খুদে সদস্যকে ভাল রাখতে কী করবেন? ছবি: সংগৃহীত।
বাড়ির খুদে সদস্য সব সময়েই চায় বাবা-মা, বাড়ির বড়দের সঙ্গ। কিন্তু পেশাগত ও পারিবারিক জীবনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা এক এক সময়ে হয়ে যায় বড্ড কঠিন। অফিসের কাজের চাপ, পারিবারিক দায়-দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে কখনও হয়তো সন্তানকে যথাযথ সময় দিতে পারেন না অভিভাবকেরা। তার জেরেই একলা হয়ে পড়ে খুদে সদস্যটি। মন খারাপ করে গুটিয়ে নেয় নিজেকে। কখনও আবার হয়ে পড়ে জেদি।
কেন একলা হয়ে পড়ে খুদে সদস্য?
কেউ কথা শুনছে না
বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তান মনের কথা ভাগ করে নেবে, সেটাই হওয়ার কথা। কিন্তু যখন হয়তো সে কথা বলতে এল, অভিভাবকের তা শোনার সময় নেই। সেটা যে ইচ্ছাকৃত, এমনটা নয়। কিন্তু খুদে সদস্যের তা বোঝার বোধটাই যে হয়নি! এমন এক-আধবার হলে আলাদা কথা, কিন্তু বার বার হলে সে কিন্তু মনে করতেই পারে তাকে কেউ ভালবাসে না।
অতিরিক্ত চাপ
পড়াশোনার বাইরে আঁকা, সাঁতার, গান, খেলা, আবৃত্তি পছন্দের যে কোনও জিনিসই শেখার জন্য ভর্তি করা যেতে পারে তাকে। যাতে সে নতুন কিছু শেখার আনন্দে মশগুল হতে পারে। কিন্তু তা বলে অতিরিক্ত কোনওকিছু চাপিয়ে দেওয়া অনুচিত। সাঁতার, খেলা, গান, নাচ সব কিছু একসঙ্গে করাতে গেলে সেও হাঁপিয়ে উঠবে। একটা সময় বিরক্ত হয়েই হয়তো নিজেকে গুটিয়ে নিতে পারে সে।
এগুলি ছাড়াও অনেক কারণ হতে পারে, যদি সে ব্যক্তিগত ভাবে কোনও সমস্যায় থাকে আর বাড়ির বড়দের সঙ্গে সেই সমস্যা ভাগ করে নিতে না পারে, যদি কখনও বন্ধুদের টিটকিরির মুখে পড়তে হয় তাকে।
কী ভাবে ভাল থাকবে খুদে? পোক্ত হবে অভিভাবকের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক?
এ ক্ষেত্রে সারা দিন সন্তানের সঙ্গে সময় কাটানোর চেয়েও বেশি জরুরি হল যেটুকু সময় কাটানো হচ্ছে তা যেন উপভোগ্য হয়। যাকে বলা হয় ‘কোয়ালিটি টাইম।’ সন্তানের সঙ্গে কথা না বললে তার অভিমানের কারণ বোঝা সম্ভব নয়। সুতরাং অভিভাবককে সন্তানের জন্য দিনের শেষে হলেও সময় বার করতেই হবে।
সন্তানের মন ভাল করতে ছুটির দিনে তার সঙ্গে খেলা করা, বাইরে কোথাও ঘুরে আসা যেতে পারে। করা যেতে পারে এমন কিছু যাতে সে বাবা-মা দু’জনকেই একসঙ্গে পায়।
এ বিষয়ে মনোসমাজকর্মী মোহিত রণদীপ বলছেন, ‘‘সন্তানকে কথা বলার সুযোগ না দিলে অভিভাবকের সঙ্গে মনের সংযোগটা জুড়বে কী ভাবে? সন্তান বাবা-মায়ের সঙ্গে মনের ভাব ভাগ করে নিতে না পারলে আর কার সঙ্গে করবে? তাই কথা বলা খুব জরুরি। খুদে সদস্যের কথা মন দিয়ে শুনতেই হবে।’’
কিন্তু এমন সময় আসে, যখন সত্যি অভিভাবক অপারগ হন। হয়তো কাজের চাপে তখন সন্তানের কথা শোনার সময় থাকে না। মনোসমাজকর্মী মোহিত রণদীপের পরামর্শ, ‘‘সে ক্ষেত্র সন্তানকে এটা বলা যেতে পারে, তুমি বিষয়টা লিখে রাখ, আমি পরে এসে দেখব। আবার তাকে বুঝিয়ে বলা যেতে পারে এখন কাজটা খুব জরুরি, ফিরে এসে অবশ্যই সমস্ত কথা শুনব।’’
কিন্তু যদি নানা কারণে সন্তানের অভিমান তীব্র হয়ে থাকে, যদি অভিভাবক মনে করেন, মনের মধ্যে কোথাও গুমড়ে রয়েছে সে, সে ক্ষেত্রে আরও যত্নশীল হতে হবে। সন্তানের কথা শুনতে হবে। যদি মনে হয়, পরিস্থিতি সামাল দিতে অসুবিধে হচ্ছে তাহলে পেশাগত কাউন্সিলরের সাহায্য নেওয়া দরকার।