একা হোক বা বন্ধুবান্ধব জুটিয়ে মদ্যপান— এ বার সাবধান হওয়ার সময় ঘনিয়ছে।
দিনান্তে অল্পস্বল্প অ্যালকোহল না হলে দিনটাই মাটি হয়? কিংবা মন-মেজাজ খারাপ থাকলেই নিমেষে চাঙ্গা হতে দ্বারস্থ হন পছন্দের ব্র্যান্ডের? একা হোন বা বন্ধুবান্ধব জুটিয়ে মদ্যপান— এ বার কিন্তু সাবধান হওয়ার সময় এসেছে।
অন্তত ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (হু)-এর রিপোর্ট সে কথাই বলছে। ২০১৬ সালের ভিত্তিতে তৈরি এই রিপোর্টটি সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে।
তাতে দেখা গিয়েছে, পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশই মদ্যপানে আসক্ত। আর এই নেশাকে সরাতে না পেরে ওই বছর প্রায় ৩০ লক্ষেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের অধিকাংশই পুরুষ। তবে মহিলাদের সংখ্যাও নেহাত কম নয়।
আরও পড়ুন
আইসক্রিমের জেরে এ বার অফিসের সেরা সহকর্মী!
‘হু’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, মদ্যপানের আসক্তির সমস্যা সবচেয়ে বেশি আমেরিকা ও ইউরোপে। পৃথিবীতে প্রতি বছর যত মানুষের মৃত্যু হয় তার প্রায় ৫ শতাংশ মদ্যপানের কারণে। তার মধ্যে ২৮ শতাংশের মৃত্যু হয় মদ্যপ অবস্থায় আঘাতজনিত কারণে।মদ খেয়ে আত্মহত্যা ও দুর্ঘটনার শিকার হন ২১ শতাংশ মানুষ। শতকরা ১৯ জনই মারা যান অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে হওয়া হার্টের অসুখে। বাকিরা ক্যানসার, ওবেসিটি, মানসিক অবসাদ নানা কারণে মৃত্যুর শিকার হন।
তবে ভয়ের এখানেই শেষ নয়, মদ কী ভাবে আধুনিক প্রজন্মকে আকর্ষণ করছে, ‘হু’-এর রিপোর্টে উঠে এল তা-ও। গোটা বিশ্বে মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপায়ীদের মধ্যে ২৭ শতাংশই ১৫-১৯ বছর বয়সী। আলাদা করে ইউরোপ ও আমেরিকাতেই এই পরিসংখ্যানযথাক্রমে ৪৪ ও ৩৮ শতাংশ।
চিকিৎসকদের মতে, ঘন ঘন বা নিয়মিত অল্প মদ্যপানও ক্ষতি করে শরীরের।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, প্রায় ২৩.৭ কোটি পুরুষ ও ৪.৬ কোটি মহিলা মদ থেকে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার মুখোমুখি৷ ইউরোপ ও আমেরিকায় এই সংক্রান্ত সমস্যা সবথেকে বেশি৷ অতিরিক্ত মদ্যপানের জন্য শুধুমাত্র অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয়, নেশাগ্রস্ত থাকার কারণে দুর্ঘটনাতেও প্রাণ হারিয়েছেন বহু৷ এক্ষেত্রে পথদুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেশি৷ সঙ্গে রয়েছে নিজেই নিজের ক্ষতি করার প্রবণতা৷
শুধু ইউরোপ-আমেরিকাই নয়, বিশ্বের ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষ অনেক দেশই এই নেশার শিকার। ভারতও বাদ নেই তাতে।
আরও পড়ুন
শেষ পাতে মিষ্টি খান? জানেন তা আদৌ ঠিক না ভুল?
ঠিক কী অবস্থা এই দেশের?
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামীর মতে, ‘‘মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান হোক বা প্রতি দিনের কয়েক পেগ, ক্ষতি কিন্তু দু’টোতেই। হু যা আজ পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে বলছে, তাতে মদ্যপানে রাশ টানতে না পারলে একটা সময়ের পর একটা প্রজন্ম নানা শারীরিক ক্ষতি ও অকালে মৃত্যুর মুখোমুখি হবে।’’একই মত কিডনি বিশেষজ্ঞ অভিজিৎ তরফদারেরও। তাঁর মতে, মদ যে ভাবে তরুণ প্রজন্মকে গিলছে, তাতে আমাদের দেশেও এমন সমস্যা নেমে আসতে খুব দেরি নেই।’’ তাঁর পরামর্শ, চেষ্টা করুন মদ ছাড়াই বাঁচতে, একান্তই তা অসম্ভব হলে মাঝেমধ্যে এক আধ পেগ। মাত্রা যেন না ছাড়ায়। ঘন ঘন বা নিয়মিত অল্প মদ্যপানও ক্ষতি করে শরীরের।