breast cancer

এই সব উপসর্গ থাকলে সচেতন হন, স্তন ক্যানসার নয় তো?

কলকাতায় ১৯৭ জন মহিলার উপর সমীক্ষা চালানো হয়। কলকাতা ছাড়াও হায়দরাবাদ, আমদাবাদ, লখনউ, ভোপাল ও চণ্ডিগড়েও এই সমীক্ষা চলে। কী উঠে এল এই সমীক্ষায়?

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৮ ১৬:১৫
Share:

লজ্জা সরিয়ে স্তন ক্যানসার নিয়ে আলোচনাই এই অসুখ রুখে দেওয়ার দাওয়াই। ছবি: শাটারস্টক।

প্রচার আছে। রয়েছে যথেষ্ট সচেতনতাও। তার পরেও সমীক্ষার ফল খুব একটা স্বস্তিদায়ক নয়। স্তন ক্যানসার পরীক্ষা করতে যাওয়ার দ্বিধাই নাকি কাটাতে পারছেন না মেয়েরা! সমীক্ষার হিসাব, খোদ কলকাতাতেই ৭৩ শতাংশ মেয়েরা লজ্জা পান স্তন ক্যানসারের পরীক্ষা করাতে।

Advertisement

অথচ, পরিসংখ্যান বলছে কলকাতার ৯১ শতাংশ নারীই এই অসুখ সম্পর্কে সচেতন। তা সত্ত্বেও ৬৪ শতাংশ মহিলা নানা ধরনের স্তন ক্যানসারের চিকিৎসা সম্পর্কে অবগতই নন। ৬৬ শতাংশ জানেনই না চিকিৎসার ব্যয়ভার কত হতে পারে! এ দিকে ৪৯ শতাংশ মহিলা মনে করেন, তাঁদের শরীরে বাসা বাঁধছে স্তন ক্যানসার। তবু পরীক্ষা করাতে লজ্জা পান। স্তন ক্যানসার সচেতনতার মাসে এই হিসাব মোটেও স্বস্তির নয়।

ফিউচার জেনেরালি ইন্ডিয়া লাইফ ইনসিওরেন্স ও একটি অনলাইন সাইটের যৌথ সমীক্ষায় উঠে এল এমনই তথ্য। কলকাতায় ১৯৭ জন মহিলার উপর সমীক্ষা চালানো হয়। কলকাতা ছাড়াও হায়দরাবাদ, আমদাবাদ, লখনউ, ভোপাল ও চণ্ডিগড়েও এই সমীক্ষা চলে। সেই অনুপাতে মহিলাদের মাত্র এক চতুর্থাংশ এই অসুখ সম্পর্কে সচেতন।

Advertisement

আরও পড়ুন: এখানে বিপদ, সেলফি তুলবেন না! এ বার জানিয়ে দেবে অ্যাপ

মেয়েদের স্তন ক্যানসার নিয়ে এই লজ্জার কথা একবাক্যে শিকার করছেন ক্যানসার বিশেষজ্ঞ সুকুমার সরকারও। তাঁর মতে, সমীক্ষার চেয়েও খারাপ অবস্থা এই শহরের। গ্রামাঞ্চলের ছবিটা আরও করুণ। ‘‘যতই চেহারা-পোশাকে আমরা আধুনিক হই না কেন, আসলে ভিতরে ভিতরে এখনও কোথাও গোপনাঙ্গ নিয়ে কথা বা তার অসুখ নিয়ে আলোচনা করতে সংকোচ বোধ করি আমরা।’’

একই মত অপর ক্যানসার বিশেষজ্ঞ গৌতম মুখোপাধ্যায়েরও। যদিও তিনি মনে করেন, আজকাল সচেতনতার প্রভাবে কলকাতা অনেকটা সচেতন, কিন্তু গ্রামের ক্ষেত্রে ছবি খুব বদলায়নি। ‘‘অবস্থা খানিক বদলালেও এখনও অন্যান্য প্রথম সারির দেশের তুলনায় সচেতনতায় অনেক পিছিয়ে ামরা। বিশ্বের এক একটা শহর এই সময় স্তন ক্যানসারের সচেতনতার প্রচারে গোলাপি রহে সেজে ওঠে। সেখানে আমাদের দেশের অধিকাংশ মেয়ে এই মাসটা সম্পর্কে অবগতই নন।’’

স্তন ক্যানসার সচেতনতার মাসে ফ্রান্সের রাস্তা সেজেছে গোলাপি ছাতায়। ছবি: এএফপি।

রোগের উপসর্গ

বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যথাহীন মাংসপিণ্ড বগল অথবা স্তনে জন্ম নেওয়া এই রোগের অন্যতম প্রধান লক্ষণ। অনেকের ক্ষেত্রেই স্তনবৃন্ত থেকে হলদেটে তরল নিঃসৃত হয়। স্তনবৃন্ত এক দিকে ঝুলেও পড়তে পারে। স্তনবৃন্ত থেকে রক্ত পড়তেও পারে।

আরও পড়ুন: এই উপসর্গগুলিও ডেকে আনতে পারে স্ট্রোক! আপনি সচেতন তো?

সচেতনতা

সমীক্ষার রিপোর্ট বা চিকিৎসকদের অভিজ্ঞতা কোনওটাই সচেতনতার ক্ষেত্রে খুব একটা এগিয়ে রাখছে না মেয়েদের। বরং বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশে যে ভাবে স্তন ক্যানসারের সচেতনতা সরকারি তরফে প্রচার করা হয়, সে তুলনায় আমাদের দেশ অনেকটাই পিছিয়ে। চিকিৎসকদের পরামর্শ, বয়স ৪০ পেরোলেই হাতের তালু দিয়ে মাঝে মাঝেই চেপে দেখুন স্তন ও বগল। কোনও মাংসপিণ্ডের উপস্থিতি টের পেলে বা স্তন বড় হয়েছে বুঝলেই চিকিৎসকের কাছে যান। প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে এই ক্যানসার সম্পূর্ণ সারে। তাই দেরি করার মতো ভুল করবেন না।

লজ্জা ভুলে চিকিৎসায় অংশ নেওয়াই এই অসুখ রোধের হাতিয়ার। ছবি: শাটারস্টক।

কোথায় সমস্যা

সমীক্ষা ও বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারি তরফে কম প্রচার যেমন এর একটি কারণ তেমনই অন্যতম প্রধান কারণ শরীরের গোপন অংশের কোনও রোগ নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করার সংকোচ।

‘‘এই সংকোচ কাটাতেই আমরা এগিয়ে এসেছি এমন একটি সমীক্ষা করাতে,’’ জানালেন সমীক্ষাকারী বিমা সংস্থার চিফ মার্কেটিং অফিসার রাকেশ ওয়াধওয়া। তাঁর মতে, অক্টোবর স্তন ক্যানসার সচেতনতার মাস। বিমা সংস্থার তরফে আমাদেরও কিছু দায়িত্ব থেকে যায় সমাজের প্রতি। সেখান দাঁড়িয়েই এমন সমীক্ষা। এই অসুখের ব্যয়ভার বহন করার ক্ষমতাও অনেক পরিবারের নেই। আমরা চেষ্টা করব আমাদের তরফে কিছু সহজ বিমার মাধ্যমে এমন পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর।

ক্যানসারের ব্যয়ভার কমাতে আজকাল নানা বিমা সংস্থাই এগিয়ে আসছে, রোগের সচেতনতা, কেমোথেরাপির খরচ ও সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতির জন্য এ সব পদক্ষেপ কার্যকর বলেই মত কলকাতার ক্যানসার বিশেষজ্ঞদের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement