। দেশে ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’-এর (আইসিএমআর) উদ্যোগে এই গবেষণা শুরু করতে চলেছেন বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস (বিআইএন) এবং এসএসকেএমের এক দল চিকিৎসক।

Advertisement

কী এই ব্রেন ফগ?

ব্রেন ফগের অন্য নাম ‘কেমো ব্রেন’। মস্তিষ্কের কাজ ধীর বা অলস হয়েছে বোঝাতে এই শব্দের ব্যবহার হয়। কেমোথেরাপি নেওয়ার পরেও মস্তিষ্কে এমন পরিবর্তন হয়। এ ছাড়া, কোনও বিশেষ অসুস্থতা অথবা ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াতেও ব্রেন ফগ হয়। ‘স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিন’-এর গবেষণা বলছে, কোভিড এবং কেমো, দু’ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত প্রদাহ মস্তিষ্কের কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

Advertisement

বিআইএন-এর শিক্ষক-চিকিৎসক এবং গবেষক দলের প্রধান অতনু বিশ্বাস বলছেন, ‘‘মস্তিষ্কের এই কুয়াশাচ্ছন্নতা বহু ক্ষেত্রে অস্থায়ী এবং নিজে থেকেই ভাল হয়ে যায়। ব্রেন ফগে আক্রান্ত কোভিড সংক্রমিতদের অনেকেই স্বাভাবিক হয়েছেন। তবে অনেকের ক্ষেত্রে কিছু দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ছে। সেটা কমবয়সি সংক্রমিতদেরও হচ্ছে। কেন? তা জানাই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য।’’ তিনি জানাচ্ছেন, কোভিডের কারণেই পার্কিনসন্স ডিজ়িজ় বা ডিমেনশিয়ার মতো বার্ধক্যজনিত রোগ সময়ের আগে হচ্ছে কি না, গবেষণায় দেখা হবে সেটাও।

গবেষণার সময়কাল আড়াই বছর। গবেষক দলে রয়েছেন এসএসকেএমের পালমোনারি মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান অমিতাভ সেনগুপ্তও। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ‘কগনিশন’ অর্থাৎ স্মৃতিশক্তি, চিন্তাশক্তি, পরিকল্পনা, ভাষাগত দিককে মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ করে। গবেষণায় মস্তিষ্কের সেই অংশকেই পর্যবেক্ষণ করা হবে, যা চিন্তা করতে, পড়তে, শিখতে, মনে রাখতে এবং মনোযোগে সক্রিয়। একটি জার্মান গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ‘মাইল্ড কোভিড-১৯’ সংক্রমিতদের অনেকে কর্মজীবনে ফিরেও স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ, পরিকল্পনা করা বা সিদ্ধান্ত গ্রহণে আগের দক্ষতা হারাচ্ছেন।

সেই কারণেই গবেষণায় যুক্ত করা হচ্ছে কমবয়সিদের। ১৮ থেকে ৭৫ বছর পর্যন্ত ২৫০ জনের উপরে হবে গবেষণা। প্রথমে কোভিড সংক্রমিত এবং কোভিড হয়নি, এমন দু’টি গোষ্ঠীর কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু কোভিডের চারিত্রিক বদল দেখে হাসপাতালে ভর্তি এবং বাড়িতে সুস্থ রোগীদের দু’টি গোষ্ঠী করা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এবং শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতাল থেকে সুস্থ হওয়া সংক্রমিতদের গবেষণায় ডাকা হচ্ছে। তাঁরা হাসপাতালে গিয়ে বা বাড়িতে বসেই সমীক্ষার প্রাথমিক পর্বে অংশ নিতে পারবেন।

মানসিক স্বাস্থ্য বুঝতে ‘কগনিটিভ ফাংশন অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট’ হবে। বিভিন্ন প্রশ্ন করে স্মৃতিশক্তি, পরিকল্পনা, বিচারগ্রহণ এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা যাচাই হবে। পরে হবে বিশেষ এমআরআই। অতনু জানাচ্ছেন, মস্তিষ্কের সার্বিক অবস্থা দেখতে সাধারণত এমআরআই করা হয়। এ ক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের এমআরআই করা হবে। যার একটি হল ভলুমেট্রিক স্টাডি। যা মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশকে বড় করে বিশ্লেষণ করবে। যেমন, বয়স অনুযায়ী কারও স্মৃতির কোটর কতখানি আয়তনের হওয়া উচিত, তা আছে কতটা, সেই অংশের কেমন অবস্থা ইত্যাদি। মস্তিষ্কের উপরিভাগে থাকে স্নায়ু কোষ, যেখানে থাকে গ্রে ম্যাটার। এর নীচে থাকে স্নায়ু কোষ থেকে বেরোনো তন্তু বা হোয়াইট ম্যাটার। বিভিন্ন কারণে স্নায়ুর কোষ যেমন নষ্ট হতে পারে, তেমনই হোয়াইট ম্যাটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও মস্তিষ্কের কাজ ব্যাহত হয়। যাঁদের তেমন ক্ষতি চিহ্নিত করা যাবে, তাঁদের ফলোআপ করে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।

গবেষক দলের সদস্যদের মতে, কোভিডের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবকে রুখতে পথ খোঁজাই গবেষণার উদ্দেশ্য। যা চিকিৎসা ক্ষেত্রে অন্য দিকও খুলে দেবে বলে আশা করছেন তাঁরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement