দীর্ঘ দিন পেরিয়ে গেলেও সম্পর্ক সতেজ থাকতে পারে কেবল একটা অভ্যাস আয়ত্তে আনলেই। ছবি: আইস্টক।
দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক, অথচ একেবারে টাটকা রসায়ন! তাও আবার হয় না কি? দাম্পত্যের শুরুতে যত নতুনের মোড়ক থাকে, একসঙ্গে থাকতে থাকতে টুকটাক তর্ক-বিতর্ক, মতান্তর, ঝগড়া পেরতে পেরতে সম্পর্কের রসায়নে আর সেই চাকচিক্য থাকে না বলেই বেশির ভাগ মানুষ মনে করেন। দু’জন মানুষের নিজস্ব মত, চিন্তা-ভাবনা, জীবনযাপনের পন্থাই দীর্ঘ দাম্পত্যে নানা দূরত্ব তৈরি করে বসে বলে মনে করেন মনোবিদরাও।
কিন্তু একদল গবেষকের দাবি, দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের তারও টানটান বাঁধা থাকতে পারে সহজেই। বহু বাঁক পেরনো পুরনো দাম্পত্যেও সুখে থাকার চাবিকাঠির হদিশ আর দূরে নয়।
সম্প্রতি বার্কলে ও স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিদ্যার গবেষকদের গবেষণায় উঠে এল তেমনই মুশকিল আসানের গল্প। অনেকেই মনে করেন, বিশ্বাস, ভালবাসা আর সহজ যোগাযোগই হয়তো একসঙ্গে থাকা দুই মানুষের ভিতরের দূরত্ব সরিয়ে রাখতে সক্ষম। কিন্তু এই গবেষণায় এ সব ‘গুণ’-কে পিছনে ফেলে সুখে থাকার উৎস হিসাবে উঠে এল অন্য স্বভাব।
আরও পড়ুন: ঘন ঘন পেশীতে টান? কী করবেন জানেন?
নেতিবাচক আবেগকে রুখতে পারলেই খোঁজ মিলবে সুখের চাবিকাঠির।
১৩ বছর ধরে চলা এই গবেষণা চলে কয়েক হাজার মধ্যবয়সী ও প্রৌঢ় দম্পতির উপর। ১৫ মিনিট ধরে তাঁদের মধ্যেকার কোনও সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। সেই আলোচনা রেকর্ডও করা হয়। তার পর তাঁদের সেই রেকর্ড করা কথোপকথন, সমস্যা নিয়ে কথা বলার ভঙ্গি, আচরণ সব কিছু খতিয়ে দেখে ‘নেগেটিভ ইমোশন’ বা নেতিবাচক আবেগকেই সম্পর্ক ম্যাড়মেড়ে হওয়ার অন্যতম কারণ হিসাবে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।রাগ, অভিমান বা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশে ব্যবহৃত কুকথা, দোষারোপ, খারাপ মন্তব্যই যে কোনও সম্পর্ককে নষ্ট করে দেওয়ার মূলে বলে মনে করছেন তাঁরা। এই আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই দাম্পত্যে সুখে থাকার আয়ু বাড়বে আরও অনেকগুলো বছর।
বিজ্ঞানীদের মতে, সমস্যা সামনে এলেই রাগ বা অসন্তোষ থেকে বলা কিছু কথা, চাপ সামলাতে না পেরে ভুল আচরণ ও বিস্ফোরক মন্তব্যই সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার অন্যতম কারণ। গবেষণায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিরাও নিজেদের সমস্যা নিয়ে কথা বলার সময় এমন নেতিবাচক আবেগ থেকে বলা ‘কুকথা’-র শিকার হয়েছেন। তখন তাঁদের আচরণ, কথা বলার ভঙ্গি, চিৎকার এবং তার পরবর্তী প্রভাব নিয়ে গবেষণা চালান বিজ্ঞানীরা। আর তাতেই উঠে আসে সুখে থাকার এই উপায়ের কথা।
আরও পড়ুন: ঘন ঘন সেলফি তোলেন? তা হলে আজই সাবধান হোন
শহরের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অমিতাভ মুখোপাধ্যায়ের মতে, নেতিবাচক আবেগের বশে মানুষ অনেক ভুল কাজ করে থাকেন। সম্পর্কের ক্ষেত্রেও রাগের বশবর্তী হয়ে ভুল কথা বলে দেওয়া বা অন্যকে আঘাত করার প্রবণতা বাড়ে। আসলে খুব কম মানুষই নিজেকে পেরিয়ে গিয়ে অন্যকে ভালবাসতে পারেন। আর তার প্রভাব পড়ে রাগ, ক্ষোভের সময়। এই সময়ে কাছের জনের থেকে পাওয়া আঘাত সহজে ভুলতে পারে না মানুষ। আর সেই ছাপই পড়ে দাম্পত্যের রসায়নেও।”
সুতরাং, বিশেষজ্ঞদের মতে, সুখী দাম্পত্যজীবন কাটাতে চাইলে আজ থেকেই নিয়ন্ত্রণ করুন নেতিবাচক আবেগকে।
(ইতিহাসের পাতায় আজকের তারিখ, দেখতে ক্লিক করুন — ফিরে দেখা এই দিন।)